লন্ডন সংবাদদাতা

২৩ এপ্রিল, ২০১৫ ১৯:৫২

ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ: মেয়র লুত্ফুরের পদ বাতিল,পরবর্তী নির্বাচনে নিষিদ্ধ

ব্রিটিশ ইলেকশন কোর্টের রায় প্রকাশ। ২০১৪ সালের টাওয়ার হ্যামলেট মেয়র নির্বাচন বাতিল, পরবর্তী নির্বাচনে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং দুশ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড জরিমানা। নির্বাচনী আইন ভঙ্গ এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের দায়ে লুত্ফুর রহমান দোষী সাব্যস্ত।

বহুল আলোচিত বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট বারা কাউন্সিল ২০১৪ নির্বাচনে জয়ী প্রথম বাঙালি মেয়র লুত্ফুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত প্রতারণা মামলার রায় বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ নির্বাচন আদালত।
 
২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরে জালিয়াতির অভিযোগ এনে লেবার দলীয় প্রার্থী জন বিগস এর চারজন সমর্থক ব্রিটেনের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত মুসলমান মেয়র লুত্ফুর রহমান কে দায়ী করে একটি মামলা করেন। গত একবছর ধরে চলা মামলার রায় প্রকাশ করে দেশটির নির্বাচনী আদালত।

 জজ রিচার্ড মাউরেই স্বাক্ষরিত রায়ে ভোট জালিয়াতি, নির্বাচন পূর্ব অবৈধ প্রচারণা, সরকারী খাতের টাকা দিয়ে ভোট কিনা, প্রতারণা  ও নির্বাচনী আইন ভঙ্গের দায়ে মেয়র নির্বাচন ২০১৪ ফলাফল বাতিল এবং লুত্ফুর রহমান কে অবৈধ মেয়র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে , ভবিষ্যৎ নির্বাচনে করা হয়েছে  নিষিদ্ধ এবং জরিমানা করা হয়েছে দুশ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড।

প্রাথমিক পর্যায়ের শুনানিতে  জজ রিচার্ড মাউরেই এক প্রশ্নে মেয়র লুত্ফুর রহমানকে প্রস্তাব  করেছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ এবং জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত এই নির্বাচন কে কলঙ্ক মুক্ত করতে পুনঃ নির্বাচনে তিনি রাজি কিনা ? মেয়র লুত্ফুর রহমান সেই প্রস্তাব  কে নাকচ করে দেওয়ায় মামলাটি পরিচালিত হয় গত এক বছর ধরে। 

কয়েক দফা শুনানিতে উঠে আসে সব ভয়ংকর তথ্য
১. হস্তলেখা বিশেষজ্ঞ দের রিপোর্টে দেখা যায় বাঙালি অধ্যুষিত ভোট কেন্দ্রে একই ব্যক্তি একই কলম দিয়ে ব্যালট পেপার পূরণ জাল ভোট দিয়েছেন  
২. বিরোধী লেবার দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়া “আন-ইসলামিক” বলে মুসলমান ভোটার দের মধ্যে প্রচার করা হয়।
৩. ধর্মীয় প্রভাব দ্বারা নির্বাচন কে প্রভাবিত করা হয়। টাকা প্রদানের মাধ্যমে  মসজিদের ইমামদের দিয়ে ভোটার দের মধ্যে ধর্মীয় প্রভাব জারি করা হয়
৪. নির্বাচনী প্রচারে বিরোধী লেবার দলীয় প্রার্থী জন বিগসকে নিয়ে মিথ্যা মন্তব্য করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়।
৫. সরকারী ফান্ড থেকে সমর্থকদের বিভিন্ন ভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়া।
৬. সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার মাধ্যমে বাঙালি এবং মুসলমান অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের ১০১ জন ইমাম কে দিয়ে লুত্ফুর রহমান কে ভোট দেওয়ার ফতোয়া জারি করা বিধর্মী জন বিগস কে ভোট দিলে সেটা হারাম কাজের সমান হবে বলে প্রচার করা।

সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে আসে পূর্ববর্তী সময়ে মেয়র থাকা কালীন অনৈতিক ভাবে সরকারী সম্পদ বরাদ্ধ দিয়ে কমিউনিটি নেতাদের বশে রাখা, ভোট কেন্দ্রের  সামনে ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় ঘৃণা এবং প্রভাব বিস্তারের চিত্র, ঘুষ দিয়ে ভোট কেনা’র দৃশ্যও।
 
এ বিষয়ে সাবেক লেবার মন্ত্রী এবং আগামী লন্ডন মেয়র নির্বাচনের জনপ্রিয় নেতা তেসা জোয়েল বলেন আজকের রায়ে রাজনীতির জয় হয়েছে। এই নগরীতে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই এবং নিশ্চয়ই টাওয়ার হ্যামলেট এর থেকে ভালো কিছু দাবি করে।
 
এই বিষয়ে লন্ডন মেয়র বরিস জনসন বলেন আজকের রায়ে আমি খুবই খুশি এবং এই রায় টাওয়ার হ্যামলেট বার কাউন্সিলের উপর থেকে দুর্নীতির কালো ছায়াকে দূর করলো।

বাঙালি কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত একজন জন প্রতিনিধির  এই সব প্রমাণিত দুর্নীতি এবং জালিয়াতি বিলেতে বাঙালিদের শক্ত অবস্থান এবং ভাবমূর্তি বিনষ্ট করবে বলে ও মন্তব্য করেছেন কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা।
 
গত বছর বিবিসি প্যানোরমার তদন্তে উঠে আসা কাউন্সিলের সম্পদ জালিয়াতি এবং স্বজন প্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত  লুত্ফুর রহমানের বিরুদ্ধে  ইসলামিক জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত