রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ২৩:১৭

রাবিতে ভর্তিচ্ছুকে ভুল তারিখে ডেকে এনে হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকে ভর্তি কার্যক্রমে ভর্তির জন্য এক শিক্ষার্থীকে ভুল তারিখে ডেকে এনে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে উপ-রেজিস্টার মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া নোটিশ অনুযায়ী ভর্তির শেষ তারিখ ২৪ জানুয়ারি হলেও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের টেলিফোন থেকে ওই শিক্ষার্থীকে কল করে ২৫ তারিখে আসার কথা জানান তিনি। ফলে ভর্তি হতে পারেনি ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজীব চন্দ্র বর্মণ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে ফোন করে ২৫ তারিখে ভর্তি হতে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ২৫ তারিখে ভর্তির জন্য আসলেও আমাকে ভর্তি করানো হয়নি’

সজীবের অভিযোগ, ‘অন্য কোনো পছন্দের প্রার্থীকে সুযোগ দিতেই আমাকে ভুল তারিখ বলে হয়েছে। আমাকে যদি ভুল তারিখ না বলা হতো, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তারিখ অনুযায়ী আমি ভর্তি হতে আসতাম।’

৬ষ্ঠ মেধা তালিকা প্রকাশের দিন সকাল ১১টার দিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তার টেলিফোন (৭১১১৩০) নম্বর থেকে উপ-রেজিস্ট্রার মোফাজ্জল হোসেন ৬ষ্ঠ মেধা তালিকায় নির্বাচিত শিক্ষার্থী সজীব চন্দ্রকে কল করেন।

তাদের মধ্যে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

অডিও রেকর্ডে বলা হয়েছে, সজীবকে ফোন দিয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে চান উপ-রেজিস্ট্রার মোফাজ্জল হোসেন। সজীবকে জানানো হয়- ফোকলোর বিভাগে সে ভর্তি হবে কি না? এরপর সজীব জিজ্ঞেস করেন, ফোকলোর বিভাগ ছাড়া অন্য কোন বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে কি না। এরপর সজীব জানতে চেয়েছেন ভর্তির শেষ সময় কবে। এর উত্তরে তিনি বলেন ২৫ তারিখ ভর্তির শেষ সময়।

এরপর সজীবের বাড়ি কোথায় তা জানতে চান মোফাজ্জল হোসেন। উত্তরে সজীব তার বাড়ি পঞ্চগড়ে জানালে তিনি আবার প্রশ্ন করেন, সে অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে আছে কি না। সজীব জানান, তিনি দিনাজপুরে ভর্তি হয়েছেন। এরপর রাবির ‘ই’ (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) ইউনিটে ভাইভা দেয়ার জন্য সেখানে ভর্তি বাতিল করে কাগজপত্র নিয়ে আসেন। এরপর তিনি সজীবের পুরো নাম উচ্চারণ করে আবার বলেন তুমি কি ভর্তি হবা? আমি কি কনফার্ম করবো? ডিনকে জানাবো? এরপর সজীব ভর্তি ফি এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ভর্তি ফি এর বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, একটু পরে আমি ডিনকে জানিয়ে কনফার্ম করে তোমাকে আবার ফোন করবো। তুমি মোবাইল ধরবা, মোবাইল কাছে রাখবা।

তবে সজীবের দাবি তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর কোনো টেলিফোন করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অপেক্ষমাণ ৬ষ্ঠ মেধা তালিকা গত ২৩ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সেখানেই সজীবের নাম রয়েছে। নোটিশ মোতাবেক তার ভর্তি শেষ সময় ছিল ২৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টা। ২৩ তারিখে ৬ষ্ঠ মেধা তালিকা প্রকাশের একদিন পরেই (২৪ জানুয়ারি) ৭ম মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে অন্য এক শিক্ষার্থীকে ২৫ তারিখে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

ভর্তির তারিখ ২৪ তারিখ হলেও সজীবকে কেন ২৫ তারিখের ভর্তি হতে আসতে বলা হয় জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘২৫ তারিখ কেন বলা হয়েছিল এই মুহূর্তে তো আমার মাথায় সেটা সেট করা নেই।’

তবে মোফাজ্জলকে সজীবের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড শোনানো হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এখানে (রেকর্ডিংয়ে) আমার কণ্ঠ ঠিকই আছে। সে ওয়েবসাইটে দেখে নাই, তার দায়িত্ব পালন করে নাই, এখন এ ব্যাপারে কিছু বলার থাকলে ডিনকে বলেন। ডিন যা বলার তা বলবেন।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির শেষ সময় ২৫ তারিখ। সেটা সামনে রেখে আমি ২৩ তারিখ তাকে ফোন করে বলেছি পরের দিন ২৪ ও ২৫ তারিখ সময় আছে। হয়ত সেখান থেকে আমি বলেছি।’

ডিনকে জানিয়ে পরবর্তী সময়ে আবার ফোন করার কথা থাকলেও কেন করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অস্বীকার করছি না। আমি বলেছি। কিন্তু যেহেতু সে কনফার্ম করেছে, আমি ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছি। এখানে যা আছে সেখানে আমার মানবিক ভুল আছে। তবে আমি শতভাগ কনফিডেন্ট আমার মধ্যে কোন দুর্বলতা নেই।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়াতে ৩য় অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হয়। শূন্য আসন অনুযায়ী অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ভর্তি হতে ইচ্ছুক তাদেরকেই পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত মেধা তালিকায় রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি তালিকাও অনুষদ দফতরে রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, যাদেরকে ফোন করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই ফোন রিসিভ করেনি।

তবে যারা ফোন রিসিভ করেনি তাদেরকে ছাড়াই মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনুষদ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফয়জার রহমান দাবি করে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে ভর্তির কাজগুলো করেছি। সেই ছেলেটির সঙ্গে যা ঘটেছে সেটি কোন অনিয়ম করার জন্য বা কাউকে ডিপ্রাইভ করার জন্য করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’

এদিকে ভর্তির এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘টেলিফোন করে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করাটা ঠিক না। এটা নিয়ে সন্দেহের জন্ম দেয়। আবার কর্তৃপক্ষ কাকে ফোন করলো আর কাকে করলো করলো না, এটা তো সকলের জানার কথা নয়। আর ভর্তি কার্যক্রম পুরোটাই অনলাইনে হবে। টেলিফোন করার বিষয়টিতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন।’

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। যে শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমনটি হয়েছে, সে যদি বিষয়টি উল্লেখ করে ডিনের কাছে আবেদন করে, তবে তার ভর্তির বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত