সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ২১:০৭

লন্ডনে ওসমানী স্কুলের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ, প্রবাসীদের ক্ষোভ

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে পূর্ব লন্ডনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ হয় ‘ওসমানী প্রাইমারি স্কুল’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ৩০ বছর ধারণ করা নামটি বদলে ‘ভ্যালেন্স প্রাইমারি স্কুল’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নতুন নামকরণ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

‘ওসমানী’ নামটি মুছে ফেলার এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যে একাধিক সভা করার পাশাপাশি নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন স্থানীয় বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বাংলাদেশি অধ্যুষিত হোয়াইটচাপেল এলাকার ভ্যালেন্স রোডে অবস্থিত ‘ওসমানী প্রাইমারি স্কুল’।

সম্প্রতি অভিভাবকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে পরিচালনা পর্ষদের একটি বিবৃতি প্রকাশ করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার জনবসতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশি ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে একটি বহু সংস্কৃতির স্কুল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। যে সড়কে বিদ্যালয়টি অবস্থিত (ভ্যালেন্স রোড) সেই রাস্তার নামে স্কুলের নতুন নামকরণকে একটি ‘নিরপেক্ষ নাম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আগাম কারও সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জানানো হয়।

বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ করছেন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনো প্রকার পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এ প্রক্রিয়া যুক্তরাজ্যের প্রচলিত রীতি-বিরুদ্ধ। স্থানীয় সব সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোরেরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে উল্লেখ করে তাঁরা বলছেন, বহু সংস্কৃতির করার এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরা বিষয়টিকে বাংলাদেশি ঐতিহ্যের প্রতি বিরূপ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে এ এলাকার ‘বাংলা টাউন’ ওয়ার্ডের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশিদের ব্যাপক প্রতিবাদের ফলে ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।

লন্ডনে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর শাহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘ওসমানী’, ‘কাজী নজরুল’ এবং ‘শাপলা’সহ আরও যেকটি বাংলা নামের প্রতিষ্ঠান টাওয়ার হ্যামলেটসে রয়েছে—সেগুলো যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের স্মারক বহন করছে। এ নাম বদলে দেওয়া যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের ইতিহাস মুছে দেওয়ার শামিল।

তবে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জন বিগস নাম পরিবর্তনের বিষয়টি সমর্থন করছেন না জানিয়ে এক বিবৃতিতে নাম বদলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়র বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত