২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০২:৪৭
হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার পরবর্তী সময়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করা হয়েছে, এবং তার কাছে এর প্রমাণ আছে বলে দাবি করছেন লন্ডনে বসবাসকারী শামীম নামের বিএনপির এক নেতা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে টেলিফোনে সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেন তিনি।
গত সোমবার জুনায়েদ আহমেদ নামের একটি ফেসবুক পেজ ও বিডি এসকে মিডিয়া নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে শামীম নামের ঐ ব্যক্তির লাইভ সম্প্রচার হয় । সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মামুনুল হককে উলঙ্গ করে নির্যাতন করা হয়েছে, রোজা রাখতে দেয়া হয়নি, হাতের তসবিহ ও ছোট কোরান শরীফ টয়লেটে ফেলে দিয়েছে, দেবাশীষ নামের এক হিন্দু পুলিশ অফিসার, ভারতীয় নাগরিক এই পুলিশ এই কাজটি করেছে বলে তিনি দাবি করেন ওই ভিডিওতে। এটা মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
লন্ডনে যারা শামীমকে চেনেন তারা কিছুটা অবাক হয়েছেন তার অভিনয় ক্ষমতা দেখে। যুক্তরাজ্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মীরাও এনিয়ে বিব্রত বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্য বিএনপিতে কোন পদে না থাকলেও সব সভা সমিতি ও আন্দোলনে শামীমকে দেখা যায় সামনের কাতারে।
এই প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতকারে শামীম বলেন, যে সব পুলিশ কর্মকর্তা মামুনুল হককে নির্যাতন করেছেন তাদের একজন তার বন্ধু, তিনিই তাকে জানিয়েছেন। তার কাছে এই নির্যাতনের প্রমাণ আছে। শামীম লন্ডনে বসেই বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ওলামা দলের যুগ্ম সম্পাদক ও বরগুনা জেলা বিএনপির সহসভাপতি পদে আছেন বলে দাবি করেছেন।
মামুনুল হককে নির্যাতন করেছে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার কোন প্রমাণ আছে কী না? বারবার প্রমাণ দিতে বললেও শামীম তা এড়িয়ে যান। তিনি বলতে শুরু করেন, এই সরকার মুসলমানদের হত্যা করছে। একজন মুসলমান হিসাবে তিনি ঈমানী দায়িত্ব মনে করছেন। উলটো তিনি সাংবাদিক হিসাবে এইসব মুসলিমনিধনের বিরুদ্ধে সংবাদ করার পরামর্শ দেন এই প্রতিবেদককে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির অনেকেই মনে করছেন ব্রিটেনে স্থায়ী হতে নিজেকে বাংলাদেশে তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণে এবং ভাইরাল হতেই এসব করেছেন শামীম। বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমকে দেয়া তার বাবার বক্তব্যও গুজব বলে উড়িয়ে দেন তিনি। তার বিরুদ্ধে যাবতীয় মন্তব্য অভিযোগ, গুজব হলেও তার নিজের বক্তব্যকে গুজব মানতে নারাজ শামীম। তিনি তার দেয়া বক্তব্যে অনড় ছিলেন এবং একজন মুসলমান হিসাবে তার ঈমানী দায়িত্ব হিসাবেই তিনি লাইভে আসেন বলে জানান। তার বাবা তাকে পদ্মফুলে গোবর বলে অভিহিত করেছেন, সেটি তিনি জানেন কী না জানতে চাইলে শামীম বলেন আজকেও আমার পিতার সাথে আমার কথা হয়েছে তিনি এই জাতীয় কিছু বলেছেন বলে আমি জানি না। হলুদ মিডিয়া এসব গুজব ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য তার।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, শামীম যুক্তরাজ্য বিএনপির কোন কমিটিতে বা দায়িত্বে নাই। তবে সে রাজনীতিতে সক্রিয় আছে। তার ফেসবুকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে প্রচারণা চালান শামীম, এই বিষয়টি এম এ মালেক জানেন না বলে জানান।
তার ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দেখি নাই, তবে শুনেছি। সেটি হয়তো তার আবেগের জায়গা থেকে বলে ফেলেছে। আবেগে গুজব ছড়ানো যায় কী না এই প্রশ্নে মালেক বলেন, দেখুন দেশে যা হচ্ছে তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র, আপনারা সাংবাদিকরা এইসব নিয়ে লিখুন। ভারতের দখলদারিত্ব থেকে দেশকে বাঁচানোর অনুরোধ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রিটেনে অবস্থানকালীন যুক্তরাজ্য বিএনপির টানা প্রতিবাদ কর্মসূচিতেও সরব ছিলেন শামীম। সেই সময়ে ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিওতে যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক এম কাওসার আহামেদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে "হরেকৃষ্ণ হরে রাম শেখ মুজিবের বাবার নাম" স্লোগান দিতে দেখা গেছে; সেই ভিডিওটিও সেই সময় ভাইরাল হয়েছিল।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের সময় লন্ডনে জামায়াত ও হেফাজতের প্রতিবাদ সমাবেশে শামীমকে দেখা যেত। তখন থেকেই বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। পরবর্তীকালে বিএনপির বিভিন্ন সভা সমাবেশে কোরান তেলাওয়াতের জন্য ডাক পড়ত শামীমের। লন্ডনে তারেক রহমানের সভা সমিতিতেও শুরুতে কোরান তেলাওয়াত করে শামীম নিজেকে বিএনপির নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে জানা যায়। শামীম স্বপ্ন দেখেন বরগুনার পাথরঘাটা এলাকা থেকে আগামীতে নির্বাচন করবেন, এবং সেই লক্ষে তিনি প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আপনার মন্তব্য