কবীর চৌধুরী তন্ময়

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪ ২১:৩২

জানোয়ার নয়, মানুষের আচরণ হতে হবে

গণতান্ত্রিক উপায়ে সকল রাজনৈতিক দলের সকল অহিংস আন্দোলন-সংগ্রাম করার অধিকার কারো হরণ করা উচিত নয়, তবে দেশ ও জনগণের জানমালের উপর ক্ষতিকারক কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচীও করতে দেয়া উচিৎ নয়



ভেবেছিলাম কিছু বলবো না, লিখবো না কিছু, শেয়ার করবো না কোনো বন্ধুর সাথে বাঘ শিকার করে।



বন বিড়াল অনেক সময় নিজেকে বাঘের মত ভাবতে থাকে, চেষ্টা করে বাঘের মত আচরণ করতে, হুংকার দিতে। মাঝে মাঝে শখের বসে একটু-আধটু বচনভঙ্গি, আকার ইঙ্গিত, শব্দ-বাক্য করারও চেষ্টা করে। এতেই সে মহাখুশী। আনন্দে আত্মহারা। নিজেকে বাঘ ভাবতে থাকে, ভাবতে থাকে বনের রাজা, আধিপত্যকারী একক শক্তি। যদিও বন বিড়াল।



আমাদের সমাজের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ থেকে নামিয়ে পশু ভাবতে শুরু করে, বাঘের আচরণের মত নোংরা আচরণ নিজের মত করে প্রকাশ করা শুরু করে, নিজেকে বাঘের মত শক্তিশালী হিসেবে প্রকাশ করতে আনন্দবোধ করে।



আমি জানি না তারা চিড়িয়াখানায় কখনো গিয়েছে কিনা। কারন সেখানকার অবস্থান পর্যবেক্ষন করলে বোঝা যায়, এই শক্তিশালী বাঘকে মানুষ কিভাবে নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখে হাতের ইশারায় নাচাতে থাকে। চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করলে বোঝা যায়, অতি সাধারন একটি মানুষ কিভাবে অনেক শক্তিশালী জানোয়ারকে অপরের আনন্দের খোরাক বানিয়ে নাচাতে থাকে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়- মানুষকে বাঘ বা কোনো জানোয়ার নয়, মানুষই বাঘ বা জানোয়ারদের নিয়ন্ত্রণ করে।



আমার মনে পড়ে মামার বাঘ শিকার করার কাহিনী। আমার জন্মের আগ থেকেই মামার বাঘ-হরিণ শিকার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। মামার অতিথিদের বৈঠকখানায় যারা গিয়েছে, তাদের নতুন করে বলতে হবে না- বাঘ আর হরিণের চামড়ায় কীভাবে কারুকার্য করে সাজিয়েছে। মামার একমাত্র বোন আমার মা'র জন্যে হরিণের মাংস নিয়ে আসতেন আর আমরা গল্প শুনতাম। আমলকির মত স্বাদে হরিণের মাংস এখনো যেন ঠোটে লেগে আছে।



আবার যারা কথায় কথায় নিজেদের বাঘ মনে করে হুংকার দিয়ে থাকে, যারা বলে- বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকাইস না! আমি বাঘ! আমার থাবা সহ্য করতে পারবি না! পরে ওজন নিতে পারবি না! তোমাদের এখানে আসতে দিবো না! সেখানে যেতে পারবি না ইত্যাদি ইত্যাদি।



আমি মিটমিটিয়ে হাঁসি আর ভাবি- তারা কি আধুনিক এই সময়ে এসেও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বা ডিসকাভারি চ্যানেল থেকে বঞ্চিত? হয়তো অনুমান নির্ভর... তবে ঐসব চ্যালেন আমার খুব প্রিয়। দেখি, কীভাবে চুপি চুপি বাঘ হরিণ শিকার করতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কিভাবে হাটু গেঁড়ে বাঘ তার শিকার করে, কিভাবে বাঘ ঘাড় মটকিয়ে দেয়, কিভাবে মাংস ভক্ষণ করে ইত্যাদি।



আমি বরাবরই বলে এসেছি, ছাত্রলীগ এর তুলনা ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য আর সংগ্রামের পথ প্রদর্শক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী দেশ ও মাতৃকার ব্যাপারে যেটুকু সচেতন-আন্তরিক, তা অন্য কোনো সংগঠন থেকে আসা কর্মীদের কাছে অপ্রত্যাশিত। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অনুসরণ তা অন্য কোনো নেতাদের কাছ থেকে অপ্রতুল। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায়ের একজন কর্মীর যে শ্রদ্ধা আর অনুকরণীয় আদর্শ, তা অন্যদের কাছ থেকে ততোটা কল্পনা বিলাস।



বন বিড়াল নিজেকে অনেক সময় বাঘ ভেবে আনন্দবোধ করলেও সে বন বিড়াল। বাঘ স্রষ্টার সৃষ্টি আর ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি। আর এই ছাত্রলীগকে গণধোলাই দেওয়ার কথা বলে বুড়ার সংগঠন ছাত্রদল যে শিক্ষা পেয়েছে তা নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে সঞ্চয় রাখলে, ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক ভূমিকার দৃষ্টান্ত হতে পারে। এই ছাত্রলীগের কত তাজা প্রাণ ’৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে তা বুড়ার সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুধাবন করতে পারবে না, পারবে না অনুমানও করতে- ছাত্রলীগের কর্মীরা কতটুকু আত্মত্যাগী ও দেশপ্রেমিক।



আমি মনেকরি, গণতান্ত্রিক উপায়ে সকল রাজনৈতিক দলের সকল অহিংস আন্দোলন-সংগ্রাম করার অধিকার কারো হরণ করা উচিত নয়, তবে দেশ ও জনগণের জানমালের উপর ক্ষতিকারক কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচীও করতে দেয়া উচিৎ নয়।



তবে আমাদের মানুষ হতে হবে, বন বিড়াল নয়, নয় বাঘও। মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব, জন্তু-জানোয়ার নয়। বন্য পশুদের মত আচরণ না করে আমাদের মানুষের ভাষায় কথা বলতে হবে, কোনো সহিংস বা জন্তু জানোয়ারের মতন হুংকার না করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতন আচরণ করতে হবে।



কবীর চৌধুরী তন্ময়: ব্লগার, সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)


[দায়মুক্তি: মুক্তমত বিভাগের লেখার মতামত, বিষয় লেখকের একান্ত। মতামতের জন্যে কর্তৃপক্ষ যে কোন ধরণের দায় গ্রহণ করেনা ] 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত