হাসান মোরশেদ

২৭ মার্চ, ২০১৫ ১৩:৪১

অভিজিৎ রায় ও সংস্কৃতির পারফরমারগণ

ক্রিকেটের 'অমানবিক' আনন্দ শেষে বিকেলবেলা আমরা বের হচ্ছিলাম বাচ্চাদের নিয়ে শহীদ মিনারে যাবো বলে। আমার বাসা থেকে শহীদ মিনারে বাজানো গানগুলো শুনা যায়, রাস্তা দিয়ে যাওয়া আনন্দ উল্লাসগুলো আটতলার উপর থেকে টের পাই আমরা। বাসায় অতিথি ছিলেন শাশুড়ি আম্মা। বয়স এবং অসুখ বিসুখে একেবারেই বিপর্যস্ত থাকেন। আমরা বের হচ্ছি দেখে জিজ্ঞেস করলেন - 'আজকে কিতা?' বললাম - '২৬ শে মার্চ '
- অ, দেশ স্বাধীন অইছিল নি?
-জ্বিনা যুদ্ধ আরম্ভ অইছিল
- তে অতো ফুর্তি কেনে? যুদ্ধ বড় কষ্টের আছিল

ভদ্রমহিলার স্বামী তখন যুদ্ধে চলে গেছেন। বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে রাজাকারেরা। চার সন্তান সহ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই বাড়ি থেকে ঐ বাড়ি, ঐ গ্রাম থেকে সেই গ্রাম। পুষ্টির অভাবে সদ্যোজাত শিশুটি মারা গেছে শেষ পর্যন্ত। যুদ্ধ শুরুর দিন তাই তার কাছে কষ্টের স্মৃতি মাত্র।

শহীদ মিনারে আসি। আসি একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। বেদীতে ফুল, মঞ্চে গান, নাচ, আবৃত্তি। টিভি ক্যামেরা,মোবাইল ক্যামেরা। সেলফি, গ্রুপ ছবি। মানুষের ঝলমলে প্রায় নতুন পোষাক আশাক। উৎসবের আমেজ। পারফর্মিং আর্টস। মিনারে আগত সকলেই পারফর্মার।

অভিজিৎকে খুঁজি, নেই। বাংলাদেশের কোথাও কী কাল কোন আয়োজনে অভিজিৎ ছিলো? অভিজিৎ নাস্তিক ছিলো, খুন করা হয়েছে। আমরা নাস্তিক নই- আপ্তবাক্য আউরাই পারফর্মাররা। তাতে কিন্তু নাস্তিক অভিজিৎ খুনের রাজনীতিটা পিছিয়ে থাকেনা। সেই রাজনীতি নাস্তিকদের খুন করে তারপর এগুয়, এগিয়ে আসবে আস্তিকদের দিকে যারা ঐ রাজনীতির জন্য ন্যুনতম হুমকি।

পারফরমাররা মঞ্চের আলো আর উদ্ভাসে ঘোর লাগা লাটিম। তারা টের পায়না- এই পারফর্মিং আর্ট, এই শুধু শুধু দেশাত্মবোধক গান, গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে আবৃত্তি, লাল সুবজের নতুন পোষাক, শহীদ মিনারের সামনে সেলফি- এসব ও কিন্তু থাকবেনা। নাই হয়ে যাবে ঐ রাজনীতিটাকে প্রতিরোধ না করলে।



-ফেসবুক পোষ্ট থেকে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত