কুলদা রায়

০২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০৩

‘গরু জবেহ’ ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক উস্কানির নেপথ্যে কারা?

পিনাকি ভট্টাচার্যরা বসে নেই। তারা দেশে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন।

মানব জমিন পত্রিকা 'নিউ ইয়র্কের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদ বাংলাদেশে গরু জবেহ নিষেধ করার দাবী তুলেছে' শীর্ষক খবর প্রকাশ করেছিল যেদিন, সেদিন খবরটি প্রকাশের পরপরই পিনাকি ভট্টাচার্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে উগ্র মুসলমান ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

কিন্তু খবরটি ছিল ভুয়া। নিউ ইয়র্কের দুটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের কোনটাই এ ধরনের দাবী করেননি বলে পরিষদের নেতৃবৃন্দ বিবৃতি দিয়েছেন। তাহলে কে দিয়েছে এই বক্তব্য? এই প্রশ্নের উত্তরে একটি অংশের প্রেসিডেন্ট টমাস দুলু রায় জানিয়েছেন, তাদের সংবাদ সম্মেলনে শ্যামল চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি দর্শক সারিতে বসেছিলেন। একজন ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ঐ শ্যামল চক্রবর্তী নামের লোকটি দর্শক সারি থেকে উঠে এসে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশে গরু জবেহ নিষিদ্ধ করার দাবী করেছেন। তার সঙ্গে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। শ্যামল চক্রবর্তীও আমার কাছে ফোনে জানান যে, তিনি মহামায়া হিন্দু মন্দিরের প্রেসিডেন্ট। আমেরিকান বাঙালি হিন্দু ফাউন্ডেশন নামের একটি কাগুজে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট। নিউ ইয়র্কে শেষোক্ত সংগঠনের কোন কার্যক্রম নেই। তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের সঙ্গে জড়িত নন।

বাঙালি হিন্দুদের কয়েকটি মন্দির আছে নিউ ইয়র্কের কয়েকটি জায়গায়। তার মধ্যে জ্যামাইকার লিবার্টি এভিনিউতে মহামায়া মন্দির অবস্থিত। এখানে কালী পূজা, দুর্গাপূজা সহ হিন্দুদের নানা পূজা আর্চা হয়। হিন্দু ভক্তবৃন্দ সেখানে পূজায় অংশগ্রহণ করেন। তারা চাঁদা দেন। প্রণামী দেন। এই ভক্তবৃন্দের টাকা দিয়েই মন্দিরটি চলে। এই মন্দির বাড়ির দোতলায় মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ফ্রি বাস করেন। আর মন্দিরের মূল অংশটি এবং বেসমেন্ট শ্যামলবাবুর ব্যক্তিগত দখলে। তিনি একে তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। মন্দিরের নানা সুবিধা ভোগ করেন। এ ধরনের একটি বাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া নিতে হলে কমপক্ষে চার/পাঁচ হাজার ডলার ভাড়া গুণতে হত।

শ্যামল চক্রবর্তীকে গরু জবেহ নিষিদ্ধ করার দাবী বিষয়ে ফোনে প্রশ্ন করেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি কেন গরু জবেহ নিষিদ্ধের দাবী করছেন?

তিনি পরিষ্কার সাধু ভাষায় আমাকে বলেন, হিন্দু ধর্মে গোমাতা--গোদেবতা হিসেবে গরুকে দেখা হয়। সেজন্যই তিনি গরু জবেহ নিষিদ্ধ করার দাবী করেছেন।

আমি তাকে আবার প্রশ্ন করি, হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই যে গরু খাওয়া যাবে না। বরং প্রাচীনকালে হিন্দুদের যাগ-যজ্ঞদিতে গরুর মাংস রান্না করে দেবতাকে উৎসর্গ করা হত। তারপর খাওয়া হত। কিভাবে যজ্ঞের জন্য গরুর মাংস করতে হবে সে বিষয়ে শাস্ত্রে বিস্তারিত রেসিপি লেখা আছে। মহাভারতে অনেক কাহিনীতে দেখা যায়, সেকালে হিন্দুরা গরুর মাংস খেত।

তিনি উত্তরে বলেন যে, এটা লেখা আছে কিনা তিনি জানেন না। আর থাকলেও তিনি সেটা বিশ্বাস করেন না। তিনি গরুকে ব্যক্তিগতভাবে গোমাতা-দেবতা হিসেবে দেখেন।

তখন তাকে আরেকটি প্রশ্ন করি, হিন্দুদের ধর্ম শাস্ত্রে মৎস্য অবতারের কথা লেখা আছে। সে কারণে মাছও হিন্দুদের দেবতা। তাহলে মাছ খাওয়াকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হয়। সেই দাবী তুলছেন না কেন?

একথায় তিনি আমাকে গালি দেন। বলেন, গরু আর মাছ কি এক হইল!

আমি শান্ত থেকে শ্যামল চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করি, আপনি যে আমেরিকা দেশটিতে থাকেন, সে দেশের একজন একটিভিস্ট হিসেবে মহামায়া মন্দিরে আছেন, সেই আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ গরু কাটা হয় প্রতিদিন, সেটা বন্ধ করার দাবী করেন না কেন আমেরিকান সরকারের কাছে।

এই প্রশ্নে তিনি আমাকে আরো কঠিন করে গালি দেন। তিনি বলেন, তিনি আমেরিকা বা ভারত নিয়ে কথা বলবেন না। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন। এর বাইরে তিনি যাবেন না।

তখন আমি তাকে প্রশ্ন করি, আপনার কোনো কথা বা দাবী যখন বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করে, উগ্র জঙ্গি মৌলবাদী শক্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করার একটা ইস্যু হিসেবে যখন ব্যবহার করার সুযোগ পায়, একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে সে ধরনের কথা মিডিয়াতে বলেন কিভাবে?

শ্যামল চক্রবর্তী এবার দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আমাকে জবাব দেন, তিনি বুঝে শুনেই গরু জবেহ নিষিদ্ধ করার দাবী করেছেন। এই দাবীর জন্য বাংলাদেশের মুসলমানরা খেপলো কি খেপলো না, হিন্দু নির্যাতনের শিকার হলো কি হলো না সেটা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই।

এরপর শ্যামল চক্রবর্তী ফোন রেখে দেন।

শ্যামল চক্রবর্তীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। এক সময়ে জগন্নাথ হলে থাকতেন। সে সময়ে জগন্নাথ হলে ফরিদপুর এবং নেত্রকোনা জেলা গ্রুপ খুব শক্তিশালী ছিল। নেত্রকোনা গ্রুপের পেশীবাজ হিসেবে ১৯৭৯ সালের জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের জিএস হন। এরপর চার মাসের মাথায় তিনি জার্মানিতে চলে যান। একজন খ্রিস্টান মহিলাকে বিয়ে করেন। পরে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। সেখান থেকে আমেরিকাতে চলে আসেন বলে শ্যামল চক্রবর্তীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাকে জানান।

২০১২ সালে একাত্তরের শহীদদের উদ্দেশ্যে রমনা কালীবাড়িতে গণশ্রাদ্ধ করার একটা কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয় নিউ ইয়র্ক থেকে। উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যার বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়া। এই উদ্যোগটি নিতে ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্কে যান সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী। সঞ্জীব চৌধুরী আমার দেশ পত্রিকায় চাকরি করেন। তিনি দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর দায়ে আটক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অনুগত। তিনি জামায়াতের পেইড লোক। শ্যামল চক্রবর্তীর মাধ্যমে ঢাকায় গণশ্রাদ্ধের কর্মসূচিটি প্রণয়ন করেন সঞ্জীব চৌধুরী। নিউ ইয়র্ক থেকে শ্যামল চক্রবর্তী ঢাকায়ও যান গণশ্রাদ্ধের আয়োজন করতে। সুস্থ প্রগতিশীল মানুষদের প্রতিবাদে সেই গণশ্রাদ্ধ কর্মসূচিটি পরিত্যক্ত হয়।

বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মীর কাশেম আলীর সর্বোচ্চ সাজার আপীলের রায় বের হওয়ার পথে। এই সময়ে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করার প্রয়োজন জামায়াতে ইসলামীর। তার জন্য হিন্দুরা হল উপযুক্ত গিনিপিগ। কোনো রকমে তাদের কাছ থেকে একটা উস্কানিমূলক কিছু বের করা গেলে হিন্দুদের উপরে নির্যাতন নিপীড়নে নেমে পড়া যায়। দেশে একটা ঝামেলা বাঁধানো যায়। সেই লক্ষ্যেই নিউ ইয়র্ককে বেছে নেয় জামায়াতে ইসলামীর লোকজন। এই কাজে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পিনাকি ভট্টাচার্যকে।

পিনাকী ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু জানান, পিনাকি বিয়ে করেছেন একজন মুসলমান মেয়েকে। এজন্য তিনি মৌলবাদীদের রোষের শিকার হতে পারেন বলে তার মনে আতংক আছে। এই আতংক বা রোষ থেকে তিনি নিজেকে বাঁচাতে, নিজের অর্থ সম্পদ বাড়াতে জামায়াতে ইসলামীর হয়ে কাজ করছেন তিনি। হিন্দু ব্রাহ্মণ ভট্টাচার্য নামটি ব্যবহার করে হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানি সৃষ্টিতে নানা কথাবার্তা তিনি বলে আসছেন। হিন্দু লোক দিয়ে যদি হিন্দুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যায়, তবে সেটা সহজ সরল লোকদের কাছে গোয়েবলসীয় কায়দায় বিশ্বাসযোগ্য রূপে প্রচার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তার গুরু হলেন জামায়াতে ইসলামীর লোক ফরহাদ মজহার। ফরহাদ মজহার জামায়াতের প্রোপাগান্ডা চালানোর কাজে একটি হিন্দু পেইড লেখক গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন। এরা হলেন পিনাকি ভট্টাচার্য, গৌতম দাস, বিশ্বজিৎ মুন্সী, কোলকাতার গৌতম চৌধুরী।

পিনাকি ভট্টাচার্য এই দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের চূড়ান্ত সময়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য একটি উক্তি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বেছে নেন তার আত্মীয় শ্যামল চক্রবর্তীকে। এবং সঙ্গে যুক্ত করেন ভারতীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিককে। আর যুক্ত থাকেন ঢাকার একটি পত্রিকার একজন সম্পাদক। নিউ ইয়র্কের জামায়াতি সমর্থক পত্রিকা ও টিভির মালিককে। এটা একটা ষড়যন্ত্রের চেইন হিসেবে কাজ করে। তারা বেছে নেন ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্যের সমর্থিত হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের সাংবাদিক সম্মেলনকে। সম্মেলনের তারিখটি আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল।

নির্ধারিত সময়ে শ্যামল চক্রবর্তী দর্শকদের আসনে বসেন। সাংবাদিক সম্মেলনে পরিষদের নেতৃবৃন্দ লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। সেই বক্তব্য সাংবাদিকদের মধ্যে ছাপা করে বিলিও করেন। সেখানে তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। এবং নির্যাতন বন্ধে কয়েকটি দাবী তুলে ধরেন। সেখানে গরু জবেহ বা অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে কোনো কথা হয় নি। বা এটা তাদের কোনো এজেন্ডাও ছিল না।

ভারতীয় পত্রিকার সাংবাদিক গরু জবেহ নিষিদ্ধ করা বিষয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে তারা কি ভাবছেন? তারা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা আলোচনা উত্থাপন করতে রাজী হন না। তখন দর্শকদের সারি থেকে উঠে এসে শ্যামল চক্রবর্তী মঞ্চের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তিনি যে কথাগুলো বলেন, সে সব কথা পিনাকি ভট্টাচার্য নানা সময়ে বলে আসছেন। বঙ্গবন্ধুকে তিনি জাতির পিতা হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাহাড়িদের জাতির পিতা নন। তিনি রমনা কালীবাড়ি ভেঙ্গে দেন। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও এরশাদকে মৃদু সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়াকে খালেদা বেগম নামে অভিহিত করেন। আর শেখ হাসিনাকে শ্রীমতি শেখ হাসিনা সম্বোধন করে নানা কটূক্তি করেন। এক পর্যায়ে তিনি দাবী করেন, বাংলাদেশে গরু জবেহ নিষিদ্ধ করতে হবে।

এ সময়ে তাকে উন্মাদের মত দেখাচ্ছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একজন শ্রোতা আমাকে বলেন। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, গরু জবেহ নিষিদ্ধের দাবিটি তাদের নয়। এ বক্তব্যের সঙ্গে তারা একমত নন। এটা শ্যামল চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত মত। তার সঙ্গে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। পরিষদের বক্তব্য লিখিত আকারেই তারা সাংবাদিকদেরকে দিয়েছেন।

গতকাল থেকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও চিত্র ইউটিউবে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে শ্যামল ভট্টাচার্য স্টেজে নেই। যখন তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তিনি ডানদিকে একজন নেতাকে সরিয়ে চেপেচুপে বসে উন্মাদ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। কথা বলা শেষ হলে আবার দর্শক সারিতে চলে যান। তাকে স্টেজে দেখা যায় না।

টাইম-টিভি নামে যে প্রতিষ্ঠানটি সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও চিত্রটি প্রচার করেছে, ইউটিউবে আপলোড করেছে--সেই টাইম-টিভি'র মালিক জামায়াতে ইসলামীর লোক। তিনি ইকনা Islamic Circle of North America (ICNA) ও মুনা Muslim Ummah of North America নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। এই ইকনা ও মুনা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করে বলে অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের গণজাগরণ মঞ্চ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মানব বন্ধনও করেছে গেল বছর। এই টাইম টিভি-র ফুটেজটি মনিরুল হায়দার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের একজন সাবেক নেতা তৈরি করেন। ভিডিও ফুটেজে সংবাদ সম্মেলনের সম্পূর্ণ সময়টা দেখানো হয়নি। সেখানে 'শ্যামল চক্রবর্তীর অডিয়েন্স থেকে উঠে আসা, মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে কথা বলা, স্টেজ থেকে চলে যাওয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের নেতাদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করে বলা যে, শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্যের সঙ্গে ঐক্য পরিষদ একমত নয়; ওটা তার নিজস্ব বক্তব্য'--এই বিষয়গুলো মুছে দিয়ে টাইম-টিভি সুকৌশলে উস্কানিমুলক কাজে ব্যবহার করা যায় এমন অংশবিশেষ এডিট করে--ম্যানিপুলেট করে প্রচার করছে। মনিরুল হায়দার ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তিনি অতি সম্প্রতি আমেরিকাতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে মানব জমিন পত্রিকায় খবরটি অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপর পিনাকি ভট্টাচার্য ফেসবুকে এই খবরের বরাত দিয়ে ব্যক্তি শ্যামলের বদলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের নামে চাপিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে উস্কানি দেন যাতে উগ্র জঙ্গি মুসলমানরা উত্তেজিত হয়ে হিন্দুদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে; যাতে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে; যার সুযোগ নিতে পারে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের জঙ্গি শাখাগুলো।

কিন্তু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের দুই অংশের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে মানব জমিনের এই উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট খবরের প্রতিবাদ করা হয়। পিনাকি ভট্টাচার্য বা মানব জমিন এ সকল প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু ফেসবুক, দৈনিক ইত্তেফাক সহ বেশ কিছু পত্রিকায় দৈনিক মানব জমিনের খবরের প্রতিবাদ প্রকাশিত হলে পিনাকি চুপ করে যায়। কিন্তু আজ আবার ইউটিউবের দোহাই দিয়ে পিনাকি ভট্টাচার্য নতুন করে উস্কানি দিতে শুরু করেছেন। বলছেন, নিউ ইয়র্কের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদ গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবী করেনি বলে যে প্রতিবাদ পত্র দিয়েছে, তা মিথ্যা।

নিউ ইয়র্কের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-ঐক্য-পরিষদের অন্যতম নেতা শিতাংশু গুহ লিখিতভাবে ভাবে জানিয়েছেন, 'এ ধরনের (গরু জবেহ নিষিদ্ধ করার দাবী) বক্তব্য ঐক্য পরিষদ দেয়নি। এটা যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের বক্তব্য নয়। এটা প্রবাসী হিন্দুদেরও কথা নয়। আমরা মনে করি বাংলাদেশের হিন্দুদের বক্তব্যও ওটা নয়। বাংলাদেশের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সংগঠন এমন কথা বলতে পারেন না'।

এটা পিনাকী ভট্টাচার্যদের একটা জামায়াতি ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আবু মুস্তাফিজ নামে পিনাকির এক শিষ্য এবং জামায়াতিরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়েই চলেছে।

পিনাকি কিছুদিন আগে নিউ ইয়র্কের একটিভিস্ট, গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী ও অভিনেত্রী লুৎফুন নাহার লতার হিজাব বিষয়ক একটা স্ট্যাটাসকে বিকৃত করে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস লিখেছিলেন। তার ভাষা ও তথ্য চূড়ান্ত রকমের অশ্লীল, যৌন হয়রানীমূলক ও মিথ্যে। সেখানে পিনাকি দাবী করেছিলেন, 'লুৎফুন নাহার লতাকে অপহরণ করে রাজনৈতিক অস্থিরতার যেই পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে সেটা ধর্মবাদিরা করেনি; করেছিল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজের উপর তলার মানুষেরা। সেই ঘটনা বাস্তবায়িত হলে লুৎফুন নাহার লতার জীবনাশঙ্কা ছিল। সেই ভয়ানক ঘটনার চাইতে কয়জন তরুণীর হিজাব পরিধান কেন তাঁর আতঙ্কের কারণ হল সেটা আমি বুঝতে পারিনি'।

লুৎফুন নাহার লতা জানান, ১৯৯৬ সালে লতা আব্দুর রহমান বিশ্বাসের আমলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসিমসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে আটক করে ফাঁসি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়। সে ষড়যন্ত্র রুখতে প্রেসক্লাবের সামনে তিনি প্রতিবাদী অবস্থান ধর্মঘট করেন। সেখানে পিনাকি কথিত 'আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বা সেক্যুলার বা অন্য কেউ' তাকে অপহরণ করেনি। বা অপহরণ করার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এটা পিনাকি ভট্টাচার্যের বানানো খবর। পিনাকি ভট্টাচার্য লুৎফুন নাহার লতাকে বিপদে ফেলতেই এই ধরনের ভুয়া ঘটনা বানিয়ে ফেসবুকে দিয়েছেন। লুৎফুন নাহার লতা যাতে দেশে যেতে না পারেন বা দেশে গেলে তার যাতে জীবন বিপন্ন হয় সে ব্যবস্থাই করেছিলেন।

কুলদা রায় : সাহিত্যিক।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত