রুমেল আহসান, মালদ্বীপ থেকে

২২ মার্চ, ২০২৪ ০০:১৪

মালদ্বীপের প্রশংসায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা, স্বস্তিদায়ক কর্মপরিবেশ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশ মালদ্বীপ পর্যটনের জন্য সারাবিশ্বে সুপরিচিত। সুন্দর সুন্দর দ্বীপ, মনোমুগ্ধকর সৈকত এবং পাঁচ তারকা রিসোর্ট থাকায় দেশটি বিলাসবহুলভাবে ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ। সাদা বালির সৈকত, স্বচ্ছ পানি এবং নীল আকাশের জন্যও মালদ্বীপের খ্যাতি রয়েছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও পর্যটকদের জন্য নানা রকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতারও ব্যবস্থা আছে দেশটিতে। সঙ্গে আছে সুস্বাদু খাবার।

'সমুদ্রস্বর্গ' খ্যাত মালদ্বীপের হোটেল, রিসোর্ট, সুপারশপ ব্যবস্থাপনায় বেশির ভাগই বাংলাদেশি। এ খাতে প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী কাজ করছেন। অন্যান্য দেশের শ্রমিকের তুলনায় পারিশ্রমিকও বেশি বলে জানান তারা। শুধু হোটেল ব্যবস্থাপনাই নয়, সুপারশপেও পিছিয়ে নেই বাঙালিরা।

পর্যটন মানেই মানসম্মত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্টসহ থাকতে হবে নানা ব্যবস্থাপনা। আর তা যদি হয় মালদ্বীপের মতো বিশ্বসেরা পর্যটনের দেশ, তাহলে তো কথাই নেই। মালদ্বীপের হুলহুমালে রয়েছে শতশত হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। যার বেশির ভাগের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন বাংলাদেশিরা। কেউ হোটেল ম্যানেজার, কেউ বা সহকারী। নানা পদে কাজ করছেন তারা।

মালদ্বীপের কর্মপরিবেশ স্বস্তিদায়ক উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিপাশা গ্রামের মোহাম্মদ সুহেল মিয়া নামে এক প্রবাসী বলেন, এখানে যেসব বাংলাদেশিরা কাজ করছেন তারা বেশ ভালো বেতন পান। কাজও ভালো যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নিময়কানুনও ভালো। আগের চেয়ে শ্রমিকদের নানা সুবিধাও বেড়েছে। বাংলাদেশি টাকায় প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি মাসে ৪০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তারা।

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার পশ্চিম ইয়াজপুর গ্রামের মোহাম্মদ নিশাদ নামে এক প্রবাসী বলেন, বাংলাদেশিরা এখানে বেশ ভালো বেতন পাচ্ছেন। এখানে অনেকেই মাসে ১২ হাজার রুপি থেকে ১৪ হাজার রুপি পর্যন্ত আয় করেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০ হাজার টাকার মতো।

শুধু হোটেল ব্যবস্থাপনাই নয়, সুপারশপেও পিছিয়ে নেই বাঙালিরা। অনেকে দোকান ভাড়া নিয়ে নিজেই করছেন ব্যবসা। তবে করোনা-পরবর্তী পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বেচাকেনায়। সুপারশপে কাজ করেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ঝাড়িকাল গ্রামের রমজান হোসেন নামে এক প্রবাসী। তিনি বলেন, দোকানে কাজ করলে ৫ হাজার রুপি থেকে ৬ হাজার রুপি পর্যন্ত পাওয়া যায়; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। মালদ্বীপে হোটেলগুলোতে যৌথ মালিকানাও রয়েছে বাংলাদেশিদের। আর কর্মচারীও প্রায় সবাই প্রবাসী।

চার বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করা হয় মালদ্বীপের ভিসা। মালদ্বীপের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড টেকনোলজি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, অদক্ষ শ্রমিক আসা আপাতত স্থগিত থাকবে। বাংলাদেশি শ্রমিক আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল অবৈধ অভিবাসীদের সমস্যা মোকাবেলার লক্ষ্যে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম এক বছরে জন্য এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হলেও বছরের পর বছর এটি বাড়িয়েছে দেশটির পূর্ববর্তী সরকার।

আগের সরকার কর্তৃক চালু করা তৎকালীন অর্থনৈতিক মন্ত্রী ফাইয়াজ ইসমাইল বলেছিলেন যে, মালদ্বীপের আইন অনুযায়ী বিদেশি রাষ্ট্রের এক লাখের বেশি শ্রমিক থাকার আইন। ২০১৯ সালের গণনা করে বাংলাদেশের দেড় লাখ শ্রমিক মালদ্বীপে ছিল।

কোটা শেষ হয়ে গেছে এবং দেশ থেকে আর লোক আনা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। কাজের ভিসায় ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মালদ্বীপে প্রবেশ করেছে, যাদের মধ্যে ৬৩ হাজার অবৈধভাবে বসবাস করেছিল। পরে প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য বাংলাদেশি শ্রমিক নিষিদ্ধ করার পর প্রতি বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাংলাদেশি শ্রম নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত, শ্রীলঙ্কা নেপালসহ ও অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মালদ্বীপে।

শ্রমবাজারের দুয়ার খোলায় দক্ষ শ্রমিকেরা প্রবেশ করছেন মালদ্বীপে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার অফিসকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত