মাঈনুল ইসলাম নাসিম

২৫ জুলাই, ২০১৬ ১২:১৪

পেপারওয়ার্কের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ৬ মাস বসে থাকবে কেন?

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নতুন নতুন বাজার সন্ধান এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান ও নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন্স অথরিটি (বেপজা) এবং বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মাহতাবুর রহমান নাসির।

তাঁর ভাষায় উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘দুর্বল পারফরমেন্স’ দূর করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল দুবাই’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহতাবুর রহমান নাসির একাধারে এনআরবি ব্যাংকেরও বর্তমান চেয়ারম্যান।
 
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিখ্যাত আল হারামাইন গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহতাবুর রহমান নাসিরকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা একনামে চেনেন জানেন। অর্ধ শতাধিক দেশে রয়েছে তাঁর সরাসরি ব্যবসা-বাণিজ্য।

একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে ইনভেস্টমেন্টের উদ্দেশ্যে কাগজপত্র বাংলাদেশে গেলে তখন দেখা যায় টেবিলে টেবিলে ঘুরতে ঘুরতে ছয় মাস নয় মাস পার হবার পর ঐসব ইনভেস্টাররা নারাজ হয়ে চলে আসেন। বিদেশী ইনভেস্টমেন্ট ও ইনভেস্টারদের জন্য সরকার যদি ওয়ান-স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে পারেন এবং তাদের চাহিদাটা যদি তড়িৎ গতিতে পূর্ণ করা হয়, তাহলে বিদেশ থেকে আরো বেশি ইনভেস্টমেন্ট যাবে বাংলাদেশে। সামান্য পেপার ওয়ার্কের জন্য ছয় মাস নয় মাস বাংলাদেশে গিয়ে বসে থাকার মতো সময় বিশ্বের কোন দেশের ব্যবসায়ীদেরই নেই এবং না থাকাটাই স্বাভাবিক”।
 
দুবাই’র বিজনেস ম্যাগনেট বলেন, “বাংলাদেশের বিশেষ করে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী যারা আছেন তারা যখন বিদেশে কোথাও একটা বড় মার্কেট পেয়ে যান তখন আর নিচের দিকে তাকান না বা তাকাবার প্রয়োজন মনে করেন না। আমি তাদেরকে বহুবার চেষ্টা করেছি বোঝাতে যে, আপনারা যে স্টাইলে ব্যবসা করছেন এটা কিন্তু ভুল। আপনাদেরকে মিডল ইস্ট, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার বাজার ধরতে হবে। প্রয়োজনে ছোট ছোট অর্ডার নিন, হয়তো ৪-৫ কন্টেইনার মাল গেলো কিন্তু ক্রমান্বয়ে এটা আরো অনেক বাড়বে এবং এটার একটা ফিউচার তখন আপনার কাছে থাকবে। আমার নিজের কথাই ধরুন, আপনাদের সবার দোয়াতে বর্তমানে বিশ্বের ৫২টি দেশে আমরা আমাদের ‘আল হারামাইন পারফিউম’-এর বিভিন্ন প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট করছি। মিডল ইস্টে আমাদের বিশাল মার্কেট থাকা সত্বে আমরা কেন আমেরিকা, মেক্সিকো, ইউরোপিয়ান বিভিন্ন দেশ, এমনকি চায়না, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই সহ আরো বহু দেশে নিয়মিত যাচ্ছি ? কারণ হচ্ছে, এর প্রয়োজন আছে। কোন কারণে একটা কান্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে আরেকটা কান্ট্রির উপর আমরা ডিপেন্ড করতে পারবো”।
 
বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে জঙ্গিবাদের উত্থানকে গ্লোবাল সমস্যার একটি পার্ট হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত সফল ব্যবসায়ী মাহতাবুর রহমান নাসির।

স্পষ্ট করেই তিনি জানান, “এটা আসলেই একটা গ্লোবাল সমস্যা। এই যে আপনারা দেখলেন ফ্রান্স, বেলজিয়াম, তুরস্কের পর আমাদের দেশেও হলো, বাদ যায়নি সৌদি আরবের মদিনাও। তবে আমাদের বাংলাদেশে সরকার যেভাবে এটাকে হ্যান্ডেল করছে, তাতে করে আমার মনে হয় বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় আমরা বেশ ভালোই আছি এখনো”।

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি আরো বলেন, “১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে আমরা যখন কম্বোডিয়াতে গিয়ে ব্যবসা শুরু করি তখন সেদেশে কোন সরকারই ছিলো না। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্বেও আমরা তখন কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ঐসব দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে আসিনি। আজকের প্রেক্ষাপটেও জঙ্গিবাদের মতো বিষয়গুলো নিয়ে এতো বেশি মাথা ঘামাবার সময় নেই আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের। তারা যেখানে লো-কস্ট পাবেন, যে দেশে প্রফিট করতে পারবেন, সেখানে বা সেদেশে তারা যাবেনই। তবে আমি আশা করবো, বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই যে কোন প্রকার জঙ্গিবাদকে কঠোর হস্তে দমন করবেন। ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আসুক, কেননা ব্যবসার অনেক অনেক স্কোপ এখনো বাংলাদেশে রয়ে গেছে”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত