রাবি প্রতিনিধি

০৪ এপ্রিল, ২০১৮ ১৮:২৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বে রোল মডেল: আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী মন্তব্য করেছেন, দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে তা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

বুধবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক বিরোধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, 'জঙ্গিবাদ দিয়ে বাংলাদেশকে হলি আর্টিজানে হামলার খুব অল্প সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, যেভাবে ১৯৭১ সালে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম।'

'প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা মাদক ও জঙ্গিবাদ। এ সমস্যা বর্তমান আমাদের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু কোন পুলিশি সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যাকে রুখে দিতে হলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের সহযোগিতা পেলে জঙ্গিবাদ ও মাদককে আমরা বাংলাদেশ থেকে অচিরেই নির্মূল করতে পারবো।'

তিনি বলেন, 'তরুণরা হতাশার কারণে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকছে, মাদক নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এজন্য শিক্ষকদের ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে একজন করে কাউনসেলর রাখা প্রয়োজন। যেন কোন শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত হলে যথাযথ পরামর্শ পায় এবং বিপথে না যায়।'

সমাবেশে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, 'জঙ্গিবাদের কোনো বর্ডার নেই, কোনো সীমারেখা নেই। এটা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটা শুধু আমার স্থানিক কিংবা বাংলাদেশের একান্ত সমস্যা না। এটা থেকে কোনো রাষ্ট্রই এখন মুক্ত না। এখন ইউরোপের প্রতিটি শহর, রাস্তা-ঘাট, অলিগলিতে সিসি ক্যামেরা। আপনারা গণমাধ্যমের কল্যাণে জানেন, তারাও জঙ্গিবাদের এ ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত নয়।'

'শুধু ২০১৭ সালে ইউরোপে বার্সেলোনা ও লন্ডন ব্রিজ অ্যাটাকে মোট ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যারা গণতন্ত্রের প্রবক্তা সাজে, তাদের দেশেও অহরহ বন্ধুক যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। সে তুলনায় এই ১৬ কোটি মানুষের দেশ যেখানে আমরা সিসি টিভির কথা কল্পনাই করতে পারি না। ঠিক সেই দেশকে কীভাবে আমরা জঙ্গিমুক্ত রাখতে পারলাম, কীভাবে মোকাবেলা কররাম, সেটা সারাবিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়ের বিষয়।'

বাংলাদেশ পুলিশের অতীত ইতিহাস তুলে তিনি বলেন, '১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে প্রথম বুলেট এ পুলিশই করেছিল। এটা সেই পুলিশ যাদের ১১ হাজার সদস্য মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছে। আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালন হয়েছি, বিকশিত হচ্ছি।  আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করি বলেই আমরা এদেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে পেরেছি। এতে কখনো কখনো আমাদের জীবন দিয়েছি, কখনোবা পঙ্গুত্ব বরণ করেছি। কিন্তু আমরা পিছু হটিনি। তবে এটা সম্ভব হয়েছে এদেশের জনগণের সহযোগিতায়।'

মাদক সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, 'জঙ্গিবাদের মতো মাদকও একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের দেশে মাদক উৎপন্ন হয় না। এগুলো আসে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে। আমাদের সীমান্ত বাহিনী কাজ করার পরও কীভাবে আসে সেটা আমারও প্রশ্ন। আমরা বর্ডার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাজ করি। একটা পয়েন্ট দিয়ে একলক্ষ ইয়াবা ঠেকানো যতটা সহজ, সেগুলো যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার পয়েন্টে, তখন পুলিশের পক্ষে ঠেকানো সম্ভব কঠিন হয়ে উঠে। তবুও আমরা কাজ করছি, আপনাদের সহযোগিতা পাচ্ছি।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. খুরশীদ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, রাবি স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি সুমাইয়া রহমান কান্তি ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু জাকি আল মুনজির।

সঞ্চালনা করেন আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদাকাত মাহমুদ ও মেহজাবিন কথা। এ সময় সমাবেশে সমবেত কণ্ঠে কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদককে না বলেন। সমাবেশ আয়োজনে সহযোগিতা করে রাজশাহী স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত