সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৪:৪১

মধ্যরাতে ইবি উপাচার্যের গাড়িতে হামলা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারীর গাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানাধীন বড়দাহ নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জীবন মরণের সন্ধিক্ষণ থেকে বেঁচে ফিরেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উপাচার্য। হামলার ধরন দেখে ডাকাতি মনে হলেও উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।

ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউল করিমসহ ব্যবহৃত গাড়িতে (কুষ্টিয়া ঘ ১১-০০২৮) করে ক্যাম্পাসে উদ্দেশ্যে রওনা হই। ঝিনাইদহ শহরে রেজাউল করিমকে বাসায় রেখে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে রাত ৩টা ৪২ মিনিটে গাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানার বড়দা এলাকায় পৌঁছালে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি দেখতে পান চালক ফরহাদ। পরে গাড়ি ব্যাক করে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পেছনে কিছুদূর যাবার পর বেশ কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফলে, গাড়ি পেছনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ সময় মাফলার দিয়ে মুখবাঁধা তিনজন আমার গাড়িতে রাম দা দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে। ফলে, গাড়ির বাম দিকের সামনের ও পেছনের দুটো গ্লাস ভেঙে যায়। চালক আবার সামনে গাড়ি টানে। এতে দুর্বৃত্তরা পেছনে পড়ে যায়। গাছের গুঁড়ির কাছে গিয়ে তা পার হবার চেষ্টা করে চালক। কিন্তু অনেক বড় গাছের গুঁড়ি হওয়ায় তা ডিঙ্গাতে ব্যর্থ হয়। পরে চালক ফরহাদ হোসেন আমাকে পালাতে বলেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে জঙ্গলে আশ্রয় নেই। দুর্বৃত্তরা গাড়ির কাছে এসে আমাদের না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করে। তারপর টর্চলাইট দিয়ে জঙ্গলের ভেতর গিয়ে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা পাশের জঙ্গলে আমাকে খুঁজে পায়। আমি অস্ত্রের মুখে আল্লাহর নাম নিতে থাকি। তারা আমাকে লুকিয়ে থাকতে দেখে অস্ত্রের মুখে গাড়ির কাছে ধরে নিয়ে আসে। পরে দুর্বৃত্তরা আমার কাছে টাকা চায়। কিন্তু মানি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন খুঁজে না পাওয়ায় আমার ল্যাপটপটি তাদের হাতে দেই। তারা টাকা না পেয়ে ল্যাপটপ রেখে ‘এখান থেকে এক পা নড়বি না’ বলে পেছনে চলে যায়। কিছুক্ষণ আমি গাড়িতে বসে থাকি। পরে আবার রাস্তার সামনে দিয়ে সোজা দৌড়াতে শুরু করি। কিছুদূরে গিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় চাই। পরে বাড়ির মালিক পাশের বাড়ির একজনকে ডেকে নেয়। ওই ব্যক্তি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক-প্রশাসন বিভাগের শাখা কর্মকর্তা ফজলুল করিমের বাড়িতে নিয়ে যান। ফজলুল করিম প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে ঘটনা জানান। পরে ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশের গাড়িতে ক্যাম্পাসের বাসভবনে আসি।

এ ব্যাপারে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। ভিসি স্যারকে তার গাড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দিই। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বের করতে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে।

এদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তার বাসভবনে গিয়ে সমবেদনা জানান ও খোঁজ খবর নেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ইবি প্রেসক্লাব, ছাত্রলীগ, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শাপলা ফেরাম, জিয়া পরিষদ ও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ও দুঃখজনক। এ নিয়ে পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দা বাহিনী ঘটনার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সরকারের কাছে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে কঠোর ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত