সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুলাই, ২০১৮ ১৪:৪৯

চিকিৎসকের অবহেলাতেই রাইফার মৃত্যু

চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদিবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডে আড়াই বছরের শিশু রাফিদা খান রাইফা মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তদন্তে চিকিৎসক নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায়ই শিশু রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাক্স হাসপাতালে সেদিন কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফলতি ছিল।।

শুক্রবার (৬ জুলাই) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সাংবাদিক ইউনিয়ন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনটি সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বিএমএ নেতাদের কাছে হস্তান্তর করে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ঐ সময় থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই ছিল না।

শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফাকে অসুস্থতার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের ভোগান্তি চরমে ছিল বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।

হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি প্রকট। চিকিৎসক নার্সদের সেবা প্রদানের সমন্বয়হীনতা ও চিকিৎসাকালীন মনিটরিংয়ের অভাব দেখা যায়। অদক্ষ নার্স ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ফলে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল রয়েছে, বিশেষত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞের সার্বক্ষণিক উপস্থিতির সংকটটি প্রবল বলেও উল্লেখ করা হয় এই তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত কমিটিতে ছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ।

প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াসহ চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। অপর সুপারিশগুলো হলো- ম্যাক্স হাসপাতালের সার্বিক ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অতিদ্রুত সংশোধন করা, ডিপ্লোমা নার্স দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক দ্রুত ও আন্তরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, প্রেসক্লাব সভাপতি শুকলাল দাশ, বিএফইউজে যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী ও তদন্ত কমিটির সদস্য সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় আমরা কর্তব্যরত চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলার যে অভিযোগ করেছিলাম— তদন্তে তাদের অবহেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি প্রমাণিত হবে বলে আশা করছি।

সাংবাদিকদের দাবির মুখে এ ঘটনায় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই কমিটি গত রবিবার ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম আসেন। এসময় তারা ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

হাসপাতাল পরিদর্শনকালে তদন্ত কমিটি হাসপাতাল পরিচালনায় বেশ কিছু ত্রুটি পেয়েছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত এই কারণ দর্শানোর নোটিশে লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ ১১ ধরনের ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ জুন বিকালে গলা ব্যথার কারণে রাফিদা খান রাইফাকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ২৯ জুন রাতে রাইফার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

এই ঘটনায় ওই রাতে ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে অভিযুক্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সদের শাস্তি দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা। এসময় সাংবাদিক নেতাদের দাবির মুখে পুলিশ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে বিএমএ নেতাদের চাপের মুখে ওই রাতেই তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় থানা পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত