বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন

২৯ মে, ২০১৫ ১৮:০৩

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন থামেনি, বুরুঙ্গা দিবসের আলোচনায় আবদুল গাফফার চৌধুরী

বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভ’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘বুরুঙ্গা গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন- বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন থামেনি, নীরব নির্যাতন এখনো চলছে। 

২৮শে মে পূর্ব লন্ডনের হ্যানবারি ষ্ট্রীটে বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভ এর উদ্যেগে পালন করা হয় বুরুঙ্গা গণহত্যা দিবস।

বালাগঞ্জের বুরুঙ্গা গ্রামের সাবেক মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরমান আলীর সভাপতিত্বে ও প্রজন্ম ৭১'র সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসাইনের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী।

আবদুল গাফফার চৌধুরী আরও বলেন- ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি ও তাদের দোসররা বাংলাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তাঁর ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশে এখনো প্রতিনিয়ত নীরবে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলছে আর তা আওয়ামী লীগের নামধারীরাই চালিয়ে যাচ্ছে এখন। উদাহরণ হিসাবে সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করেন তিনি।

গাফফার চৌধুরী আরও বলেন, এর দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের আর যাবার কোন জায়গা নাই। ভারতের মতো হিন্দু মহাসভা বা ভারতের মুসলমান নেতৃত্বের মতো কোন শক্তিশালী নেতৃত্ব ও নেই। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নামে একটা সংগঠন ছিল, যা এখন একটা নপুংসক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১ সালে হিন্দু-মুসলিম সবাই নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয়েছে বেশি। দেশের স্বার্থে হিন্দুদের টিকিয়ে রাখতে হবে।

গাফফার চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে কাজে লাগাতে দেশজুড়ে হিন্দু সম্পত্তি মসজিদ মাদ্রাসার নামে দখল করে নিচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল। যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব করছে।

শফিকুর রহমান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আছে। প্রতিনিয়ত সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরেও রাজাকারের কোন তালিকা তৈরী করা হয়নি। এই সুযোগে এদের উত্তরসূরীরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করছে। তাই রাজাকারের তালিকাও এখন পর্যায়ক্রমে করা হবে।

সভাপতি তাঁর সমাপনি বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মে গণহত্যার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। আমার চোখের সামনে বুরুঙ্গার সেই বীভৎস ঘটনা ঘটেছে। আমার দুইজন শিক্ষকসহ গ্রামের প্রায় একশত লোককে সেদিন নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ক্ষোভের বিষয়, এই সব রাজাকার আলবদরের সন্তানরা এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য এবং আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখনি শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। বুরুঙ্গার মানুষ না হয়েও আপনারা আমার গ্রামের নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রধান বক্তা ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বালাগঞ্জ বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা সুলতান শরীফ।

বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভ এর পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার সুশান্ত দাস গুপ্ত।

অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পুষ্পিতা গুপ্তা, আনহার মিয়া ব্যারিষ্টার শওগাতুল আনোয়ার খান সহ আরো অনেকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত