মাহবুবুর রউফ নয়ন

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৭:০২

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি প্রসঙ্গে

বিশ্বের ২য় বৃহত্তম ও দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। “সকল জ্ঞানীর উপর আছেন এক মহাজ্ঞানী” এই স্লোগানকে ধারণ করে গাজীপুরে ১৯৯২ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৩৫ টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। এ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সকল কলেজে অনার্স ১ম বর্ষ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে প্রায় ৩.৫ লক্ষ শিক্ষার্থী। তবে আসন সংকট থাকার কারণে ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য কলেজে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

ভর্তি ফরম বিতরণ:
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ অনার্স শ্রেণীর ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে যা চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে এবং পরবর্তীতে তা আবার সংশ্লিষ্ট কলেজে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে অবশ্যই জমা দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিম্নে দেওয়া হলো-
আবেদন করার যোগ্যতা:  
যে সকল ছাত্র/ছাত্রী ২০১৩/১৪ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০১৫-১৬ সালের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, কেবলমাত্র তারাই আবেদন করতে পারবে। আবেদনকারী অবশ্যই এসএসসি বা সমমানের এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রতিটিতে ন্যুনতম জিপিএ ২.০০ সহ সর্বমোট জিপিএ ৫.০ থাকতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী ৩১/১২/২০১৬ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর বয়স ২২ বছরের অধিক হবে না। আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা যে বিভাগ থেকে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাকে সেই বিভাগের ফরম নিতে হবে।

অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম:
অনলাইনে আবেদন করার জন্য (www.nu.edu.bd/admission) এই ওয়েব সাইট ওপেন করতে হবে। এরপর সঠিকভাবে তথ্য পূরণ করার পর পরীক্ষার্থীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করতে হবে। ছবির মাপ হবে ১২০+১৫০ পিক্সেল। আবেদনকারীকে ছবিসহ পূরণকৃত ফরমটি প্রিন্ট করে ২৫০ টাকা আবেদন ফি আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কলেজে জমা দিতে হবে। আবেদনকারী ওয়েব সাইটের তথ্য ছকে কলেজ ও উক্ত কলেজের অনার্স বিষয়গুলো দেখতে পাবে। উক্ত ছক থেকে শিক্ষার্থী  ১ থেকে ১৫ বিষয় ভর্তির জন্য চয়েজ দিতে পারবে।

ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল:
গত বছরের ন্যায় এবারও কোন ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। জিপিএর ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদা আলাদা মেধা তালিকা করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের পছন্দের উর্ধ্বক্রম অনুসারে বিষয় বরাদ্দ দেওয়া হবে। ভর্তির ফলাফল পর্যায়ক্রমে ১ম মেধা তালিকা, শূন্য থাকা সাপেক্ষে ২য় মেধা তালিকা, কোটা (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আদিবাসি, প্রতিবন্ধি ও পোষ্য) ও সবশেষে রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

ভর্তি কার্যক্রমে মেধাক্রম প্রণয়ন পদ্ধতি:

কোটায় ভর্তি:- মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/ আদিবাসি/ প্রতিবন্ধী / পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। কলেজ ভিত্তিক আসন বণ্টন হল নিম্নরূপ:- মুক্তিযোদ্ধার সন্তান = ১৫টি, আদিবাসি = ৭টি, প্রতিবন্ধী = ৩টি। 
কোটায় আবেদন করার শর্ত:  সংশ্লিষ্ট কোটার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত মূল সনদপত্র থাকতে হবে।

নির্বাচিত বিষয় সমূহে ভর্তির যোগ্যতা:
বিজ্ঞান শাখা:
উচ্চমাধ্যমিকে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের অনার্সের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হওয়ার কোন সুযোগ নাই। বিষয় সমূহ হল ঃ- পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, পরিসংখ্যান, গণিত ও অন্যান্য।

মানবিক শাখা:
যেসকল শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে মানবিক শাখায় সম্পন্ন করেছে তাদের জন্য আসন খালি আছে ৯০%। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য ৫% + ৫%। বিষয় সমূহ হল ঃ- ইংরেজি, বাংলা, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সমাজকর্ম, সমাজ বিজ্ঞান, লাইব্রেরী সাইন্স ও অন্যান্য।

ব্যবসায় প্রশাসন শাখা:
যেসকল শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় সম্পন্ন করেছে তাদের জন্য আসন বরাদ্দ ৯০%। মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীর জন্য ৫% + ৫%। বিষয় সমূহ হলো- হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, মার্কেটিং ও অন্যান্য। কলেজ পছন্দের চেয়ে নিজের পছন্দের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৩৫টি বিষয় আছে সেখান থেকে পছন্দমত বিষয় নিয়ে পড়া যাবে। তাই যুগোপযোগী  বিষয় পছন্দ করে কলেজ নির্বাচন করাই হবে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হবে না।
ক্লাস শুরু:- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে ১৫সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইং। যার ফলে অতীতের তুলনায় সেশন জট হ্রাস পাবে।

ভর্তি ফি:  
শিক্ষার্থী প্রতি ভর্তি ফি বাবদ মোট = ৪৮৫/- টাকা (বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ)

ভর্তি বাতিল ফি:
শিক্ষার্থী প্রতি ভর্তি বাতিল ফি বাবদ = ৭০০/- টাকা।

আমার জানামতে, সিলেট বিভাগের ৩২টি কলেজে অনার্সের কোর্স চালু আছে। তবে সিলেট মহানগরের নিম্নোক্ত ৪টি কলেজে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অনার্সে ভর্তি হতে পারবে।

এম.সি কলেজ
নগরীর টিলাগড়ে অবস্থিত সিলেট এমসি কলেজে  অনার্স পড়ানো হয় ১৫টি বিষয়। এগুলো হচ্ছে- ইংরেজি, বাংলা, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সত্য বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজ কল্যাণ, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পরিসংখ্যান, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যাও মনোবিজ্ঞান। কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক হোস্টেল সুবিধা রয়েছে।

সরকারি মহিলা কলেজ
নগরীর চৌহাট্টায় অবস্থিত সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স পড়ানো হয় ৮টি বিষয়ে। এগুলো হচ্ছে-ইংরেজি, বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজকর্ম ও অর্থনীতি। কলেজে ছাত্রীদের জন্য মহিলা হোস্টেল সুবিধা রয়েছে।

মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ
নগরীর শামীমাবাদে অবস্থিত মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে অনার্সের কোর্স চালু আছে ৫টি বিষয়ে। এগুলো হচ্ছে-ইংরেজি, বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান। আরো ৩টি অনার্স কোর্স (অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রক্রিয়াধীন)। কলেজের অভ্যন্তরে ছাত্রীদের জন্য মহিলা হোস্টেল সুবিধা রয়েছে।

মদন মোহন কলেজ
নগরীর লামাবাজারে অবস্থিত মদন মোহন কলেজে অনার্সের কোর্স চালু আছে ৬টি বিষয়ে। এগুলো হচ্ছে হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, বাংলা, দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।

এছাড়া নগরীর জিন্দাবাজারে অবস্থিত শাহপরান ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিবিএ (প্রফেশনাল) কোর্স চালু রয়েছে।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অতীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা ছিল দীর্ঘ মেয়াদি সেশন জট। লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবী ছিল সেশন জট মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাই বর্তমান ভিসি মহোদয় অধ্যাপক  ডঃ হারুন-উর রশিদ স্যারের  যুগোপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আজ সম্পূর্ণ সেশন জট মুক্ত ও অনলাইন ভুক্ত। এরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আরো এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা হউক সকলের।

লেখক : প্রভাষক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত