সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে

১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০১:৫২

কানাডার এ্যালবার্টায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা

উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের অন্যতম ​উন্নয়ন​ অংশীদার কানাডা। বর্তমানে দেশটির সাথে ​বাংলাদেশের​ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের​ পরিমাণ প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার।​ ​খনিজ সম্পদ উত্তোলন, সঞ্চালন এবং বিভিন্ন​​ প্রযুক্তিসংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্য​​সহ উচ্চশিক্ষা​য়​ ​এদেশের শক্তিশালী অঞ্চল​গুলোর একটি​ হচ্ছে এ্যালবার্টা প্রদেশ​। এ অঞ্চলের ব্যাপক সম্ভাবনাময় অর্থনীতির সাথে অধিকতর কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ৮-১০ই ফেব্রুয়ারি ২০১৬ আলবার্টা সফর করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসান। গুরুত্বপূর্ণ এ সফরকালে ​এ্যাল​বার্টা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীবর্গ​, প্রাদেশিক পার্লামেন্টের স্পীকার এবং ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তাগণ দু'দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক সুসংহতকরণের ​আশাবাদ​ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, কানাডার খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের​ বিশাল​ মজুদ রয়েছে এ্যালবার্টা​য়​। ১৯৮০'র দশকের শুরু থেকেই বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত কারিগরি ও প্রকৌশল পেশাজীবীরা এ প্রদেশের বিভিন্ন তেল-গ্যাস কোম্পানিতে​​​​ কাজ​ করতে​ শুরু করেন​। এ্যালবার্টার​ অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী​ ক্যালগেরী শহরেই বাংলাদেশী পেশাজীবীদের সংখ্যা ​দু'হাজারের বেশী। ​বিখ্যাত​ ক্যালগেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ​এবং ইউনিভার্সিটি অব এ্যালবার্টায় ​উচ্চশিক্ষা​ ও গবেষণায়​ নিয়োজিত রয়েছেন ​তিন ​'শতাধিক​ বাংলাদেশী ​গবেষক​ ও ছাত্র-ছাত্রী। ​

বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসান এ্যালবার্টা ​প্রাদেশিক আইনসভার​ স্পীকার রবার্ট ওয়্যানারের ​সাথে​ ​৯ই ফেব্রুয়ারি​ অনুষ্ঠিত​একান্ত ​বৈঠকে​ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)​ এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)'​র চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে কানাডার ভূমিকার ​কথা স্মরণ করে​ ধন্যবাদ জ্ঞাপন ​করেন​। তিনি বাংলাদেশ এবং কানাডার পার্লামেন্টের মধ্যে অভিজ্ঞতার বিনিময় ও সংসদীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। ​এ্যালবার্টার স্পীকার এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। ​​

এ্যালবার্টার জ্বালানী বিষয়ক মন্ত্রী মার্গারেট ম্যাককাউগ বয়েডের সাথে বৈঠককালে হাই কমিশনার বাংলাদেশের অগ্রসরমান জ্বালানী​ ​খাতের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে কানাডাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের মাধ্যমে ​ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের যে বিশাল​​ সমুদ্রসীমা ​নির্ধারিত হয়েছে, সেখানে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে​র আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ উৎসাহ প্রদান করে । কানাডীয় কোম্পানিসমূহ তাদের অভিজ্ঞতার ​আলোকে এ প্রক্রিয়ায়​​অংশগ্রহণ করতে পারে।

এ্যালবার্টার উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী সারাহ হফম্যানের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ​চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের আহবান জানান বাংলাদেশের হাই কমিশনার। তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন এবং এই খাতে কানাডীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা​ -​ 'সিডা'র অধিকতর সহযোগিতার আহবান জানান। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে, বিশেষত: তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা​ কর্তৃক​ সূচিত বিভিন্ন​ যুগান্তকারী​ পদক্ষেপের ​বিস্তারিত তুলে ধরেন হাই কমিশনার কামরুল আহসান। ​

উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী মার্লিন স্মীডটের সাথে বৈঠককালে  বাংলাদেশ থেকে অধিক হারে কারিগরি​ প্রশিক্ষণ​ ও প্রকৌশল ​অধ্যয়নে​ বৃত্তি প্রদানের আহ্বান জানান বাংলাদেশের হাই কমিশনার। এ্যালবার্টার ​উচ্চ​শিক্ষামন্ত্রী মার্লিন স্মীডট ​​বলেন​,​ তাঁর দেশ বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে​। তিনি কানাডার ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায়​ নিয়োজিত​ বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের দক্ষতার প্রশংসা করেন। এ পর্যায়ে​ ​বাংলাদেশের হাই কমিশনার​ বাংলাদেশী ​শিক্ষার্থী ও গবেষক​ ​যারা কানাডার​ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং​ কারিগরি ও কমিউনিটি কলেজগুলোতে ভর্তি​ হতে ইচ্ছুক বা ইতোমধ্যেই ভর্তির প্রক্রিয়াধীন, তাদের​ ​ভিসা পাবার ক্ষেত্রে জটিলতার অবসানে কানাডার​, ​​বিশেষত: এ্যালবার্টা প্রদেশের​​ সহযোগিতা কামনা করেন।​ জবাবে​ ​মন্ত্রী মার্লিন ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণে তাঁর সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস​ দেন।

এ্যালবার্টার বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ক ​সহকারী ​উপ-মন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে হাই কমিশনার বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ,​ গভীর সমুদ্র​বন্দর, রেলওয়ে, মেট্রোরেল​ ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন​সহ​ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে কানাডার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার আহ্বান জানান। ​সহকারী ​উপ-মন্ত্রী এজন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, বাংলাদেশের সাথে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে এ্যালবার্টা প্রদেশ এবং কানাডা সরকার অত্যন্ত আগ্রহী এবং এ বিষয়ে তাঁরা কাজ করে যাবেন।

এরপর এ্যালবার্টার কৃষি ও বনসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী কার্লিয়ার ও'নেইল বাংলাদেশের হাই কমিশনারের সম্মানে আনুষ্ঠানিক কর্ম-মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। মধ্যাহ্নভোজন ও বৈঠকে বাংলাদেশ-কানাডা বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উভয় পক্ষ।​ সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তাগণ মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ করেন। ​

সফরকালে এ্যালবার্টা প্রদেশের গভর্নর লোয়া মিশেলের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন বাংলাদেশের হাই কমিশনার​ কামরুল আহসান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত