নিউজ ডেস্ক

১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০৯:২৪

বিশ্বম্ভরপুরে পুরোদমে চলছে বোরো চাষাবাদ, সেচ সংকটে কৃষকরা

বিশ্বম্ভরপুরে চলতি বোরো ধানের চাষাবাদ পুরো দমে চলছে, নদী-নালা, খাল-বিলে পানি ও সেচ সংকট থাকায় এবং এখনও ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ/ মেরামত কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন

বিশ্বম্ভরপুরে চলতি বোরো ধানের চাষাবাদ পুরো দমে চলছে, নদী-নালা, খাল-বিলে পানি ও সেচ সংকট থাকায় এবং এখনও ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ/ মেরামত কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। চলতি বোরো মৌসুমে বৃহৎ করচার হাওড় ও আঙ্গারলী সনার হাওড় সহ বিভিন্ন হাওড়াঞ্চলে বোরো চাষাবাদ অব্যাহত রয়েছে। গত প্রায় ১ মাস যাবৎ চাষাবাদের কাজ চলে আসছে, এ পর্যন্ত হাওড় এলাকার প্রায় ৬৫% বোরো রোপন হয়েছে। হাওড়পাড়ে কৃষকের পাশাপাশি বেশ কিছু কৃষাণীদেরকেও বোরো জমিতে পানি সেচ ও আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতে দেখা যায়। এ বছর বীজ সংকট ছিল না, ফলে কৃষকরা সাচ্ছন্দে বীজ বপন করেছিল।

তবে চাষাবাদে সেচ কাজে ব্যবহৃত নদী-নালা, খাল-বিলে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় সেচ সংকট দেখা দিয়েছে বলে অনেক কৃষকরা বলেন। হাওড়ে প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষন ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সেচকাজে পানি সংকট দেখা দেয়। করচার হাওড়ের কছমা কিত্তা, ফকিরমারা কিত্তা, ধরেরপাড় কিত্তা, চারজাঙ্গাল ও আঙ্গারলী সনার হাওড়ের ধুমপুর কিত্তা, আঙ্গারলী কিত্তা, চিতলা, ফনার হাওড়সহ বিভিন্ন কিত্তা হাওড়ে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওড়ের পার্শবর্তী নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং অসময়ে মাছ ধরার জন্য সেচ করায় এ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। করচার হাওড় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাওড়ের উচু অঞ্চলে ফসলের পানি সেচের বিভিন্ন নালা, ডোবা এক শ্রেণীর লোকেরা অবাধে পানি সেচ করে মাছ ধরছে।

 তাছাড়া পূর্বের সুইচ গেইট বর্তমানে ঘাগটিয়া রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় হাওড়ের নিচু অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কৃষকের বোরো রোপণের স্বার্থে বিকল্প খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে করচার হাওড়ে ইজারাদার নীতিমালা বর্হিভূত অবাধে মাছ ধরার ন্য বিভিন্ন ডোবায় পানি সেচ করে কৃত্তিম পানি সংকট সৃষ্টি করছে ও মাছের বংশ ধ্বংস করছে। উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ ছমির উদ্দিন বলেন, অবৈধভাবে পানি সেচ বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 ঘাগটিয়া রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ও কৃষক আব্দুল গনি আনছারি বলেন, করচার হাওড়ে ইজারাদাররা তাদের নিজের অবৈধ লাভের স্বার্থে ইজারা নীতিমালা বর্হিভূতভাবে পানি সেচ করে অবাধে মাছ ধরছে। ফলে একদিকে যেমন কৃষকের বোরো চাষাবাদে বিঘœ ঘটছে, অপর দিকে মাছের বংশ ধ্বংস করছে। তিনি আরও বলেন, ঘাগটিয়া রাবার ড্যাম নির্মাণ কাজে ধীরগতি ও খুবই নিম্ন মানের কাজ হচ্ছে।

কাটাখালী গ্রামের কৃষক জামির জালাল বলেন, কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে সরকার রাবার ড্যাম নির্মাণ করছেন, ঘাগটিয়া এ নির্মাণ কাজ খুবই নিম্নমানের হচ্ছে। তাছাড়া ফসল রক্ষার বাঁধ, ভেরী বাঁধ নির্মাণকাজ এখনও শুরু না হওয়ায় আমরা হতাশায় রয়েছি। বোরো চাষাবাদে পানি সংকট ও হাওড় রক্ষার বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় অনেক কৃষকরাও উদ্বিগ্ন হয়েছে। তাছাড়া করচার হাওড়ের ঘাগটিয়া রাবার ড্যাম, গজারিয়া রাবার ড্যাম ও আঙ্গারলী সনার হাওড়ে রাবার ড্যামের কাজ চলছে। হাওড়ের বোরো ফসল রক্ষার জন্য এ ৩টি বাঁেধ কিভাবে রক্ষনা বেক্ষন করা হবে, এ নিয়েও কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্র্তা মোঃ জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় হাওড় ও হাওড় বর্হিভূত এলাকায় মোট ১০ হাজার ৮ শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত হাওড়াঞ্চলে ৬০% রোপন হয়েছে।

তিনি বলেন, পানি সংকট থাকলেও এ বছর বীজ/সার সংকট নেই। অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এবছর ভাল বোরো ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা করা যায়। করচার হাওড়, আঙ্গরলী সনার হাওড়, হালীর হাওড়ের একাংশ ও শনির হাওড়ের একাংশসহ ছোট বড় হাওড়ের ফসল রক্ষার বাঁধ, ভেরী বাঁধ নির্মান মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি। উক্ত হাওড়ের ফসল রক্ষার বাঁধগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিন করা হয়ে থাকে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মামুনুল হক বলেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় চলতি বছর বোরো ফসল রক্ষার জন্য মোট ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পাওয়া গেছে।

 দ্রুততম সময়ের মধ্যে পি.আই.সি অনুমোদন করে কাজ শুরু করা হবে এবং আগামী ২৮ শে ফেব্রুয়ারী/১৫ ইং এর মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হবে। অনেকের মনে প্রশ্ন এখনও কাজ শুরুই হয়নি, ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে কিভাবে কাজ সম্পন্ন হবে ? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ বলেন, উপজেলার বোরো ফসল রক্ষার জন্য হাওড় সমূহের বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধ করণ/ বিকল্প বাঁধ নির্মাণ/ মেরামত কাজ বাস্তবায়নের নিমিত্তে গত ১২/১/২০১৫ খ্রিঃ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে উপজেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা জানান দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত