কানাডা প্রতিনিধি

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২০:০৮

কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে বিজয় দিবস-২০১৭ উদযাপন

যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস ২০১৭ উদযাপন করেছে কানাডার অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন।

এ উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান।

এ সময় দূতাবাসের সকল কূটনীতিক,​হাই কমিশনারের সহধর্মিণী, কূটনীতিকগেণর পরিবারবর্গ এবং মিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বিজয় দিবসের কর্মসূচীর দ্বিতীয় ভাগে ১৭ই ডিসেন্সর অটোয়ার ব্রন্সন সেন্টারের ম্যাক হলে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই কমিশন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঢাকা থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন হাই কমিশনের মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কাউন্সিলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন প্রথম সচিব (কন্স্যুলার) অপর্ণা রাণী পাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ।

অটোয়া ও কানাডাবাসীকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাগত জানিয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালী জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায়। আর সেই দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর, যে কারণে এ দিবসের তাৎপর্য এত ব্যাপক।

মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁই তাঁদের ঋণ কোনদিন ভুলবার নয়। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য আত্মদানকারী সকল শহীদদের, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, বীরাঙ্গণাদেরসহ মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাঁদের আত্মত্যাগে অর্জিত বিজয় তখনই সার্থক হবে যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারবো।

হাই কমিশনার বলেন, সেই চেতনার আলোকেই বাংলাদেশ দূতাবাস আমাদের দেশ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে, বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরছে বিশ্ববাসীর সামনে। কমিশনের আন্তরিক প্রয়াসের ফলে কানাডায় একটি কনসুলেট অনুমোদন করেছেন সরকার এবং আগামী বছরের প্রথম ভাগেই তা চালু হবে।

কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবায় মিশন সংকল্পবদ্ধ। এই সেবার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, তাঁদের কল্যাণে বাংলাদেশ দূতাবাস অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের রক্ষ্যে তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ মাননীয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গ্রহণ করেছেন, তাকে সফল করার জন্য সকলকে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাবার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ এবং চূড়ান্ত বিজয়ের উপর বিভিন্ন দেশাত্মবোধক ও জাগরণের গান, নাচ ও কবিতা পরিবেশন করেন অটোয়া, টরন্টো এবং বাংলাদেশে হাই কমিশনের শিল্পীবৃন্দ।

একে একে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় 'নোঙ্গর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো' এবং 'জয় বাংলা বাংলার জয়'- গান দুটো পরিবেশন করেন শিল্পী ডালিয়া, অজন্তা, শামা, সাখাওয়াত, আফিয়া, মাহমুদ, সোহেল, সাদী ও আরেফিন। একক কন্ঠে পরিবেশিত হয় 'নমি তোমায় মুক্তি সেনা' (সাখাওয়াত হোসেন), 'ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা' (শারমিন সিদ্দীক শামা), 'শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা আয়রে আয়' (ফারজানা মাওলা অজন্তা); "তিরিশ বছর ধরে আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি' (শিশির শাহনেওয়াজ); 'সব ক'টা জানালা, খুলে দাও না' (ডালিয়া ইয়াসমীন) এবং 'তোমার মাঝেই স্বপ্নের শুরু, তোমার মাঝেই শেষ / ভালো লাগা, ভালোবাসার তুমি, আমার বাংলাদেশ' (আরেফিন কবীর)। আবৃত্তি করা কবি নির্মলেন্দু গুণের 'আমি আজ কারও রক্ত চাইতে আসিনি' (টরন্টোর আবৃত্তিকার আফিয়া বেগম) এবং সৈয়দ শামসুল হকের কালজয়ী কবিতা 'আমার পরিচয়' (গিয়াস ইকবাল সোহেল এবং দেওয়ান মাহমুদ)। শিশু আবৃত্তিকার ফাতিমা সাইয়িদা সহীহ পরিবেশন করে 'আমাদের এই বাংলাদেশ' কবিতাটি (সৈয়দ শামসুল হক)। শিশুশিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দুইটি কোরাস 'মা গো ভাবনা কেন' এবং 'মোরা ঝঞ্চার মতো উদ্দাম' গান দু'টি। পরিবেশন করে এ্যালিসিয়া, আলিনা, ইষতি এবং ওয়াজিদ।

সবগুলো আয়োজনই দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। সাদী রোজারিও (তবলা) এবং আরেফিন কবীর (কীবোর্ড ও গীটার)। নৃত্য পরিবেশন করে শিশুশিল্পী অঙ্কিত পল (ঝুম ঝুম ময়না নাচো না), এবং রিয়া পল (আকাশে-বাতাসে চল সখি উড়ে যাই)।

বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদের গ্রন্থনা ও প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের সার্বিক সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনায় ছিলেন কাউন্সিলর ও দূতালয় প্রধান আলাউদ্দিন ভুঁইয়া। সহযোগিতা করেন দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। তীব্র শীত (-২৫) উপেক্ষা করে অটোয়া, মন্ট্রিয়েল ও টরন্টো থেকে শতাধিক বাংলাদেশী ও কানাডীয়র স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে এ​মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত