নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ মে, ২০১৮ ২৩:৩৬

সিকৃবিতে নিয়োগ স্থগিতের নেপথ্যে ছাত্রলীগের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব!

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ছাত্রলীগের ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে এবার প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অতীতেও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের সত্যতা পায়।

শনিবার (১৯ মে) প্রশাসনিক কর্মকর্তার ১১ পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে একই সঙ্গে কর্মচারী পদে ১১ জনের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক পদে ইউজিসির অনুমোদনপ্রাপ্ত নতুন ২৪ জন ও কর্মকর্তা পদে আরও সাতজনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও ছাত্রলীগের চাপে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা উপদেষ্টা, অর্থ শাখা এবং তিনটি হলে প্রশাসনিক বা সমমানের কর্মকর্তার ১১ পদে শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। গত ৫ এপ্রিল এসব পদে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ। গত বছর ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা এবং সরকারি দল সমর্থক একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব পদে ১২ জনকে অ্যাডহক বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করেই এ তিনজন পদগুলো ভাগাভাগি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ পদে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তারা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এদিকে, ২০১২ সালে গঠিত ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হওয়ায় নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা এসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার দাবি তোলে। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার একপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ঋত্বিক দেবকে ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও সকালে নতুন নিয়োগের দাবিতে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা অভিযোগ করেন, আবেদনকারীদের আগেভাগে না জানিয়েই নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

আবেদনকারীদের কাউকে মোবাইল ফোনে, কাউকে এসএমএস দিয়ে, আবার কাউকে শনিবার সকালে এসে নিয়োগ পরীক্ষার কার্ড নেওয়ার কথা বলা হয় বলে তারা দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সংস্থাপন) মো. শাহ আলম বলেন, কতজনকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে, তার সত্যিকারের হিসাব বলতে পারব না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে একজন সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদেই ৫৫ জনকে ডাকা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রক্টর, উপদেষ্টা (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা), পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং তিনটি হলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সমমানের পদগুলোতে পাঁচ থেকে নয়জন করে শতাধিক আবেদনকারীকে ডাকা হয়েছিল।

গত বছর যে ১২ জন কর্মকর্তাকে অ্যাডহক বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়, তার মধ্যে চারজনই সিকৃবি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তারা হলেন সিকৃবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামরুল ইসলাম, হল শাখার সহসভাপতি ডা. কানন দাস, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক সৌরভব্রত দাস এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শামিম মোল্লা বলেন, গত বছর অ্যাডহকভিত্তিক ছাত্রলীগের চারজন নেতা নিয়োগ পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভাগাভাগির কোনো বিষয় ছিল না। সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়টি বিবেচনা করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম। এখনও চাই ছাত্রলীগের যোগ্য নেতাকর্মীরা যেন চাকরি পায়।

তবে ছাত্রলীগের চাপে শনিবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আবেদনকারীদের সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়নি। এ জন্য অনেকে বিক্ষোভ করেছে। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেউ থাকলেও তারা মূলত চাকরিপ্রার্থী বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকালে তা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পদে বাছাই পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচী যথাসময়ে জানানো হবে।

এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের চাপ বা অন্য কোনো কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের অভিযোগ অস্বীকার করে সিকৃবি রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঙ্গত কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছে। আলোচনা করে অচিরেই পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ জানানো হবে।

এদিন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ আপ গ্রেডেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত