সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ মার্চ, ২০১৮ ১৬:২৬

লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে কবি সাহিত্যিকদের মিলনমেলা ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (৩ মার্চ) ইউনিভার্সিটির সবুজ পরিবেশকে আরো বর্ণিল করে তুলেছিলেন দেশ-বিদেশের কবি সাহিত্যিক এবং শিল্পীরা। কবিরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসকে মুখর করে রেখেছিলেন। কবিতা, গান, আবৃত্তির আবহ ছড়িয়ে পড়েছিলো পুরো গ্রামে। আর সেটি সম্ভব হয়েছে রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের কল্যাণে। কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলার আয়োজন করে এই ফাউন্ডেশন।

সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত অবধি কবিতাময়, সঙ্গীতময় সময় পার করেছেন সকল বয়সী কবি সাহিত্যিকরা। সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণিল সেই উৎসবের উদ্বোধন করেন ড. রাগীব আলী।

অনুষ্ঠানে বক্তারা রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ড. রাগীব আলী এমনিতেই শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। তার ওপর রাগীবনগর এখন কাব্যতীর্থের নগরীতে পরিণত হলো। এখন থেকে প্রতিবছর এখানে কবিরা তীর্থ করবে।
 
লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মিলনমেলায় বক্তব্য রাখেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ, দৈনিক সিলেটের ডাক এর নির্বাহী সম্পাদক গবেষক আবদুল হামিদ মানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হবিগঞ্জের উপপরিচালক শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, গবেষক ফোরকান আহমদ, তথ্যচিত্র নির্মাতা জুলফিকার রহমান সাঈদ, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট কবি ফকির ইলিয়াস, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, সাবেক কাউন্সিলর পাপিয়া চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা বখতিয়ার খান প্রমুখ। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান।
 
লিডিং ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. কাওসার হাওলাদার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী মো. জাহিদ হাসানের যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. রাগীব আলী বলেন, মানুষের মঙ্গলের জন্যই কবিতা। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মানুষের মঙ্গলের জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে কবিরা অশুভের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন।

তিনি বলেন, কবিরা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাতিঘরের মতো কাজ করছেন। স্বৈরাচার ও সন্ত্রাসীর কাছে তারা কখনো মাথানত করেননি, বরং সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। আর কবি-সাহিত্যিকদের সম্মান না করলে কোনো জাতির উন্নয়ন হবে না। কবিদের সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে নতুন নতুন কবি তৈরি, তারা সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়। সেই তরুণ কবিরাই একদিন এই দেশকে সুন্দর আগামীর দিকে নিয়ে যাবেন।

অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, রাগীব আলী সব সময় চেষ্টা করেন দেশ এবং মানুষের জন্য কিছু করতে। এতো সম্পদের মধ্যে বসবাস করলেও তাঁর মধ্যে কোনো অহংকার নেই।

তিনি বলেন, রাগীব আলীর মতো মানুষ এগিয়ে এলে এদেশ বহু আগে অনেক দূর এগিয়ে যেতো। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলেছেন তা দেশবাসীর জন্য অনুকরণীয়।
 
রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ বলেন, রাগীবনগর তাঁর স্মৃতিতে অমর। ড. রাগীব আলী ও তাঁর পরিবার বংশানুক্রমে তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে থাকবেন। ড. রাগীব আলী একজন হৃদয়বান ব্যক্তি হিসাবে মানবিকতার প্রতীক বলেও মন্তব্য করেন অধ্যক্ষ কালাম আজাদ। শিল্প-সাহিত্যের চর্চাই মানুষকে সুন্দর পথ দেখাতে পারে। রাগীবনগর এখন থেকে কাব্যতীর্থের নগরী।

দৈনিক সিলেটের ডাক-এর নির্বাহী সম্পাদক গবেষক আবদুল হামিদ মানিক বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি মৌলিক চাহিদা বা অধিকার রয়েছে। সেই চাহিদা বা অধিকার পূরণে ড. রাগীব আলী অবদান রেখে যাচ্ছেন। একই সাথে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায়ও তিনি তুলনাহীন ভূমিকা পালন করছেন।

তিনি বলেন, বিশেষ একেকজন মানুষকে জানার ভিতর দিয়ে অনেক অনেক বিষয় এবং মানুষকে জানা যায়। তাই রাগীব আলীর উপর লিখিত বইগুলো পড়লে একই সাথে মানুষ এবং বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে। তাঁর উপর যারা লিখেছেন তাদেরকে তিনি ধন্যবাদ জানান। কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি তাঁর অনুরাগ সবসময় ছিলো, এখনও আছে। তিনি সবসময় চেষ্টা করেন কবি-সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করতে। কবিদের মূল্যায়ন করে তিনি প্রশান্তি পান। অনুভব করেন মানসিক তৃপ্তি।

গবেষক ফোরকান আহমদ বলেন, চলমান বাস্তবতায় ড. রাগীব আলীর মতো সাহিত্য-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকের বড়ই অভাব। সমাজে তাঁর মতো মানুষ সত্যিই বিরল। আমি তাঁর জীবনদর্শন দেখে বইটি লিখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যার জন্য ১২টি বছর আমাকে ব্যয় করতে হয়েছে। বইটি প্রকাশ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
 
সাংবাদিক-কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী বলেন, রাগীব আলী জীবনের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর শয়নে স্বপনে থাকে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চিন্তা।

তিনি বলেন, জীবন চলার পথে কষ্টে অর্জিত সকল কিছু তিনি মানবকল্যাণে ব্যয় করে যাচ্ছেন। বিনিময়ে তাঁর কিছু চাওয়ার নেই। কোনো মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হন। আর সেই খুশিই তাঁর পাওয়া।

রাগীব আলীকে মানব সংস্কারক উল্লেখ করে বিশিষ্ট কবি ফকির ইলিয়াস তার বক্তব্যে বলেন, আমরা যে সমাজে বাস করি সেই সমাজ অনেক কিছুই স্বীকৃতি দেয় না। জাতীয় অনেক পদক পাবার সকল যোগ্যতা রয়েছে রাগীব আলীর। রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে সমাজসেবায় তাঁকে স্বাধীনতা পদক দিতে পারতো।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে মানুষের দু:সময়ে কিছু মানুষ খামোশ হয়ে বসে থাকে অন্যের অনিষ্ট করার জন্য। নিজের সততা আদর্শ নৈতিকতা দিয়ে সেই অশুভের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রাগীব আলী মানুষের কল্যাণে যে দীপ জ্বেলে যাচ্ছেন সেটি ধরে রাখতে হবে। তার পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হবে তরুণ প্রজন্মকে।
 
সভাপতির বক্তব্যে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রাগীব আলী মানুষকে অন্তর থেকে সম্মান করেন। তিনি সহজে মানুষকে বুকে টেনে নেন। কবি-সাহিত্যিকদের যথার্থ মূল্যায়নের জন্য তিনি যে মিলনমেলার আয়োজন করেছেন তা বিরল। সমাজে কবিদের মূল্যায়নের অভাব রয়েছে। কিন্তু রাগীব আলী সেই অভাবটুকু পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, দেশের প্রতিটি দু:সময়ে কবিরা যুগে যুগে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি সংকটে সবার আগে এগিয়ে আসেন কবি-সাহিত্যিকরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান ও দৈনিক সিলেটের ডাকের সম্পাদক আব্দুল হাই, লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাজ্জাদ আলী, আব্দুল হান্নান ও মিসেস সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক।

উদ্বোধনের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। শুরু হয় কবিতা আবৃত্তি, গান। গান, আবৃত্তি কথামালার ফাঁকে ফাঁকে চলে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠে অংশ নেন প্রফেসর ড. গাজী আব্দুল্লা হেল বাকী, কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ, কবি মুহিত চৌধুরী, কবি মাওলানা শায়েখ তাজুল ইসলাম, কবি আতাউর রহমান বঙ্গী, কানিজ আমেনা কুদ্দুস, কবি ফকির শাহ আলম, কবি কাওছার হাওলাদার, কবি নাজমুল আনসারী, কবি এম আহমদ আলী, কবি আহমাদ সেলিম, কবি ইসমত হানিফা চৌধুরী, জসিম আল ফাহিম, আলমগীর সিরাজী, কবি নজমুল হক চৌধুরী, কবি রহমত আলী, কবি কুবাদ বখত চৌধুরী রুহেল, অনিন্দ্য আনিস, কবি শেখর আচার্য্য, কবি হেলেনা আক্তার, কবি শামীমা নাছরিন, গীতি কবি আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার (নেত্রকোনা), কবি এস এ শফি, কবি কানাইলাল পাশি (কমলগঞ্জ), কবি আমিনা শহিদ মান্না, কবি মঞ্জুর আহমদ, কবি জোবায়দা বেগম আঁখি, কবি আদনান আহমদ, কবি সালেহা আফরিন বেবি, কবি আব্দুস সামাদ বাঙালি, কবি বাহার উদ্দিন বাহার, উম্মে সায়মা ইসলাম খুশি, গীতিকবি জাহানারা ওয়াহাব।

পুঁথি পাঠ করেন আবু সাঈদ মো. নাহিদ, ছড়া পাঠ করেন কবি ও ছড়াকার তারেশ কান্তি তালুকদার, কবি শাহ আলম, কবি সুলতানা বেগম, কবি সুমন আহমদ, কবি মীরা রাণী দাস, কবি লুৎফুর রহমান, কবি আব্দুল কাদির জীবন, কবি জুলফিকার আহমদ সাঈদ (জামালপুর)। গান পরিবেশন করেন ফকির শাহ আলম, বাউল নিউ শাহানা, বাউল মঈন উদ্দিন সরকার, জকিগঞ্জ সাহিত্য পরিষদের কবি ফজলুর রহমান ফজলু ও তার দল এবং রাগীব-রাবেয়া প্রতিবন্ধী ইন্সটিটিউট এর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

এর আগে দানবীর ড. রাগীব আলীর নিজের লেখা বই ও বিভিন্ন লেখকের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। যেসব বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় সেগুলো হলো রাগীবনগরের ইতিকথা ও আমার জীবন আমার স্মৃতি-লেখক ড. সৈয়দ রাগীব আলী, রাগীব আলী কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে-লেখক ফোরকান আহমদ, সমাজবিজ্ঞানী রাগীব আলী-লেখক মির্জা মো. রাজা মিয়া, হৃদয়তন্ত্রীতে বারে বারে অনুরণিত হয় যে একক খৈয়াম নিবেদিতপ্রাণ দানবীর ড. সৈয়দ রাগীব আলী তার নাম-লেখক প্রফেসর ড. আফতাব আহমদ, সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. সৈয়দ রাগীব আলী লক্ষ জনের একজন-লেখক কবি মোহন রায়হান, দানবীর রাগীব আলীকে নিবেদিত প্রাণের কথা গানে-লেখক সৈয়দ মোস্তফা কামাল, শ্রমিকবান্ধব দানবীর রাগীব আলী-লেখক কানাইলাল পাশি, সুরমা পারের ছেলে-লেখক জাহানারা ওয়াহাব, ছড়ার ছন্দে-ড. সৈয়দ রাগীব আলী ও আদর্শ বর্ণমালা-লেখক ফজলুর রহমান ফজলু।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন গোয়াবাড়ী রাগীবিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আল মাহমুদী এবং পবিত্র গীতা পাঠ করেন লিডিং ইউনিভার্সিটির একাউন্টস ইনচার্জ রজতকান্তি চক্রবর্তী।

বইগুলোর পরিচিতি পাঠ করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. কাওসার হাওলাদার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী মো. জাহিদ হাসান, রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী জসিম আল ফাহিম, ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আলমগীর সিরাজী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত