গোলাম সাদত জুয়েল, যুক্তরাষ্ট্র

২৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০১:২৬

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র, জরুরি অবস্থা ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ায় এবছর দেখা দিয়েছে বৈপরত্য। পুরো ডিসেম্বর শীতের কোন প্রকোপ না থাকলেও জানুয়ারি থেকে বাড়তে শুরু করে শীতের প্রকোপ। বাফেলো, মিশিগান, শিকাগো, আটলান্টায় জানুয়ারি থেকে বরফ পরতে থাকে।

গত ২২ জানুয়ারি থেকে বাড়তে থাকে তুষারপাতের মাত্রা। ২২ জানুয়ারি থেকে কাযত জনজীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। বাংলাদেশি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রবাসীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে নতুন ইমিগ্রান্টরা, যাদের বেশির ভাগ নতুন বসতি হিসাবে নিউ ইয়র্কের পাশ্ববর্তী বাফেলো থাকেন তাদের বেশীর ভাগই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

সদ্য বাংলাদেশ থেকে আসা প্রবাসীরা জীবনে কখনও তুষার দেখেন নি সেখানে তার তুষার ঝড় মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

তুষার ঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ টি স্টেটের জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তুষারঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের কারণে দেশটির সাত হাজার ১০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

ওয়াশিংটনসহ অন্তত ১০টি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ তুষারঝড় আগামী ৩৬ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে।

দেশটির আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ওয়াশিংটন, ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর ও নিউইয়র্কে ঝড়ের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এ অঞ্চলগুলোতে অবস্থানভেদে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এসব রাজ্যে প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষ বসবাস করে।

তুষারঝড়ের কারণে দেশটির বিমান, রেল ও বাস সার্ভিস বিঘ্ন হয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা শুক্রবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নগরীর রেল ও বাস সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। চার হাজার ৬৭৫ ফ্লাইটের যাত্রা বিলম্ব হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সাত হাজার ১০০ ফ্লাইট। যার অধিকাংশই নিউইয়র্ক ও ফিলাডেলফিয়ার বিমানবন্দরের ফ্লাইট। প্রায় একলাখ ১৪ হাজারেরও বেশি বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের ১৮ ইঞ্চি তুষারের স্তুপ পড়েছে। তবে ভয়াবহ তুষারপাত হয়েছে কেনটুকিতে। এ এলাকায় তুষারপাতের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় ৩৬ মাইল যানজটে আটকে পড়েছে হাজার হাজার গাড়ি।

মিশিগান, বাফেলো, শিকাগো, ওয়াশিংটন সহ প্রধান প্রধান শহরে জনজীবন বিপন্ন । রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে রোববার পর্যন্ত ১৮ থেকে ৩০ ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতীয় আবহাওয়া দফতর। এবারের তুষার ঝড়ে একশকোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এ রাজ্যে ভয়াবহ তুষারপাতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এবারের তুষারপাত। সে সময় ১৭ দশমিক ৮ ইঞ্চ তুষারের স্তুপে ঢেকে যায় ওয়াশিংটন। এ অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারের স্তুপ জমে ১৯২২ সালে। ওই বছর ২৮ ইঞ্চি তুষারের স্তুপে ঢেকে যায় ওয়াশিংটন। এ সময় একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়ে ১০০ মানুষ নিহত হয়। তবে এবারের তুষারপাত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির পরিচালক ক্রিস গেলডার্ট বলেন, পরিস্থিতির খুব দ্রুতই খারাপ হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র বিল দে ব্লাসিও শহরের বাসিন্দারের নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি শহরের মেয়র স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের মধ্যে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বিভিন্ন সড়ক থেকে তুষার সরানোর কাজ শুরু করেছেন।

নিউ জার্সির গভর্নর ক্রীস জানান, ৯০ হাজার লোক বিদ্যুত বিচিছন্ হয়ে পড়েছেন । তাছাড়া কয়েক হাজার সড়ক দুঘটনা ঘটেছে । ষ্টেট ইমার্জেন্সী ঘোষনা করা হয়েছে।

ক্রীস জানান, তিনি তার ১৭ তম ষ্টেট ইমার্জেন্সী আজ ঘোষনা করছেন। নিউ জাসিতে কিছুটা বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রাস্তায় নিরাপদে গাড়ি চালাতে বলা হয়েছে।

সুর্যস্নাত ফ্লোরিডা যেখানে তুষারপাত দূরের কথা তাপমাত্রা সব সসয় ৭০ থেকে ১০০ ডিগ্রী থাকে সেখানে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৫০ ডিগ্রীতে নেমে এসেছে । অনেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হচেছন না , ফ্লোরিডার ডিজনী ওয়াল্ডে পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে । যারা বাসা বাড়িতে শাক শবজি পালন করেন তারা গাছ পালা বাঁচাতে তাদের কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।

ফ্লোরিডা নিরাপাদ থাকলেও রাস্তাঘাট খালি হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ কোটি নাগরিকদের প্রায় ২৫ শতাংশ লোক তুষার ঝড়ে আটকা পড়েছেন , ৩৩ মিলিয়ন মানুষ বিপদ সীমার মধ্যে দিন যাপন করেছেন। ইষ্ট কোষ্টের জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়, ২৫ ইঞ্চি বরফে নিউইয়ক আটকা পড়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত