রাবি প্রতিনিধি

১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ১৫:০০

রাবির ভাস্কর্য উল্টানো: দুই শিক্ষার্থীর ‘দায় স্বীকার’, দাবি অবকাঠামো উন্নয়ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের সব ভাস্কর্য (প্রায় সাত শতাধিক) উল্টে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এবং রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভাস্কর্য বিভাগের পাঁচ শিক্ষকের কার্যালয়। তবে এ বিষয়ে ওই বিভাগের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী ‘দায় স্বীকার’ করেছে।

মাস্টার্সের ভাস্কর্য বিভাগের ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন, ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসেন রনি।

সাংবাদিকদের সামনে তারা বলেন, ‘আমাদের ভাস্কর্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, বিভাগের চারপাশে কোনো সুরক্ষা প্রাচীরও নেই। এছাড়া অবকাঠামোগত অনেক উন্নতির জন্য বলা হলেও তা কেউ করেনি। এ কারণে আমরা ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রতিবাদ হিসেবে এটা করেছি।’

রাতের আঁধারে এটা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, ‘দিনে করলে শিক্ষকরা বাধা দিবে সেজন্য আমরা এটা রাতে করেছি।’
মঙ্গলবার বেলা ১০টার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা বিভাগের সামনে এলোমেলো, উল্টো, বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তৈরি ভাস্কর্য। ভাস্কর্য বিভাগের পাঁচ শিক্ষকদের কার্যালয় ভাস্কর্যের স্তূপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখে তৈরি করা পাল্কিও দূরে নিয়ে উল্টো করে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এ অবস্থা দেখে জড়ো হতে শুরু করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পুলিশ। তবে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে তথ্য তখনও কেউ জানে না।

রাতে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রহরী সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি রাত ১২টার সময়ও ভাস্কর্যগুলো আগের মতো ঠিক জায়গায় দেখেছেন। তখনও বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে ছিল। কিন্তু রাত দুইটার পর এসে দেখেন ভাস্কর্যগুলো এলোমেলোভাবে পড়ে আছে।

তবে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের সব ভাস্কর্যই বাইরে থাকে। আমরা সকালে এসে দেখি ভাস্কর্যগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। যারা এটা করেছে তারা বলছে উন্নতির দাবিতে করেছে। কিন্তু এটা এভাবে কেনো করলো এ রকম ঘটনা এর আগে আমরা দেখিনি, এমনকি কখনো শুনিওনি। প্রতিবাদের অন্য ভাষা হতে পারতো।

এ বিষয়ে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তফা শরীফ আনোয়ার বলেন, ‘দুইজন শিক্ষার্থী স্বীকার করেছেন এটা তারা কয়েকজন মিলে রাতে করেছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।’

প্রখ্যাত নাট্যজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মলয় ভৌমিক বলেন, ‘যদি তারা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই করে তাহলে শিল্পের অমর্যাদা করে কেনো করলো? আর সেটা করে সারাদেশে যখন সংবাদ ছড়িয়ে গেলো তখন বেলা সাড়ে ১১টার পর স্বীকার করলো কেনো? এর আগে কেনো চুপ থাকলো?’

তারা যে দাবির জন্য এটা করেছে বলছে, সেই দাবি এর আগে কখনোই শুনিনি। তারা যেটা করেছে সেটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাদের যুক্তি অগ্রহণযোগ্য বলেও জানান এ শিক্ষক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত