সদেরা সুজন ও তানভীর ইউসুফ রনী, কানাডা থেকে

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২৩:৩৩

তারা কি তাহলে সকল খুনিদের আশ্রয় দেবে, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে জনমত তৈরির জন্য কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, 'কিভাবে একটি সভ্য দেশ অভিযুক্ত খুনিকে আশ্রয় দিতে পারে?'

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি তারা হত্যাকারীদের আশ্রয় দিতে চায়, তাহলে সব হত্যাকারী সেই দেশের আশ্রয় চাইবে। তারা কি তাহলে সকল খুনিদের আশ্রয় দেবে?

শনিবার রাতে কানাডার সেন্টার মন্ট রয়েলে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কানাডা শাখা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে। সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামীলীগ কানাডা শাখার সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া।

শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের পরিস্থিতি এবং তাদের দুঃসহ দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন।

বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখা এবং তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য শত শত প্রবাসীরা দূর-দূরান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়িতে অনেকেই ফিরে যেতে হয়েছে। সংবর্ধনাস্থলে উপস্থিত হবার পর বলা হয় কোনধরনে ব্যাগ, সেলফোন এমনকি কোন চাবি সঙ্গে নেওয়া যাবে না ফলে প্রবাসীরা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে এক এক করে প্রবেশ করতে গিয়ে কানাডার পুলিশ, সিকিউরিটি এবং হোটেল কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন হিমশিম খেতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন কানাডায় আশ্রয় নেওয়া খুনিদের ব্যাপারে আরো বলেন, 'আমি আপনাদের সামনে এই দাবি রেখে যাচ্ছি, যে দেশে আপনারা বসবাস করছেন, সেই দেশের জনপ্রতিনিধিদের চিঠি লিখুন এবং এই চেতনাজাগ্রত করুন কেন এসব দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'যতদূর আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর এক খুনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছে। একজন কানাডায়, দুজন পাকিস্তানে এবং অপর দুজন কোথায় আছে সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমরা তাদের আটকের জন্য খুঁজছি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারকে বলেছে, কেন তারা খুনিদের লালন করছে এবং আশ্রয় দিচ্ছে।

তিনি বলেন, 'তারা বলেছে- কানাডার সংবিধানে উল্লেখ আছে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ থাকলে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠাবে না। এটা কি ধরনের কথা!'

শেখ হাসিনা বলেন, পিতা হারানোয় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। কেন হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে?

তিনি বলেন, যদি এই খুনিরা তাদের দেশের নাগরিক হতো তাহলে সেটি বিষয় হতো। যদি তারা হত্যাকারীদের আশ্রয় দিতে চায়, তাহলে সব হত্যাকারী সেই দেশের আশ্রয় চাইবে। তারা কি তাহলে সকল খুনিদের আশ্রয় দেবে?

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'এর অর্থ হলো- যে দেশে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান নেই, সেই দেশ হত্যাকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এ জন্য জনমত সৃষ্টিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামনে আমি এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।' বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে উল্লেখ করেন।

প্রবাসীদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিয়েছে, প্রবাসীরা দেশে গিয়ে ভোটার আইডি তৈরি করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তবে কি করে প্রবাস থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে বলেন বাংলাদেশ এখন আমাদের নিজের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করছে। পদ্মা সেতু দুর্নীতি সম্পর্কে বলেন আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম তা মিথ্যে, যা আজ প্রমাণিত হয়েছে যে সবই ছিলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র। আজ আমরা গর্বিত আমাদের নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে বলেন, সারাবিশ্বেই পবিত্র ইসলামের নামে জঙ্গি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম কখনো এসব সমর্থন করে না। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা করে উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করে যাচ্ছি তারপরেও বিএনপি জামাত একর পর এক নতুন করে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জিয়াউল হক জিয়া ও সেলিম জুবেরী। সভাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স। সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব কানাডার পক্ষ থেকে একটি ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে 'ফিফথ রিপ্লেনিসমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড' (জিএফ)-এ যোগদানের উদ্দেশ্যে ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর চারদিন কানাডার মন্ট্রিয়লে ভীষণ কর্মব্যস্ত কর্মসূচিতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করবেন। আজ ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে (মন্ট্রিয়ল সময়) এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশে মন্ট্রিয়ল ত্যাগ করে একই দিনে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেবেন তিনি। নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি সম্পন্ন করে ২৬ সেপ্টেম্বর দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ​

আপনার মন্তব্য

আলোচিত