সদেরা সুজন, সিবিএনএ, কানাডা থেকে

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৬:২৫

মন্ট্রিয়লে অনিশ্চিত প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা, হতাশ প্রবাসীরা

আর মাত্র দু’দিন পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক রাষ্ট্রীয় সফরে কানাডায় আসছেন। কানাডায় আগমন উপলক্ষে মন্ট্রিয়ল প্রবাসীদের মধ্য আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত কানাডা আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়েছে এবং নাগরিক সংবর্ধনার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়াও স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যাচ্ছে। জাতির জনকের কন্যা বলে কথা, প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি এক নজর দেখবেন বলে প্রবাসের কষ্টকঠিন সময়ের মাঝে অনেকেই কর্মস্থলে আগাম ছুটি নিয়ে রাখছেন এবং এদেশে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মরাও তাঁকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত।

প্রধানমন্ত্রীর মন্ট্রিয়লে আগমন উপলক্ষে এত সব সাজ সাজ রবের মধ্যেও এক অদৃশ্য কারণে সংবর্ধনা অনিশ্চিত হওয়াতে প্রবাসীদের মধ্যে নিরাশা ও কষ্টের ছায়া স্পষ্ট বিদ্যমান।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকতে হবে বলে জানা গেছে। ফলে ইচ্ছে হলেও নিরাপত্তার কারণে প্রবাসীদের সঙ্গে খোলামেলা সাক্ষাত হবে বলে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। অথচ প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য কানাডার বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসীরা মন্ট্রিয়লে এসে সমবেত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কানাডায় সরকারী সফর উপলক্ষে ব্যস্ততায় সময় পার করবেন বলে জানা গেছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে ‘ফিফথ রিপ্লেনিসমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’-এ যোগদানের উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর চারদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার মন্ট্রিয়লে থাকবেন।

এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিয়লে ‘জিএফ’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে প্রধানমন্ত্রী ১৬ সেপ্টেম্বর হায়াত রিজেন্সি মন্ট্রিয়লের অনুষ্ঠেয় এই রিপ্লেনিসমেন্ট সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পিতা কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ার ট্রুডোকে দেওয়া স্বাধীনতার সম্মাননা পদক হস্তান্তর করবেন।

পরে বিকেলে তিনি অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনের মিনিস্ট্রিয়াল প্লেজিং মোমেন্ট ও আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মন্ট্রিয়লে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।

১৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব তহবিলের নির্বাহী পরিচালক মার্ক দাইবালের সঙ্গে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। একই দিনে তিনি ‘রিমোভিং বেরিয়ার্স টু হেলথ থ্রো এম্পাওয়ারিং উইমেন এন্ড গার্লস এন্ড রিচিং দ্য মোস্ট মার্জিনালাইজড’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-১ এবং ‘এনগেজিং এন্ড মোবিলাইজিং ইয়ুথ টু মিট দ্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-২-এ অংশ নেবেন।

তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠেয় আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। পরে তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগদান করবেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কানাডার জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। তিনি অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বিশ্ব তহবিল ও গ্লোবাল সিটিজেন আয়োজিত কনসার্টও উপভোগ করবেন।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী চারদিন মন্ট্রিয়লে অবস্থান করলেও সরকারিভাবে প্রবাসীদের সঙ্গে কোন সভা কিংবা মত বিনিময় করবেন এমন কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। তবুও কানাডা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় হোটেল অমনীর বলরুমে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে পোস্টার-বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বিভক্ত আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়ে উৎসবের আমেজে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে জাঁকজমক করে তোলার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী মন্ট্রিয়লে আগমন উপলক্ষে প্রবাসীদের মধ্যে যে আনন্দ আর সাজ সাজ রবের সৃষ্টি হয়েছিলো তা কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে প্রবাসীদের সংবর্ধনা আয়োজনের অনিশ্চয়তার খবরে। কারণ এ রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত কেউই নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী সত্যিই নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দিবেন কিনা।

এ ব্যাপারে কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি সিবিএনএর পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও কেউই সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না। একে অপরের উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ সুকৌশলে বিষটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

এব্যাপারে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে বেশ ক’বার যোগাযোগ করে হাই কমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তিনি কানাডায় নতুন এসেছেন এবং তাঁর পারিবারিক মালামাল পৌঁছাতে ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারেননি, তবে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। এব্যাপারে বাংলাদেশে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর এপিএস (এক) জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফরের সব কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করছে কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আরো কিছু প্রশ্ন থাকলেও লাইনটি কেটে যাবার পর আবারো ফের ফোন করলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।

এ ব্যাপারে কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া বলেন বাংলাদেশে নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেছিলেন হাই কমিশনারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রবাসীদের সঙ্গে মত বিনিময় সভার আয়োজন করার জন্য, সেভাবেই তা আয়োজন করা হয়েছিলো কিন্তু এখন নিরাপত্তাজনিত কারণে দূতাবাস থেকে পরিষ্কারভাবে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, নেত্রী মন্ট্রিয়লে আসার পর তার অনুমতি থাকলে পূর্বঘোষিত তারিখ ও সময়ে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কুইবেক আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী বশীর বলেন, আমরা খুবই হতাশ। মন্ট্রিয়লের প্রবাসীরা প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত বলেই আমরা সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন অনুমতি না পাওয়াতে আমরা প্রবাসীদের কাছে লজ্জার মুখোমুখি হতে হবে।

এদিকে কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দু’দিন পূর্বে বাংলাদেশ থেকে মন্ট্রিয়ল এসে পৌঁছেছেন, তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, হতাশ হবার কারণ নেই, বিশাল আকারে সভা না হলে কানাডায় বসবাসরত দলীয় নেতাকর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত অনুষ্ঠান হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন কানাডা সফর কালে বিএনপি-জামাত সমমনা বিক্ষোভের মুখে পড়বেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত