শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী

০৮ জুলাই, ২০১৬ ০২:৩৩

যুবকদের কর্মসংস্থানে সমবায়

যুবক সম্প্রদায় হলো দেশের প্রাণ। এদের মধ্যে তারুণ্য উদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্য বেশী। এরাই পারে দেশের অর্থনীতি সহ ও রাষ্ট্রীয় যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ অভিভাবকদের ভিতরে একটা জিনিস কাজ করে যে তাদের সন্তানদের চাকচিক্য আর মধ্য দিয়ে বড় করা। আসলে এটা একটা ভুল রাস্তা।

সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে যে দুর্ঘটনা ঘটলো এতে দেখা যায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীরা সবাই তরুণ। কেন এরা ভুল পথে গেলো? আমরা কি তা বুঝতে পেরেছি। হাঁ কিছুটা বুঝতে পেরেছি। এই সব ছেলেদের মনে ছিল উগ্র চিন্তা, কোন ধরনের মেধার উৎকর্ষতা ছিল না, ছিল হতাশার ছাপ। কোন ধরণের ভিশন বা লক্ষ্য ছিল না, বাবা মায়ের উদাসীনতা এবার তাদের ছেলেদের সুস্থ চিন্তা ধারায় বড় করার কোন ধরনের চিন্তা ছিল না বলে তাদের মগজ ধোলাই দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এদেরকে বানিয়ে ফেলেছে সন্ত্রাসী।

আমাদের দেশের সাম্প্রতিক সময়ে এস এস সি বা এইচ এসসি পাশ জিপিএ ৫ পাওয়া ছেলে মেয়েরা দেখা গেছে বেশীরভাগ ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না, মেধার উৎকর্ষতার বিকাশ প্রস্ফুটিত করতে পারে না ভালভাবে কর্মক্ষেত্রে । কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের আকুল আবেদনটি এই সব ছেলেমেয়ের অভিভাবক বা প্রতিষ্ঠানের কাছে যে ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে অথবা কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি করে তাদের স্বাবলম্বী ও আত্মকর্মনির্ভরশীল করার জন্য।

আমার একটাই মতামত হলো সেটি হলো আপনার সন্তানকে চাকচিক্য এর মধ্য দিয়ে বড় না করে তার নিজ হাত ও কলম দ্বারা আত্মপ্রত্যয়ী, ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তোলেন ।

সমবায় অধিদপ্তর বা সমবায় সমিতি কি করে যুবকদের আত্মপ্রত্যয়ী করবে ও স্বাবলম্বী করবে এর বিস্তারিত আলাপ হলো যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এর অধিভুক্ত সমবায় অধিদপ্তর এর অধীনে ২৯টি ক্যাটাগরিতে প্রত্যেক জেলা সমবায় কার্যালয়ে হতে সমবায় সমিতি নিবন্ধন করা হয়। তার মধ্যে একটি ক্যাটাগরি হলো যুব সমবায় সমিতি। এই যুব সমবায় সমিতি ১৮ থেকে ২৫ বছরের যুবকরা তাদের নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে ও দেশ মাতৃকার কল্যাণে ও সমাজের জনহিত কর কাজের জন্য ও আর্থিক বা সামাজিক ভাবে কর্মউদ্যোগী হবার জন্য নিজের এলাকা বা গ্রামে ২০ জন যুবক ও যুবতী নিয়ে যুব সমবায় সমিতি গঠন করতে পারে।

এই সব যুবকরা নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জমা করে মূলধন গঠন করে বিভিন্ন কর্ম উদ্দীপনা মূলক কাজে যোগ দিয়ে আত্ম প্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে ওঠবে বলে আশাবাদী সেই আত্মপ্রত্যয়ী কাজ গুলো হলো যেমন: সেলুন, বিউটি পার্লার, হাঁস মুরগী খামার, গরু মোটা তাজা কারণ প্রকল্প,কোয়েল পাখি,মাশরুম চাষ সহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড তেমনি আমাদের সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও নিবন্ধক মো. মফিজুল ইসলাম মহোদয় অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত সমবায় অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করেছেন। তার এই ঢেলে সাজানোর ফলে হায় হায় সমবায় সমিতি গুলোর দৌরাত্ম্য কমে গেছে, তার এই আন্তরিক কর্মকাণ্ডের ফলে টেকসই সমবায় সমিতি গঠন, নিবন্ধন সহজীকরণ সহ সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের ব্রান্ডিং ও বাজারজাতকরণ, এছাড়া ও বাংলাদেশের প্রায় ০৮টি আঞ্চলিক সমবায় ইন্সটিটিউট এর রাজস্ব বাজেটের অর্থায়নে সরকারী খরচে ব্লক বাটিক সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্স, মৌমাছি চাষ, সহ অন্যান্য ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সমবায় একাডেমী (বার্ড) কুমিল্লায় উদ্দীপনা মূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করানো হচ্ছে সরকারী খরচে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যুবকদের সরকারী খরচে, এছাড়া ও বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক হতে প্রকল্প ঋণের অধীনে বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে যুবকদের মাঝে । তেমনিভাবে সিলেট অঞ্চলের সমবায় বিভাগ এর যুগ্ম নিবন্ধক ও মেন্টর মো. খোরশেদ আলম এর নেতৃত্বে সিলেট বিভাগের ৩৮টি উপজেলার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের মাধ্যমে সমবায় সমিতি এর মাধ্যমে যুবকদের আত্ম প্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পতিত জমি আবাদ বা চাষযোগ্য করার জন্য গৃহীত প্রকল্প, আলোকিত গ্রাম প্রতিষ্ঠা সহ সমবায় সমিতি মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ব্র্যান্ডিংও বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ও বাস্তবায়নের পথে কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য, আপনি কিভাবে এই সব তথ্য পাবেন প্রথমত: সমবায় অধিদপ্তরের এর ওয়েব সাইট এ www.coop.gov.bd এর মাধ্যমে ওয়েব পোর্টালে বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়গুলো ও জেলা সমবায় কার্যালয় বা উপজেলা সমবায় কার্যালয় ও আঞ্চলিক সমবায় ইন্সটিটিউট এর গুলি তথ্য সহ বাংলাদেশ সমবায় একাডেমী (বার্ড) এর তথ্য যে কোন নাগরিক সেবায় সমস্যা বা বিভ্রান্তি হলে আপনি আমাদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া বা ফেসবুকে যোগাযোগ করতে পারবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, আসুন আমরাই পারি- একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে যুবকদের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করার প্রয়াস। আমাদের যুবকরা যাতে- চাকচিক্য পরিহার করে তারুণ্যকে বিকৃত না করে সমবায়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে পারি যুবকদের এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

সমবায় অধিদপ্তর যুবকদের আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে কোন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য যে, এই সব যুবকরা আমাদের ভাই বা বোন তাদেরকে বখাটে বা যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক যে কোন কাজ থেকে বিরত রাখতে আমাদেরকে কাজ করতে হবে উদ্দীপনা নিয়ে তাদেরকে বিকৃত মানসিকতা পরিহার করে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্ম উদ্যোগ নিতে হবে আজই সমবায় অধিদপ্তর এর মাধ্যমে।

আসুন সবাই ভালো থাকি, সুস্থ চিন্তা বা ভালো মতাদর্শের আদর্শে বলীয়ান হয়ে যুবকদের আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তুলি সমবায়ের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে।

শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী : সহকারী পরিদর্শক,উপজেলা সমবায় কার্যালয়, বিশ্বনাথ, সিলেট।
ই-মেইল: [email protected]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত