মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা

২৬ মে, ২০২২ ১৪:১৪

বন্যা নিয়ে ভাবনা-দুর্ভাবনা

বন্যার করাল গ্রাসে সিলেট অঞ্চল বিপর্যস্ত। সিলেট নগরের প্রায় অর্ধেক এলাকা এক সপ্তাহ ছিল জলমগ্ন। নদীর পার উপচে পানি ঢুকার আগেই তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় মহানগরে। উপজেলাগুলোর রাস্তাঘাট, ফসলি জমি তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ২০ লাখ মানুষ। এখন নদীর পানি কমতে শুরু করায় নগরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। দিন দিন বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ।

মানুষের এই দুর্ভোগের কারণ কেবল  প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এর পেছনে দায় রয়েছে আমাদের অব্যবস্থাপনার। পরিবেশ, প্রতিবেশের পরিচর্যা না করে অপরিণামদর্শী উন্নয়ন প্রকল্প এই দুর্যোগের অন্যতম কারণ। বর্তমান যুগে অবকাঠামো উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দৃশ্যমান উন্নয়নে মনোযোগ বেশি দিতে হয়। অথচ অবকাঠামো উন্নয়নে পানির প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে কিনা, পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে হয় না তেমন কোনো পর্যালোচনা।

তাছাড়া একাধিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে থাকে না কোনো সমন্বয়। একটি এলাকার উন্নয়ন কৌশল ঐ এলাকার বাস্তবতা অনুযায়ী হওয়া উচিত। প্রকল্প গ্রহণ, প্রাক্কলন সবই হওয়া উচিত স্থানীয় ভিত্তিতে। এলকার চাহিদা অনুযায়ী। অথচ কেন্দ্রীয়ভাবে নিদিষ্ট ডিজাইনে, নির্দিষ্ট রেটে, নির্ধারিত সময়ে সকল এলাকায় যথাযথভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বছরের পর বছর মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয় উন্নয়ন কৌশলের আলোকে যদি জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হয়। তাহলে জোড়াতালির উন্নয়ন মানুষের দীর্ঘমেয়াদি উপকারের পরিবর্তে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যেমনটা হয়েছে আমাদের চারপাশে।

অপরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ, স্লুইসগেট ইত্যাদি প্রথাগত ধারণা বন্যা নিয়ন্ত্রণ না করে বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী করছে। নালা, ছড়া, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ যত্রতত্র বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান, অবৈজ্ঞানিক অদূরদর্শী প্রকল্প  সমস্যাগুলোকে আরো ভয়াবহ করছে।    
 
বিভিন্ন সময় গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে অনেকাংশেই এর সমাধান সম্ভব হত। গত ১০ বছরে সিলেটের সুরমা নদী খননে চারটি প্রকল্প নেয়া হয়। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাগুলো (ডিপিপি) মন্ত্রাণলয়ে পাঠানো হয়। এরপর তিনবার সমীক্ষাও চালানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুরমা খননে নেয়া কোনো প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষ ২০২০ সালে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং বিভাগ সুরমা খননে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেটিও এখন পর্যন্ত পাস হয়নি। ২০১২ সালে সুরমা নদী খননে সর্বপ্রথম একটি প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবোর সিলেট সিলেট কার্যালয় থেকে এই প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবের পর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেয়ার কথা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে এরপর এ ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

২০১৭ সালে ৩০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প পাঠায় পাউবো। আর ২০১৯ সালে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীর প্রতিরক্ষার জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি পাঠায় পাউবো। সেবারও সমীক্ষা চালানো হয়। তবে সমীক্ষায়ই আটকে যায় কার্যক্রম। এরপর ২০২০ সালে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সুরমা খননে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওই বছর তারা সমীক্ষাও চালায়। তবে এই প্রকল্পও এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।

সিলেট অঞ্চলে বন্যা ব্যবস্থাপনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ  প্রকল্প ছিল কালনী-কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। কেবল আন্তরিকতা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে এই প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিস্তীর্ন এলাকার মানুষ।

সিলেট বিভাগের কালনী-কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বড় নদী ব্যবস্থা। জকিগঞ্জের অমলসিদ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত সুরমার দূরত্ব প্রায় ২০৪ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ থেকে পৈন্দা পর্যন্ত মূলধারাটিই সুরমা নামে পরিচিত। পৈন্দা থেকে দিরাই উপজেলার চানপুর হয়ে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মারকুলি এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে সুরমার এই প্রধান ধারা। এটি এখন মৃতপ্রায়-পুরান সুরমা নামে অভিহিত। এই ধারায় মিলিত হওয়ার আগে সুরমা নদীর এই শাখাটি দিরাই উপজেলার চানপুর হয়ে সুজানগর থেকে আজমিরীগঞ্জে গিয়ে আবার কালনী নদীতে মিশেছে। এই ধারাটি ‘মরা সুরমা’ নামে পরিচিত। সুরমার দ্বিতীয় শাখাটি পৈন্দা থেকে পশ্চিম দিকে নৌয়া নদী নামে আট কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে উত্তর-পশ্চিমে আরেকটু মোড় নিয়ে আরো ৯ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে বাঁক নিয়েছে। সেখানে জামালগঞ্জের লালপুরের কাছে বৌলাই নদীতে বাঁক নিয়েছে সুরমা। পরবর্তী সময়ে ঘোড়াউত্রা নাম নিয়ে দিলালপুরে গিয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এই নদীপথের সুবিশাল জলরাশি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জলপ্রবাহ হারিয়েছে।

পুরান সুরমা ও মরা সুরমা এখন বলতে গেলে মৃতপ্রায়। সুরমা, কুশিয়ারা নাব্যতা হারিয়েছে। যে নদী পথে একসময় জাহাজ, বড়  বড় স্টিমার চলতো  সেই নদীপথগুলেতে এখন বড় নৌকা চলাচলই বাধাগ্রস্ত হয়। নদী মাতৃক বাংলাদেশে শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নদীর গতিপথ নষ্ট হচ্ছে, নাব্যতা হারাচ্ছে নদীগুলো। উজান থেকে অাসা পাহাড়ি ঢলে চর পড়ছে নদীগুলোতে। ইটাখলা, ডাউকিসহ শাখা নদীগুলো অস্তিত্ব হারিয়েছে। হাওরগুলো ভরাট হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে জেগেছে চর। নদীর পাড় ভরাট হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে তীরও দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

পলি পড়ার কারণে নদীগুলি প্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে প্রাক মৌসমী বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা হ্রাস এবং কৃষি ও জনবসতি ভাঙ্গনের সম্মুখীন হচ্ছে।

এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল কালনী-কুশিয়ারা নদীর টেকসই ব্যবস্থাপনা। নদীর দীর্ঘমেয়াদী সুস্থিত অবস্থার উন্নতিসাধন এবং উন্নয়নের জন্য সুস্থিত পরিবেশ তৈরীকরণ। প্রাক মৌসুমী বন্যা নিয়ন্ত্রন এবং বর্ষা উত্তর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির ক্ষতি কমানো।

শুষ্ক মৌসুমে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়ন। আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ এলাকার নিরাপত্তা ও জাতীয় অর্থনৈতিক বিরুপ প্রভাব রোধকরন। নদী ভাঙ্গনের ফলে উদ্ভূত পরিবেশ, সামজিক ও অর্থনৈতিক বিরুপ প্রভাব রোধকরন। দারিদ্র বিমোজন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণ। প্রকল্প এলাকায় ছিল  কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলি উপজেলা  সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলা  সিলেট জেলার সিলেট সদর, ফেঞ্জুগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলা। মৌলভীবাজার  জেলার মৌলভীবাজার সদর ও  হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলা।

কালনী-কুশিয়ারা নদী ব্যবস্থপনা প্রকল্প এলাকা সিলেটের দক্ষিণে এবং ভৈরব বাজারের পূর্বে অবস্থিত। দক্ষিনে কুশিয়ারা-বিজনা-রটনা-সুতাং নদী, উত্তরে পুরাতন সুরমা-ডাহুক নদী এবঙ জগন্নাথপুর সিলেট সড়ক, পশ্চিমে পুরাতন সুরমা বৌলাই এবং পূর্বে সিলেট-কাকটাই গ্রামীণ সড়ক দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। প্রকল্পটি সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রস ৩,৩৫,৬০০ হেক্টর এলাকাব্যাপী বিস্তৃত।

প্রায় বার বছর আগে গৃহিত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সিলেট বিভাগে বর্তমানে বন্যা যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তেমনটি হতো না। এছাড়াও সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর স্বার্থে ১১টি উপেজলায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি নদীতে ৯২৫ কিলোমিটার অংশ খননের  একটি প্রকল্প নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। একটি কারিগরি টিমের সঙ্গে  নিজেও সরেজমিন জগন্নাথপুর উপজেলার  প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছিলাম। প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী  ডিজাইন তৈরির জন্য সার্ভেও হয়েছিল। সার্ভের কাজ শেষে ডিজাইন অনুমোদন হলে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদিত হয়।

দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। খননের প্রস্তাবনায়  ছিল সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লার কুশিয়ারা নদী ৫৩ কিলোমিটার, দিরাই ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মরা সুরমা নদী ৩৪ কিলোমিটার, শাল্লার গুদি নদী ৬ কিলোমিটার, দোয়ারাবাজারের শিলা নদী ১৬ কিলোমিটার, জগন্নাথপুরের বিবিয়ানা ৩৪ কিলোমিটার, দিরাই ও শাল্লার চামতী নদী ৩৩ কিলোমিটার, দিরাই ও শাল্লার পুরাতন সুরমা নদী ২০ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আবুয়া নদী ২০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের বৌলাই ৫৩ কিলোমিটার ও পাটনাই নদী ২০ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরের চলতি নদীর ১২ কিলোমিটার, ধর্মপাশার সোমেশ্বরীর ৫০ কিলোমিটার, কংশ নদী ২৭ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশার সুরমা নদী ৫০ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদরের পিয়াইন নদী ৩৮ কিলোমিটার, তাহিরপুরের কেন্দুয়া ও আপার বৌলাইয়ের ১২ কিলোমিটার ও ১০ কিলোমিটার, ধর্মপাশার গুমাই ২০ কিলোমিটার ও উবাদখালী ১৫ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদরের জিরাক নদী ২০ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুরের ধলাই ২০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের পাইকের তলা পাঁচ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুরের রূপসা ১০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের আহম্মকখালী দেড় কিলোমিটার, তাহিরপুরের আহম্মকখালীর সোনাতলা খাল দেড় কিলোমিটার, দীঘা কাইতনার খাল চার কিলোমিটার, তাহিরপুরের মেশিনবাড়ী বোয়ালমারা খাল সাত কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুরের পুটিয়ার খাল ১০ কিলোমিটার, বৌলা সুদামখালী খাল ১৪ কিলোমিটার, ধর্মপাশার ঘাসি নদী ২০ কিলোমিটার, দিরাইয়ের কালনী নদী ২২ কিলোমিটার, ছাতক ও দোয়ারাবাজারের সুরমা নদী ৫০ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডাউকি আট কিলোমিটার, জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ের কামারখালী নদী ৩৫ কিলোমিটার, দিরাইয়ের মহাশিং নদী ৪০ কিলোমিটার, জগন্নাথপুরের নলজুর নদী ৩৪ কিলোমিটার, দিরাই উপজেলার হেরা চাপতী নদী ১৫ কিলোমিটার, চাতল নদী সাত কিলোমিটার, ছাতক ও দোয়ারাবাজারের চিরাই নদী ২৫ কিলোমিটার, দোয়ারাবাজারের খাসিয়ামারা নদী ১০ কিলেমিটার, ছাতকের জালিয়াছড়া নদী ১৬ কিলোমিটার, বোখাই নদী ১৭ কিলোমিটার ও বটেরখাল ১০ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর দুঃখ ঘোচাতে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৯২৫ কিলোমিটার নদী খননের এই পরিকল্পনা কেন আলোর মুখ দেখলো না। এই দুর্যোগকালীন সময়ে এ প্রশ্ন তুলা কি অবান্তর। সম্প্রতি কিছু নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খননকাজ যেন পরিকল্পিত ও পূর্ণাঙ্গভাবে হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

সিলেট নগরে গত ১২ বছরে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতার সমাধান হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরে একটু বৃষ্টি হলেই সুরমার পানি উপছে পড়ে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ শহর বেড়ীবাঁধের আওতায় থাকলেও বন্যাঝুকিঁতে এগিয়ে থাকে। জেলা শহরগুলোর যেখানে এই অবস্থা। উপজেলা সদর বা গ্রামীণ অঞ্চলের ভয়াবহতা আর নতুন করে বলার কিছু নেই।

প্রায় চার দশকেও সুরমা নদী খনন হয়নি। তাতে তলদেশ ভরাটের সাথে নদীতে জেগেছে ছোট ছোট অসংখ্য চর। ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানি ধারণের ক্ষমতা হারিয়েছে সুরমা। যার কারণে নদী উপচে পানিতে ডুবেছে সিলেট নগরী। একই অবস্থা কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীগুলোরও।

শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি নদী-খাল খনন করলেই বন্যা সমস্যার সমাধান হবে না। ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে। নদীগুলোর গতিপথ অনুযায়ী নদী শাসন নিশ্চিত করে বাস্তবসম্মত প্রকল্প গ্রহণ জরুরি। সকল শাখা নদীগুলো বাঁচাতে হবে। নালা,খাল পুনরুদ্ধার করে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। হাওর এলাকায় দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের চেয়ে হাওর এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ রক্ষা করে টেকসই প্রকল্প গ্রহণ জরুরি। এবারের ভয়াবহ বন্যা নতুন করে এসব ভাবনার খোড়াক দিয়েছে। টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শুধু সিলেট নয় বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত