সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১৮:২৭

শাবিতে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গণসাক্ষর

"উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজনীতিকদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে মুক্তি নেই"

‘নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। একের পর এক হরতাল অবরোধে অচল হয়ে পড়ছে অর্থনীতি। একদিকে পেট্রোল বোমা অন্যদিকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজনীতিকদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে মুক্তি নেই।’ শনিবার সকাল ১১টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত সহিংসতার প্রতিবাদে র‌্যালি পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘জনসাধারণের উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ সকল সহিংসতার অবসান হোক’ শীর্ষক ব্যানারে শাবি প্রেসক্লাব এ কর্মসূচির আয়োজন করে। একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য আমিনুল হক। এতে ‘আমার সোনার বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখো’ লিখে স্বাক্ষর দেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

সমাবেশে শাবি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম টিটু’র পরিচালনায় শাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহবায়ক কমিটির সদস্য সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, এ নৈরাজ্যের অবসান চাই। সহিংস কর্মকান্ডে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি স্থবির। আমরা চাই রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

হরতাল অবরোধ বাংলাদেশের উন্নয়নকে স্থবির করে দিয়েছে উল্লেখ করে শাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি অঞ্জন রায় বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিএনপি নেত্রী গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান।

সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক উদ্দিন বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য হরতাল অবরোধকারীরা সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। তাদের এই কর্মকান্ডকে ধিক্কার জানাই।

শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, রাজনীতির নামে সহিংস কর্মকান্ডে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একই সাথে খুন-গুম বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে যে রাষ্ঠ্রীয় সন্ত্রাস চলছে তারও নিন্দা জানাই। যারা  আজ দেশের দায়িত্বে আছেন তাদের বুঝতে হবে আমরা ভালো নেই।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, রাজনীতির নামে দেশে যা চলছে তা ঘৃণ্যতম কাজ। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ হত্যাও গ্রহণযোগ্য নয়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুল আলম বলেন, পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মেরে হরতালকে অমর্যাদা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ঠ্র হোক তা কি আপনারা চান? আমি সকলের প্রতি আহবান জানাই আপনারা সচেতন হোন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কবির হোসেন বলেন, আজকে আমরা কি দেখছি? হরতাল, অবরোধের নামে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের কী অপরাধ ছিল? দেশের পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম দীপু বলেন, রাজনীতি রাজনীতির ভাষায় মোকাবেলা করতে হবে। সাধারণ মানুষ আগুনে পুড়ে মরবে তা যেন না হয়। বিভৎস ঘটনা বন্ধ হোক।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আপনি যে দাবি দিয়েছেন তা পূরণ হওয়ার নয়। আপনি নির্বাচনে অংশ নেননি, তাই বলতে পারেন নির্বাচন বাতিল করতে। কিন্তু দুটি শক্তিশালী দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। মানুষ নির্বাচন বাতিল করতে চায় না, আপনার চাওয়া জনগণের চাওয়া নয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভুইয়া বলেন, দেশ ও মানুষের ভালো এবং শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা কোন সভ্য দেশের মানুষের কাজ নয়। ঠিক একইভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাও কাম্য নয়।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য যদি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এ রাজনীতি কার জন্য? আজকে বজ্রমুষ্ঠি করে শপথ নিতে হবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার।

পরে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গাজী সাদেক।

কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল বিশ্বাস, অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নারায়ন সাহা, গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জামান শ্যামল, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রায়, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ আলম, সহকারী প্রক্টর ফখরুল ইসলাম, মুয়্যিদ হাসান, সৌরভ রায়, শাবি প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ফয়েজ মোর্তাজা, অফিস সম্পাদক জাবেদ ইকবাল, কার্যকরী সদস্য আসাদুজ্জামান নয়ন, সামাজিক সাংস্কৃতিক স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়াজোটের আহবায়ক মোহাইমেনুল বাশার রাজ, সাবেক আহবায়ক শেখ সাব্বির সহ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সহ বিভিন্ন সংগঠের নেতৃবৃন্দ।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত