শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার

১৯ মে, ২০১৫ ০০:১৫

একুশ আর উনিশ: ভিন্ন তারিখ,অভিন্ন উত্তরাধিকার

ভূমিকা
আমি আমাদের দেশের ভাষাসংগ্রামের ভূমি আসামের বরাক উপত্যকার সন্তান। এই সংগ্রামের সূত্রে ১৯ মে তারিখটি এখন আসামের বরাক উপত্যকার বাইরেও ভাষাপ্রেমী মানুষের কাছে ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বরাক উপত্যকার ভাষা সংগ্রামে প্রথম জীবনদানের ঘটনাটি ঘটে ১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে।

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে সারা পৃথিবীর বঙ্গভাষী মানুষ যখন তাঁর কবিগুরুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে, তখন বরাক উপত্যকার শিলচর শহরে এগারোজন তরুণতরুণী পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করল কবিগুরুর ভাষায়, তাঁদের নিজের মাতৃভাষায় জীবনসাধার অধিকার পাওয়ার জন্যে। বরাক উপত্যকার ভাষাসংগ্রাম একটি বহমান ইতিহাস। ১৯৬১ সালের ১৯ মে’র পর এই ভাষাসংগ্রাম এগিয়ে গেছে ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট, ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই ও ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চের রক্তদানের মধ্যদিয়ে।

উনিশের প্রেক্ষাপট
১৮২৬ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন আসামকে যুক্ত করা হয় বঙ্গদেশের সাথে। একই প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীন থাকায় বঙ্গদেশে সরকারি কাজে বাংলা ভাষা চালু হলে আসামেও তা কার্যকর করা হয়। ১৮৩৪ সাল থেকে বাংলা ভাষাকে আসামের শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে চালু করা হয়। সারা রাজ্য জুড়ে গড়ে উঠল অসংখ্য বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়।

ঔপনিবেশিক প্রশাসনে করণিক ইত্যাদি  চাকরিতে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে দলে দলে ইংরাজি শিক্ষিত বাঙালিরা এসে হাজির হলেন আসামের নানাপ্রান্তে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল সদ্যজাত অসমীয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির মনে। একদিকে সরকারি কাজ ও শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলা, অন্যদিকে করণিকের চাকরিতে হাজার হাজার বঙ্গভাষী মানুষের নিয়োগ, তারা ভাবলেন এই বঙ্গীকরণের মধ্যদিয়ে হারিয়ে যাবে তাদের মাতৃভাষা অসমীয়া ও তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি। তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৮৭৪ সালে বাংলা ভাষা প্রত্যাহৃত হল। কিন্তু আতঙ্ক রয়েই গেল।

নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি গ্রাস হয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই জন্ম নিল মধ্যবিত্ত সমাজে বাঙালি বিদ্বেষ। আরো স্পষ্ট ভাবে বললে, এই বাঙালি বিদ্বেষ লালন করার মধ্য দিয়েই আসামে অসমীয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণি আত্মপ্রকাশ করল। ঔপনিবেশিক প্রশাসনের সাথে সাধারণ অসমীয়া সমাজের যোগাযোগ ঘটত বঙ্গভাষী কেরানিকুলের মাধ্যমেই। ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি স্থানীয় মানুষের কিছু অংশ চালিত হত বাঙালিদের প্রতিও। এ ছাড়াও বাংলা থেকে আলাদা করে আসামকে পৃথক রাজ্য হিসাবে গঠন করা হলে আসামের রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা জন্যে ব্রিটিশ প্রশাসন যে দু’টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তা ও রাজ্যে বাঙালি বিদ্বেষের আবহে আরো নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে বঙ্গদেশের দু’টি রাজস্ব উদ্বৃত্ত অঞ্চল, সিলেট জেলা ও রংপুর জেলার গোয়ালপাড়া মহকুমাকে আসামের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। আসামের স্থানীয় মানুষ জলাজমিতে চাষ করতে জানতেন না, আর অন্যদিকে পূর্ব বাংলায় জমির ক্ষুধায় দুর্ভিক্ষপীড়িত কৃষক সমাজ অস্থির হয়ে আছে। রাজ্যের খাদ্য উৎপাদনে নতুন জোয়ার আনার জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন পূর্ব বাংলা থেকে ভূমিহীন কৃষকদের এনে বসতি দিল আসামে। আসামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পালে নতুন বাতাস লাগার আশায় প্রথম অবস্থায় অসমীয়া মধ্যবিত্ত সমাজের পুরোধারা ব্রিটিশ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানিয়েছিলেন।

আসামের খাদ্য উৎপাদন বেড়ে গেল দ্রুত গতিতে। শূণ্য থেকে শুরু করে ১৯১৯-২০ সালের মধ্যে আসামের ১,০৬,০০০ একর জমি পাটচাষের আওতায় চলে এল। কিন্তু এর অনুষঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা ভূমিহীন কৃষকের জনসংখ্যাও বাড়তে লাগল পাল্লা দিয়ে। ১৯০৪-১১ সময়সীমায় পূর্ববঙ্গীয় কৃষকের সংখ্যা ছিল ৫৪,০০০। ১৯২১-৩১ সময়সীমায় তা দাঁড়াল ৫,৭৫,০০০ এ। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার আনন্দ মুছে গেলে অসমীয়া মধ্যশ্রেণির মন থেকে, গ্রাস করল নিজদেশে পরবাসী হবার আতঙ্ক।

প্রশাসনে বাঙালিদের আধিপত্য খর্ব করা, পূর্ববঙ্গ থেকে কৃষকদের জনস্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করার জোরালো দাবি উঠল। অসমীয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির নানা সংগঠন দাবি তুলল নানা ধরনের - সবগুলিরই সাধারণ উদ্দেশ্য বাঙালিদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে অসমীয়া ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা করা। ১৯২০ সালে চালু হল ‘কুখ্যাত লাইন প্রথা’। আসামের মূলভূমিতে বহিরাগত বাঙালি কৃষকদের বাধ্য করা হল চর এলাকার বসতি স্থাপন করতে। চর এলাকার বাইরে তাদের বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ হল। যাদের হাড়ভাঙা শ্রমে আসামের বন্ধ্যা মাটির বুক চিরে সোনার ফসল ফলল, তাদের ঠেলে দেওয়া হল নদীর চরে। নদীচরের ভাঙা-গড়ার মতই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন।

পৃথিবীর ইতিহাসে বর্ণবিদ্বেষী শাসনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্ল্যাক টাউনশিপের ঘেটো ছাড়া এমন দৃষ্টান্ত আর কোথাও নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আসামের পার্থক্য এটাই - দক্ষিণ আফ্রিকার ঘেটো আন্তর্জাতিক ভাবেই বর্ণবিদ্বেষ নামে নিন্দিত ও ঘৃণিত। আসামের লাইন প্রথাকে এখনও বহু প্রগতিশীলেরা অভিহিত করেন অসমীয়া ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে। আসামের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব অম্বিকাগিরি রায় চৌধুরীও ছিলেন এই কুখ্যাত লাইন প্রথার উগ্র সমর্থক। স্বাধীনতার সময় গণভোটের মধ্যদিয়ে আসামের রাজস্ব সমৃদ্ধ জেলা সিলেট পূর্ব পাকিস্তানে চলে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন অসমীয়া জাতীয়তাবাদী নেতারা। এই ঘটনায় তারা বিজয়ের অনুভূতি পান।



সাংস্কৃতিক সমন্বয় না আধিপত্যের গোপন কর্মসূচি ?

১৯৪৭ এর স্বাধীনতা সারা দেশে সাধারণ মানুষের মনে ব্রিটিশের অধীনতা থেকে মুক্তির স্বাদ এনে দিলেও আসামের অসমীয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে তা এনে দিয়েছিল বঙ্গভাষীদের প্রভাব থেকে মুক্তির আনন্দ। পত্র পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধ, জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভাষণ, এমন  কি আসাম বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণ - সবকিছুতেই ব্রিটিশের অধীনতা থেকে মুক্তির চেয়ে বাঙালিদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার আনন্দ।

১৯৪৭ এর ২০ জুলাই আসামের প্রধান সংবাদপত্র ‘দ্য আসাম ট্রিবিউন’ লিখল -
 চিরজাগ্রত থাকার মূল্যেই মুক্তির স্বাদ পাওয়া যায়। সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক এবং ভাষিক - সমস্ত বিচারে আসামের প্রত্যেক অনসমীয়া মানুষ বিদেশি। ...... ১৮২৬ সালে ব্রিটিশ অধিগ্রহণের পর যারা ব্যবসায়িক বা অন্যকাজে আসামে এসেছে, তারা সকলেই বহিরাগত। এই বহিরাগতরা আগামী দিনের স্বাধীন আসামে কোনও বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে এমন আশা করার কোনও কারণ নেই।

প্রায় একই সময়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ এক জনসমাবেশে বলেন - নিঃসন্দেহে আসাম অসমীয়াভাষীদের রাজ্য। ১৯৪৭ সালের ৫ নভেম্বর আসাম বিধানসভার অধিবেশনে রাজ্যপাল স্যার আকবর হায়দরী বলেন-

আসামের স্থানীয় মানুষরাই এখন নিজেদের রাজ্যের প্রভু।.... এখন তারা অসমীয়া ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসার সহ তাদের সতীর্থ ট্রাইবেল জনগণের ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। বাঙালিরা চাইলেও এখন আর আসামের পাহাড় ও সমতলের মানুষের ওপর কিছু চাপাতে পারবে না, কারণ এখন তারা ক্ষমতাহীন। বাঙালিদের সম্পর্কে এমন ধারণার ভিত্তি যে ভয়, সেই ভয়ের এখন আর কোনও কারণ নেই। যতক্ষণ না এই বহিরাগতরা আমাদের প্রতি বশ্যতা প্রকাশ করছে ততক্ষণ এঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে, আমি আপনাদের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

বিরিঞ্চি কুমার বরুয়ার মত ব্যক্তিত্বও মত দিলেন,
“আসামের সমস্ত অনসমীয়া মানুষকে বিদেশি বিবেচনা করা হোক। তাঁর মতে, নিজেদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে অনসমীয়ারা যদি একমাত্র অসমীয়া ভাষা, সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেন, তবেই তারা আসামে বসবাস করার অধিকার পেতে পারেন।”

এই তথাকথিত বিদেশিদের অসমীয়াকরণই হয়ে দাঁড়াল এর পরবর্তী দশকগুলির আসামের শাসকশ্রেণির সাংস্কৃতিক রাজনীতির প্রধান নীতি। এর সূত্র ধরেই আসামের জনবিন্যাস নিজেদের স্বার্থে পরিবর্তিত করার জন্য আদম শুমারিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়ে দাঁড়াল আসামের শাসকশ্রেণির প্রধান রণকৌশল। আসামের জনসংখ্যার ভাষিক বিন্যাসে রাতারাতি ঘটে গেল প্রায় ‘অলৌকিক’ পরিবর্তন। ‘অলৌকিক’ শব্দটি ব্যবহৃত হল, কারণ সমাজ বিজ্ঞানীরা একে ‘ডেমোগ্রাফিক মিরাকল’-ই বলেছেন।

১৯৩১ এর আদম শুমারিতে আসামে অসমীয়াভাষীর অনুপাত যেখানে ছিল ৩১.৪%, মাত্র কুড়ি বছরের ব্যবধানে ১৯৫১ সালে তা বেড়ে দাঁড়াল ৫৬.৭% এ। পূর্ববঙ্গাগত বাঙালি মুসলমান কৃষকরা যারা আসামকে শস্য শ্যামলা করেছে, তারা রাতারাতি নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা ত্যাগ করে নিজেদের অসমীয়াভাষী হিসাবে পরিচয় দিতে বাধ্য হল। বলা বাহুল্য, এটি কোনও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় ঘটা সাংস্কৃতিক সমণ্বয়ের স্বাভাবিক দৃষ্টান্ত নয়। বিশুদ্ধ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতির অধিকার হরণ করে নেওয়ার জঘন্যতম উদাহরণ। এই দরিদ্র বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যালঘুত্ব নিয়ে এমনভাবে ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছিল যে, তখন এর কাছে আত্মসমর্পন করা ছাড়া কোনও গত্যন্তর ছিল না। ভাষিক আগ্রাসনের এই অভূতপূর্ব নজিরকেই আসামের অসমীয়া শাসকশ্রেণি অভিহিত করেছে ‘সাংস্কৃতিক সমন্বয়’ হিসাবে।

আসামবাসী অন্যান্য অনসমীয়া সমাজকেও তারা আহ্বান জানিয়েছে এই পথে হাঁটতে। আশ্চর্যের বিষয়, সারা পৃথিবীতে ‘সাংস্কৃতিক সমন্বয়’ বললে দ্বিমুখী সাংস্কৃতিক প্রবাহ বোঝালেও আসামের ক্ষেত্রে এই শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকেই ব্যাখ্যা করা হয়ে আসছে ‘সাংস্কৃতিক সমন্বয়’ হিসাবে। এখানে ‘সমন্বয়’ একটি একমুখী আগ্রাসী প্রবাহ।

উনিশের রাজনীতি
এবার ফিরে আসা যাক গোড়ার কথায়। ভাষা রাজনীতির এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনকে মূল্যায়ণ করা হবে কোন্ নিরিখে? বাংলাদেশে যে ভাবে ‘একুশের চেতনা’ কথাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত, একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে বরাক উপত্যকায় ‘উনিশের চেতনা’ শব্দটিকেও নানা আলোচনায় উচ্চারিত হতে শোনা যাচ্ছে। ‘উনিশের চেতনা’কে এখনও আসামের ভাষা রাজনীতির ইতিহাসের আলোয় সংজ্ঞায়িত করা হয় নি।

দায়সারাভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শব্দটিই যে ভাষার রাজনীতির আবর্তে জর্জরিত আসামে ভাষিক ঐক্যের নতুন পথ দেখাতে পারে সে সম্পর্কে ভাবার সময় এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বহুভাষিক আসামে শাসক শ্রেণি ছলে বলে প্রচেষ্টা চালিয়েছে আসামকে একভাষী হিসেবে একীকরণ করার। এর উত্তরে ষাট, সত্তর বা আশির দশকের বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের মূল অভিমুখই ছিল আসামের বহুভাষিক সত্তাকে তুলে ধরার। ফলেই ‘উনিশের চেতনা’ প্রকৃতপক্ষে বহুত্বের চেতনাই। উনিশের চেতনা একটি বহুভাষিক সামাজিক পরিসরের শরিক সমস্ত ভাষাগোষ্ঠীর নিজের ভাষা চর্চার চেতনা।

১৯৬১ সালের ১৯ মে, ১৯৭২ সালের ১৬ আগস্ট, ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই, ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ সেই সংগ্রামের নানা রক্তাক্ত দিনের নাম। বহমান সেই ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শহীদ দিবস ১৯ মে। একুশে ফেব্রুয়ারি যদি দ্বিজাতি তত্ত্বকে প্রত্যাখান করে ঘরে ফেরার দিনের নাম হয়, তবে উনিশে মে বুকের মাঝে বহুত্বময় বিশ্বের অনুরণনের দোলায়িত ছন্দের নাম। একুশ যদি ধর্মভিত্তিক জাতিতত্ত্বের প্রত্যাখান হয়, তবে উনিশ আসামের বহুভাষিক বহুসাংস্কৃতিক পরিসরে শাসকশ্রেণির উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাষানীতির বিরুদ্ধে বহুভাষিকতার নীতির, প্রত্যেকটি ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্য নাম।


[লেখক: রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক
শিলচর, আসাম, ভারত]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত