সৈকত ভৌমিক

১০ এপ্রিল, ২০১৬ ১৩:২৭

হেফাজতে ওলামা লীগ ও বাংলাদেশ

যখন হেফাজতের উত্থান ঘটছিলো আর এপ্রিলে ঢাকা আসার কর্মসূচি দিলো তখন আওয়ামীলীগের ভেতরের একটা অংশই নিজেদের চট্টগ্রামের বাসিন্দা বা রাজনীতিবিদ হওয়ার ক্ষমতা জাহির করার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বুঝ দিয়েছিলো " ব্যাপার না, এভরিথিংক ইজ আন্ডার কন্ট্রোল, ঢাকা আসবে ও এরপরে সমাবেশ শেষ করে চলে যাবে।"

কিন্তু তখনো বুঝে নি কি নিয়ে তারা খেলছে।

হেফাজত এলো, দেখলো ও  চোখ রাঙানো দিয়ে দিয়ে বলে গেলো তাদের দেশব্যাপী সমাবেশ ও ৬ ই মের মহাসমাবেশের কথা।

আওয়ামীলীগের সেই নেতারা আবার সবাইরে বুঝ দিলেন যে ওরা আসলে আসবে না কিন্তু এক্সিট রুটের জন্যে এমনটা বলেছে।

কিন্তু ততদিনে মিডিয়ার চাকচিক্য আর টাকার ঝকঝকানিতে তাদের চোখে মুখে বিশাল স্বপ্ন বাসা বাধে। বহুদিন পরে বিএনপিও দেখতে পেয়েছিলো প্রাণ তাদের মাঝে আর তাতেই তারা টাকা ঢালা শুরু করলো যার সাথে যোগ দিলো টালমাটাল এরশাদেরও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কারণ উনার অন্যতম সিপাহিও কিন্তু ওই এলাকার এমপি।

ক্ষমতা জাহির করতে যাওয়া নেতৃবৃন্দ বড় হুজুরের হাতে পায়ে ধরে অনেক চেষ্টা করলো থামাবার কিন্তু ততদিনে পাশা পালটে গেছে।

ক্ষমতা জাহিরে অক্ষম নেতারা বিষধর সাপ নিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন আর ধর্ম নামক রাজনৈতিক হারিকেনটা ধরিয়ে দিয়ে গেলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে যার পরিণতিও ছিলো ভয়ানক।

পটিয়া মাদ্রাসা বাদে বাকি সকল স্থান থেকে হেফাজত পরের বারও এলো আর চালালো তাণ্ডবলীলা ও সেই সাথে তাদের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবেই লাগাতার কর্মসূচী ও দিলো।

এর পরের কাহিনী তো সকলেরই জানা। রাতের আধারে পলায়ন,বাবুনগরীর ধর্মমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন স্বীকার করা,শফি হুজুরকে হেলিকপ্টার যোগে আস্তানাতে প্রেরণ,জায়গা জমি ইত্যাদি ইত্যাদি সহ আরো কিছু আপোষী মেকানিজম।

কিন্তু ক্ষমতার লোভ ছাড়া কি এতোই সোজা?  যার কারণে এখনো শফি হুজুরদের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়, বাবুর হত্যাকারী হাটহাজারী থেকে এসেছিলো বলে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া সহ তাদের বিভিন্ন রকমের হুমকি বার্তাও দেখতে হয়।

হেফাজতকে মাঠে থেকে উঠিয়ে দেয়া গেলেও রাজনৈতিক ভাবে জামায়াতকে প্রতিহত করতে আওয়ামীলীগের যেখানে উচিত ছিলো একটা প্রগতিশীল ধারা তৈরি করা ও সারা দেশে সকলকে সাথে নিয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া কিন্তু তা না করে দেখা যায় এক শ্রেণীর নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে ও উপস্থিতিতে একটা নতুন ব্যানার যার নাম হলো " বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ "

ওলামা লীগের কর্মকাণ্ডে দেখা হয়েছে কম বেশী সবারই যে কারণে সবাই জামায়াতের অনুপস্থিতি আর টের পাচ্ছে না। চাকুরী ক্ষেত্র থেকে সনাতনীদের অপসারণ চায়, অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল,বিজাতীয় সংস্কৃতির নামে নববর্ষ পালন করা বন্ধ করা সহ আরো অনেক কিছুই তাদের দাবিদাওয়াতে আছে।

বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন ও বলেছিলেন " এই বাংলাদেশ সবার।  সংবিধানের চার মূলনীতির একটি ছিলো " ধর্ম নিরপেক্ষতা " অথচ আজ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের ব্যানারের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ধর্মব্যবসা করছে যার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে দলের ভেতরে থাকা একটি অংশই। পরিস্থিতি এমনই যে তারা তো ৯ ই এপ্রিল ২০১৬ তে বলেই ফেলেছেন বাংলাদেশ হলো ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশ যার পরিসংখ্যান ৭১ এর সময় থেকেও খারাপ।

এই নেতারা হয়তো ভাবছে ওলামা লীগ দিয়ে তারা ভোটের বাজারে সুবিধা করতে পারবে যার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো একবার বলেই ফেলেছিলেন " মদিনা সনদের ভিত্তিতে" দেশ চালানোর কথা।

খেলাফতে মজলিসের সাথে মরহুম আব্দুল জলিলের সেই চুক্তিখানা করার পরে তা বাতিল হয় যে প্রেসিডিয়াম বৈঠকে তার পূর্বে কবীর চৌধুরী স্যারের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সবাই জান বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন আর নেত্রী তখন বলেন " ধর্ম নিয়ে তো বাংলাদেশে রাজনীতিই হয় কিন্তু আওয়ামীলীগকে সেটার দায় চুকাতে হয় কারণ জামায়াত বিএনপি যখন প্রকাশ্যে মাঠে নামে তখন আপনাদের কাউকে আর দেখা যায় না। এই চুক্তি আমিও মানি না আর তাই আজকের এই প্রেসিডিয়াম বৈঠক এটা বাতিলের জন্যে " চুক্তি বাতিল হয়েছিলো।

জিয়ার আমল থেকে ওয়াজের নামে যেসকল বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু হয়েছিলো জামায়াতের মাধ্যমে তার ফলাফলে বর্তমান বাস্তবতাতে এটা বিশ্বাস করা খুবই কষ্ট যে এই ধর্মব্যবসায়ীরা কখনো নৌকাতে ভোট দিবে।

ওলামা লীগের অনুষ্ঠানে দেখা যায় বড় বড় নেতাদের।  কেনো?

তবে কি তারা আবার আগের মতন নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে চাচ্ছে ভুল তরিকাতে?

কারা এই ওলামা লীগ?  সংগঠন হিসেবে রাস্তাতে নামার আগে কি ছিলো এই ব্যক্তিদের পরিচয়। জামায়াত থেকে যে আসেনাই বা মুফতি হান্নানের বংশের কেউ যে নেই তার প্রমাণ কি?  

এর ফলাফলও কিন্তু খুব বাজেই হবে যার জন্যে অস্তিত্ব সংকটের মুখে ও পড়তে হতে পারে আওয়ামীলীগকে।

আওয়ামীলীগকে বললে কিছুটা আপত্তিজনক হবে কারণ বিপদের সময় সবাই আবারো সামনে ঠেলে দিবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আর ক্ষতির দায় চাপিয়ে দেয়া হবে উনার ঘাড়েই।

আহমেদ ছফা বলেছিলেন "আওয়ামী লীগ জিতলে একা জিতে, আর হারলে সবাই হারে" কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাতে আসলেই কিছু নেতার পোয়াবারো সময় চলে আসে যদিও তাদের দেখা যায় না বিরোধী দলে থাকাকালীন কোন কর্মসূচীতে ।

আর এই কিছু জন নেতার কারণেই জিম্মি সারা বাংলাদেশ, তার উপরে মরার উপরে খাড়ার ঘা হলো এই ওলামা লীগ যারা সময় আসলে পড়ে সেই বিশেষ কিছু জন ব্যক্তি কে নিয়ে চাপাতিখানা তাক করবে খোদ প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়েই।

ধর্ম ব্যবসায়ীরা কখনোই কারো মিত্র হতে পারে না।উদাহরণ হিসেবে চোখের সামনে বিএনপিকেই দেখা যেতে পারে যা আজ জামায়াতে বিলীন হয়ে গেছে।
তবে ওলামা লীগের উত্থানে আওয়ামীলীগ নিয়েও স্বস্তির কিছু আছে বলে মনে করছি না।

একদিকে যখন চাপাতির ঝনঝনানির শব্দ ঠিক অন্যদিকে ওলামা লীগের আস্ফালন কিন্তু এক কাতারেই ফেলে দিচ্ছে।

আওয়ামীলীগের কেউ যদি বিশ্বাস করে যে এই হেফাজতে ওলামা লীগ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতাতে থাকতে বা ভোটের বাজারে সাহায্য করবে তবে তা কিন্তু দিবাস্বপ্ন দেখার মতনই হয়ে যায়।

ওলামা লীগের পৃষ্ঠপোষকতাকারীরা কখনোই আওয়ামীলীগের বন্ধু হতে পারে না আর খুব দ্রুত এদের খুঁজে বের করা উচিত নতুবা এরা আবার নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে জন্ম দিবে শাপলা চত্বরের মতন ঘটনার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধর্মান্ধদের আস্ফালনের ব্যাপারে আপনার ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নীরবতা আমাদের মতন সাধারণ নাগরিকদের অসহায় করে তোলে। আর উন্নয়নের সূচকে প্রাপ্তির ফল শূন্য হয়ে দাঁড়াবে যদি এদের বিরুদ্ধে এখনই এখনই কোন পদক্ষেপ না নেয়া হয় তো।

জিডিপি, উন্নয়ন সাদ্দামের আমলে ইরাকের, গাদ্দাফির আমলে লিবিয়ায়, এমনকি ৫০-৬০ এর দশকে আফগানিস্তানে  আমাদের চাইতে অনেকগুনে বেশি হইছে। কিন্তু ধরে রাখতে পারে নাই। কারণ ধর্মান্ধতা থেকে জাতিকে বের করতে তারা আগ্রহী ছিল না। এই এই জিডিপি, উন্নয়ন সাময়িক সময়ের জন্য কাজে আসবে হয়তো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে মুখ থুবরে পড়বে।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত