হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২২:৪৮

হবিগঞ্জে ২৪ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ আজ

৯টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা ও ৭৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ জেলার ৪টি সংসদীয় আসন। জেলায় বসবাস করেন প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ। মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৫শ ৬৪। দ্বিতীয় গোপালগঞ্জখ্যাত জেলাটি আওয়ামীলীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সাংগঠনিক ও ভোটের রাজনীতিতে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে বিএনপি। তবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিরও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট। এবার জেলার ৪টি আসনে ১০টি রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ২৪ জন প্রার্থী।

রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জেলার ৬শ ৩৩টি কেন্দ্রে একটানা এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জেলার ৬৩৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪২২টি কেন্দ্রকে অধিক ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এ জন্য নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১১ হাজার সদস্য। এদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭শ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এক ব্রিগেড সেনা সদস্য, ১শ সদস্যের র‌্যাব ও ৫শ ৪০ সদস্যের বিজিবি। অবশিষ্টরা বাংলাদেশ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য। বহু কাক্সিক্ষত এ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসব আমেজের পাশাপাশি কিছুটা হলেও রয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। পুলিশী ধরপাকড় ও কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ছাড়া শনিবার পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল নির্বাচনী পরিবেশ।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল): দুটি উপজেলা, ১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯শত ৩৯। চা-শ্রমিক অধ্যুষিত ২৩৯ নং সংসদীয় এ আসনটিতে প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন। তবে আওয়ামীলীগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া আলোচনায় নেই অন্যরা। আসনটি মুলত আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। যদিও এক সময় আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির দখলে। তবে বর্তমানে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বিএনপি। এখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী পুত্র শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া পুত্র গণফোরামের ড. রেজা কিবরিয়া এবং জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক। অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের চৌধুরী ফয়সল শোয়েব (মই), কৃষক শ্রমিক জনতালীগের মো. নূরুল হক (গামছা), বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের জুবায়ের আহমেদ (মোমবাতি) ও ইসলামী আন্দোলনের আবু হানিফা আহম্মদ হোসেন (হাত পাখা)। এখানে দৃশ্যত মহাজোটের একক প্রার্থী নেই। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, মুলত লড়াই হবে ধানের শীষ ও নৌকায়।

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ): দুটি উপজেলা, ১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৪০ নং এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৯শ ৭৮। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং ও বৃহত্তর সিলেটে ভাটি বাংলা হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন। তবে আওয়ামীলীগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়া আলোচনায় নেই অন্য কোন প্রার্থী। এখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত করেছে খেলাফত মজলিসের আল্লামা আব্দুল বাছিত আজাদকে। এ আসনটিতেও দৃশ্যত মহাজোট নেই। এখানে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পৃথকভাবে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির শংকর পাল।

আসনটি মুলত আওয়ামীলীগের ঘাটি হলেও এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। তাদের মতে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটারের কারণে আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পাল। আর মহাজোট না থাকায় সুবিধা নিচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী। এ আসনে অন্যান্যরা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক আফছার আহমদ রূপক (সিংহ), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনমোহন দেবনাথ (গামছা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি’র পরেশ চন্দ্র দাশ (আম) ও ইসলামী আন্দোলনের আবুল জামাল মসউদ হাসান (হাতপাখা)।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) :  ৩টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৪১ নং এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৩শত ৬৩। এখানে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। তবে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছাড়া আলোচনায় নেই অন্য ৩ প্রার্থী। আওয়ামীলীরে প্রার্থী হয়েছেন একাধিকবার নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ আবু জাহির। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন একাধিক বার নির্বাচিত পৌর মেয়র ও বিএনপি মনোনীত আলহাজ্ব জি কে গউছ। এ আসনটিতে সর্বশেষ ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী। এবার আওয়ামীলীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথাই বলছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে সর্বশেষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক আওয়ামীলীগের প্রার্থী আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। এখানে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, ইসলামী আন্দোলনের মুহিব উদ্দিন আহমদ সোহেল (হাতপাখা) ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিপিবি) পীযুষ চক্রবর্তী (কাস্তে)।

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর): ২টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ২১ ইউনিয়ন নিয়ে চা-শ্রমিক অধ্যুষিত জাতীয় সংসদের ২৪২নং এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ২শত ৮৪। এবারের নির্বাচনে এখানে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। তবে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছাড়া অন্যদের কোন খবরই নেই ভোটের মাঠে। এ আসনে মহাজোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামীলীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মাহবুব আলী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রার্থী হয়েছেন খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আব্দুল কাদের। আসনটি মূলত আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, ইসলামী আন্দোলনের শেখ মোঃ শামসুল আলম (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা সোলায়মান খান রাব্বানী (মোমবাতি) ও জাকের পার্টির আনসারুল হক (গোলাপফুল)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত