সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জুলাই, ২০১৬ ১৯:১৬

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দের মানববন্ধন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সিলেট জেলার উদ্যোগে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোমবার (২৫ জুলাই) সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ফাহিম আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন উত্তম সরকার, আব্দুল গোফ ইয়াছিন, পর্টু কুমার রায় প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট এবং শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর হামলা এসব পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। আমরা মনে করি সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের স্বার্থে লালিত পালিত এসব জঙ্গি সংগঠন ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠার শ্লোগান তুলে যারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে তারা মানবতার শত্রু। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের সাথে এদের সম্পৃক্ততা নেই। দেশের অধিকাংশ মানুষ বরাবরই তাদের প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

কিন্তু এইসব বর্বর ঘটনার সাথে ছাত্ররা বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি ভাবে যুক্ত হচ্ছে, তার বিস্তারিত না জেনেই ছাত্রদের দোষারোপ করা হচ্ছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় মানে তার আনুষঙ্গিক যা যা থাকা দরকার গবেষণাগার, লাইব্রেরি, সাংস্কৃতিক সংগঠন একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি থাকবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয় অনেক কলেজ বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো নেই।  যখন একজন ছাত্র ক্যাম্পাসে এ পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় তখন সে তার মেধাকে অন্য দিকে কাজে লাগায়।

আমাদের দেশের সরকার বলছে যে ছাত্ররা এসব সংগঠনের সাথে যুক্ত হচ্ছে এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দায়ী। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে যখন বলা হল আপনার ক্যাম্পাসের ছাত্র এসব বিষয়ের সাথে যুক্ত হল কিভাবে, তখন তাদের বক্তব্য হল একজন ছাত্র সে সপ্তাহে ১২-১৫ ঘণ্টা সে আমার ক্যাম্পাসে থাকে এর বাইরে সে কি করে এর জন্য প্রশাসন দায়ী নয়। কিন্তু শুধুই কি প্রশাসন দায়ী? কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলেই কি যুক্ত হচ্ছে আমরা মনে করি সরকার কিংবা প্রশাসন এ পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মাধ্যমে আসলে নিজেদের দায় এড়াচ্ছেন। আসল কারণ কেউ খতিয়ে দেখছেন না বা আড়াল করছেন।

প্রকৃতপক্ষে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, এমন অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে দেশীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি বাদ দিয়ে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়া মুনাফার লোভে মত্ত একদল শিক্ষাব্যবসায়ী বাজার দরের সাথে তুলনা করে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ব্যাঙ্গের ছাতার মত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসেছেন। শিক্ষার উদ্দেশ্য যেখানে হওয়া উচিত ছিল সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার সেখানে শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে গেছে চাকুরী কিংবা মুনাফা। যার কারণে আজ দেশে এই ধ্বংসাবস্থা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বদ্ধ পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কিছুদিন আগে ভ্যাট বিরোধী যে আন্দোলনে  কোন ধরনের সহিংসতা ছাড়া ছাত্রদের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল তা প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের নজরে আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শহরের এবং গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মেধাবী ছাত্ররা ভর্তি হচ্ছে। তাই ছাত্রদের মধ্যে সমাজের প্রতি দায়বোধ এবং নৈতিকতা জাগিয়ে তুলতে হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বদ্ধ পরিবেশ তা ধ্বংস করে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি একটি সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত