সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ জুলাই, ২০১৯ ১৩:০৩

ট্রেনের ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১, তদন্ত কমিটি গঠন

সিরাজগঞ্জে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। সব লাশ উদ্ধারের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন, জিআরপি থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ভোর ৩টার পর সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল মর্গ থেকে এসব লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহতের স্বজনদের কোনও অভিযোগ না থাকায় কোনও লাশেরই ময়নাতদন্ত করা হয়নি। লাশ হস্তান্তরের সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রোকনুজ্জামান ও সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন জিআরপি থানার ওসি হারুন মজুমদার হাসপাতালে ছিলেন।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মো. আলতাব হোসেনের ছেলে ও বর রাজন শেখ (৩৫), তার ভাগ্নে কান্দাপাড়া উত্তরপাড়ার মো. শামিম হোসেনের ছেলে আলিফ হোসেন (১১), উল্লাপাড়া চরঘাটিনা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল গফুরের মেয়ে ও কনে সুমাইয়া খাতুন (২১), তার আত্মীয় একই গ্রামের আশরাফ আলীর স্ত্রী মমতা খাতুন (৩৫), জেলা সদরের সর্দারপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ (৩২), সয়ধানগড়া মধ্যপাড়ার সুরত আলীর ছেলে আহাদ আলী (১৯), রামগাঁতী গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে আব্দুস সামাদ (৪৫) ও তার ছেলে শাকিল আহম্মেদ (১৯), সয়ধানগাড়া (মিলন মোড়) মহল্লার মৃত একরামুল হকের ছেলে মাইক্রোবাস চালক নুরে আলম স্বাধীন (৪০), রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়নের কৃষ্ণদিয়া গ্রামের আলম শেখের ছেলে খোকন শেখ (২২) এবং কালিয়া হরিপুর চুনিয়াহাটির মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভাষান শেখ (৬৫)।

এদের মধ্যে ভাষান শেখ সদর হাসপাতালে আনার পথে মারা যান। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রোকনুজ্জামান তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। স্বজনরা তার লাশ আগেই নিয়ে যান।

এদিকে নববধূকে বরণের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা লাশের জন্য সারারাত ছোটাছুটি করেছেন। আহাজারি ফেলে লাশ পেতে দুর্ঘটনাস্থলে, হাসপাতালে, প্রশাসন ও থানা পুলিশের কাছে দৌড়াতে হয়েছে তাদের। অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিল থেকে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা করে প্রতিটি পরিবারকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে বলে লাশ হস্তান্তরের সময় ঘোষণা দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের উল্লাপাড়ার সলপ স্ট্রেশনের অদূরে অরক্ষিত রেলওয়ে ক্রসিং পার হওয়ার সময় রাজশাহী-ঢাকাগামী পদ্মা ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস ছিটকে পড়ে। মাইক্রোবাসের আরোহী বর ও কনেসহ ১১ জন নিহত হন। জিআরপি থানার ওসি হারুন মজুমদার জানান, লাশ উদ্ধারের পর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি হয়। তবে আমরা লাশ পেয়েছি ১১ জনেরই।

উল্লাপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ফিরোজ মাহমুদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার সকালে এটি গঠন করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী ছয় কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে সদর ও কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাড়ও জিআরপি থানা এবং সদর ও কামারখন্দ সার্কেলের পুলিশ কর্মকর্তা ও এলজিইডির প্রকৌশলী রয়েছেন।

এর আগে সোমবার রাতে পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগ পাকশী থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত