রাবি প্রতিনিধি

১৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৯:১৬

আমাদের পাবার ইচ্ছাটাও মরে যাচ্ছে: সনৎকুমার সাহা

‘আমরা যা-চাই, তা পাই না। তেমনটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের পাবার ইচ্ছাটাও মরে যাচ্ছে। এটা দুর্ভাবনা জাগায়।’ বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদক পাওয়া বিশিষ্ট চিন্তক-গবেষক-লেখক অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে দেশের প্রথম বুদ্ধিজীবী শহীদ ড. শামসুজ্জোহা দিবস উপলক্ষে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা : বিধি ও বিধিলিপি’ বিষয়ে এক স্মারক বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক সনৎকুমার স্মারক বক্তৃতায় বলেন, ‘যদিও জানি উচ্চশিক্ষার হার দ্রুত বাড়ছে, তবু তার কার্যকারিতা কী দাঁড়াবে, কার কী কাজ জুটবে, সেখানে হাত-সাফাই-এর কারসাজিতে কত যোগ্যতর প্রার্থী ছিটকে যাবে, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুতেই কাটে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কী করলে সার্বিক মঙ্গল, এমন কিছু আমার মাথায় আসে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন। অবশ্যই চলমান বাস্তবতার ও ভবিষ্যতের আত্মরক্ষার প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও এগিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। সফলতার সঙ্গে বিফলতার কথাটাও যেনো তাঁরা অকপটে বলেন। এসব জানার অধিকার জনগণের আছে।’

উচ্চশিক্ষিতের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত না হলে অধিক শিক্ষিতের বেকার হয়ে পড়ে থাকার আশংকা। উপযুক্ত সক্ষম মানব-সম্পদ তৈরি না হলে কাজের ক্ষেত্রও আশানুরূপ বাড়ে না। আত্মবিরোধের দুই প্রান্তকে মাথায় রেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ভাবতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে রসায়ন বিভাগের বিভাগের শিক্ষক ড. বিলকিস জাহান লুম্বিনী ও ড. মো. মাহবুবর রহমানের সঞ্চালনায় শহীদ ড. জোহার জীবনালেখ্য পাঠ করেন বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত সুলতানা।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকালে আগড়তলা ঘড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার দাবি ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে এই দিনে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পাকিস্তানি সেনারা ছাত্রদের ওপর গুলি করতে উদ্যত হলে তৎকালীন প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।

পরে সেনাদেরকে গুলি করতে বাধা দিলে ড. জোহাকে গুলি করে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী। পরে রাজশাহী মিউনিসিপল অফিসে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এরপর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে রাবিতে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।

এর আগে দিবসটি পালন উপলক্ষে শনিবার ভোরে প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভিন্ন বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন, এ্যালামনাই এসোসিয়েশন প্রভাত ফেরীসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

শিক্ষক দিবসের কর্মসূচিতে শনিবার বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়।

এছাড়া এ দিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা রাখা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত