নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ০০:২৪

ভাইবোনের একুশে পদক

এবছর শিল্পকলায় একুশে পদক পাচ্ছেন সিলেটের প্রবীণ লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাস। এরআগে একই বিভাগে একুশ পদক লাভ করেন সুষমার অনুজ পণ্ডিত রাম কানাই দাশ। রামকানাই ২০১৪ সালে একুশে পদক পান।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সুষমা দাসসহ ১৭ বিশিষ্ট ব্যক্তির একুশে পদক প্রদানের সরকারী সিদ্ধান্তের তথ্য জানানো হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে একুশে পদক দেবেন।

সুষমা দাস ছাড়াও এবছর সিলেটের আরো দুই বিশিষ্টজন এবছর একুশে পদক পাচ্ছেন। তারা হলেন- অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ও ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ একুশে পদক পাচ্ছেন। জামিলুর রেজা তথ্য ও প্রযুক্তিতে এবং আব্দুল্লাহ খালিদ শিল্পকলায় ভাস্কর্য শাখায় অবদানের জন্য এ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। আবদুল্লাহ খালিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য 'অপরাজেয় বাংলা'র ভাস্কর এবং বরেণ্য শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর অধ্যাপক ছিলেন ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন।।

সুষমা দাস ১ মে ১৯৩০ (১৩৩৬ বাংলা) সালে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে স্বনামধন্য সংগীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রসিক লাল দাশ ও মা দিব্যময়ি দাশ। বাবা-মা দুজনই গান লিখতেন এবং গাইতেন। তিনি বাবা-মার সাথে মাত্র ৭ বছর বয়সে ছোট বেলা থেকেই ধামাইল এবং বাউল গান করতেন।

১৩৫২ সালে শাল্লা থানার চাকুয়া গ্রামে তাঁর বিয়ে প্রাণনাথ দাসের সাথে। বিয়ের পর গ্রামীণ মেয়েলী আসরে ধামাইল, কবি গান ও বাউল গানের পাশাপাশি হরি জাগরণের গান, গোপিনী কীর্তন, বিয়ের গান সহ ভাটি অঞ্চলে প্রচলিত লোকজ ধারার সকল অঙ্গের গান গেয়ে এলাকায় একজন নন্দিত শিল্পী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। জীবনের দীর্ঘকাল নিজ গ্রামেই কেটেছে সুষমা দাসের।

১৯৭২ সালে ছোটভাই পণ্ডিত রামকানাই দাশ এই গুণী সংগীতশিল্পীকে সিলেটে নিয়ে আসেন। ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় তিনি সিলেট বেতারে অডিশন দেন এবং নিয়মিত সংগীতশিল্পী হিসেবে লোকসংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চে গান করারও সুযোগ সৃষ্টি হয় তাঁর। বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসব সহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান পরিবেশন করেন।

জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি বেগম সুফিয়া কামালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলনের অষ্টম বার্ষিক অনুষ্ঠান মালায় লোকগীতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন সুষমা দাস।

ঢাকার শিল্পকলা কর্তৃক আয়োজিত “লোকসঙ্গীত উৎসব” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন তিনি এবং ২০১১ সালের ১৬ মার্চ ছায়ানট কর্তৃক আয়োজিত ওয়াহিদুল হক স্মারক “দেশঘরের গান” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন ছাড়াও অনুষ্ঠানে তিনি পিতা রসিক লাল দাশ ও রাধারমণ দত্তের গান পরিবেশন করেন।

সুষমা দাস রাধা-রমন দত্তের গান, বাউল শাহ্ আবদুল করিমের গান, কালাশাহ্, দুর্বিন শাহ্, গীতিকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, হাসন রাজা সহ বহু মরমী কবি ও সাধকের গান গেয়ে থাকেন।

১৪১৭ বাংলায় ভারতের কলকাতায় “বাউল ফকির উৎসব’’ এবং পরবর্তীতে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন সুষমা দাশ। সেই মঞ্চে দর্শকের অনুরোধে রাধারমণের গান পরিবেশন করেন তিনি।

তিনি চার পুত্র ও এক কন্যার জননী সুষমা। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরীর আখালিয়া হালদার পাড়া, মজুমদারপল্লী, ১০নং ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

অপরদিকে, রামকানাই দাশের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৫ এপ্রিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে গান গেয়ে সবার মনোবল সমুন্নত রাখার কাজ করেছেন রামকানাই দাশ। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে শুদ্ধ সংগীত প্রসার গোষ্ঠীর শীতকালীন সংগীত সম্মেলনে উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশন করে তিনি প্রথম সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাংলাদেশ বেতারের সিলেট কেন্দ্রে সরাসরি সংগীত শিক্ষার আসর ‘সা রে গা মা’ দুই বছর পরিচালনা করেন তিনি। তাঁর গাওয়া গান নিয়ে প্রকাশিত অ্যালবামগুলো হলো বন্ধের বাঁশি বাজে, সুরধুনীর কিনারায়, পাগলা মাঝি এবং অসময়ে ধরলাম পাড়ি।

তাঁর স্মৃতিকথা নিয়ে বেরিয়েছে বই- সংগীত ও আমার জীবন। সংগীতশিক্ষার ওপর তাঁর দুটি গ্রন্থ হলো সরল সংগীত শিক্ষা প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড।

২০১৪ সালে একুশে পদক পাওয়া পণ্ডিত রামকানাই দাশ একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত