আব্দুল করিম কিম

০৩ আগস্ট, ২০১৮ ১৮:২১

বিনা লাইসেন্সে দেশ চালালে গাড়ি চালাতেও লাইসেন্স লাগে না

দেশ যখন বিনা পারমিটে বিনা লাইসেন্সে বা লাইসেন্স রিনিউ না করে চালানো যায় তখন বিনা লাইসেন্স বা লাইসেন্স রিনিউ না করে গাড়ি চালানো খুব হালকা বিষয় হয়ে যায়। কী ধরনের হালকা হয়, তা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বোঝার সুবিধার্থে আমিও হালকা করেই লিখছি।

আমাদের এই প্রিয় দেশটা দীর্ঘদিন থেকেই অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে চলছে। একেবারে মাথাতেই চলছে অনিয়ম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিনা লাইসেন্স ও বিনা পারমিটে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দেশের ড্রাইভার হয়ে দেশ চালনা শুরু করেন। হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে একটা জাল লাইসেন্স যোগাড় করে আমৃত্যু দেশ চালাতে থাকেন। ১৯৮০ সালে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় চালক জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হয়। এরপর লাইসেন্স ও পারমিট ছাড়া এরশাদ বসেন ড্রাইভিংয়ে। জোর করে নয় বছর স্টিয়ারিং ধরে ঝুলে থাকেন তিনি। এসময় অনেক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। গাড়ির তেল চুরি সাধারণ ঘটনা ছিল। রাতে জায়গা-বেজায়গায় গাড়ি পার্কিং করতেন। আবার দিনে টুপি লাগিয়ে দেশ চালাতেন। অন্যায়ভাবে স্টিয়ারিং ধরে রাখা ও অবৈধ কাজকর্মের জন্য ১৯৯০ সালে এরশাদকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে চালকের আসন থেকে নামানো হয়।

১৯৯১ সালে লাইসেন্স নিয়ে দেশ চালানো শুরু করেন খালেদা জিয়া। লাইসেন্স থাকা স্বত্বেও তিনি একাধিক দুর্ঘটনা ঘটান। এরমধ্যে মাগুরার দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য। পাঁচ বছর পর পারমিট রিনিউ করার সময় এলে রিনিউ না করেই ১৫ ফেব্রুয়ারি '৯৬ সালে আবারো ড্রাইভিং-এ বসে পড়েন। এবার অন্য ড্রাইভারদের কঠিন আন্দোলনে তাকে স্টিয়ারিং ছাড়তে হয়। এবার দেশ চালানোর পারমিট পেয়ে যান শেখ হাসিনা। ছোটখাটো কিছু দুর্ঘটনা ঘটে তার সময়ে। তারপরেও ভালো ছিল তার দেশ চালনা।

কিন্তু ২০০১ সালে আবার দেশ পরিচালনার জন্য পারমিট বাছাইকালে খালেদা জিয়াকে আবারো পারমিট দিয়ে দেয়া হয়। তার লাইসেন্স আপ-টু-ডেট ছিল । কিন্তু তিনি স্টিয়ারিং দিয়ে দেন তার অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্র তারেককে। ব্যাস হেল্পারদের সাথে নিয়ে লাইসেন্সবিহীন চালক তারেক জিয়া এমন উল্টাপাল্টা ভাবে মুখ ঢেকে দেশ চালাতে শুরু করেন যে, নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। এরমধ্যে নতুন করে পারমিট রিনিউ করার সময় এলে তারেক জিয়ার বুদ্ধিতে চালক খালেদা জিয়া 'টাল্টিবাল্টি' শুরু করেন।

একাধিক দুর্ঘটনার জন্য খালেদা জিয়ার লাইসেন্স রিনিউ হবে না বুঝতে পেরে বিনা পারমিটে দেশ চালানো শুরু করেন খালেদা জিয়া। তার নিজের লাইসেন্স দিয়ে ইয়াজুদ্দিনকে পারমিট পেপার বুঝিয়ে দেন। কিন্তু এই চালাকি কাজে আসেনি। রাস্তায় সেনাবাহিনী নেমে পড়ে। খালেদা জিয়ার পারমিট ও লাইসেন্স সব বাতিল করে দেয়া হয়। খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়ার নামে মামলা হয়। একাধিক হেল্পারের নামেও মামলা হয়। ১৯৯৬-২০০১ সালে দেশ চালনাকালে কিছু দুর্ঘটনার জন্য সেনা সহায়তায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা হয়। তার একাধিক হেল্পার সব দায় শেখ হাসিনার উপর চাপিয়ে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেনারা দেশে হাসিনা ও খালেদা দুই চালকের মধ্যেই আইন ভাঙার অভিযোগ আনে। তবে খালেদা জিয়া নিজের জন্য পারমিট নিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক লাইসেন্সবিহীন পুত্রকে দিয়ে দেশ চালাতে গিয়ে চরম অন্যায় করেছেন যেথায় সেথায় পার্কিং, হাইস্প্রিড, যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার, নিয়ম বহির্ভূত ভাড়া আদায়, অবৈধ মালামাল বহন, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রয় ইত্যাদি নানান অভিযোগের জন্য খালেদা জিয়া ও তার পুত্রকে অভিযুক্ত করা হয়। এই অবস্থায় সেনা ব্যবস্থাপনায় আবারো পারমিট দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনাকে নতুন লাইসেন্সে নতুন পারমিট দেয়া হয়।

শেখ হাসিনা শুরুতে বেশ ভালোভাবেই দেশ ড্রাইভ করছিলেন। সামান্য কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও তা আলোচ্য ছিল না কিন্তু ২০১৩ সালে এসে তিনি নতুন করে রোড পারমিট আবেদনের প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মত হস্তক্ষেপ করলেন । তিনি আরেক কাঠি সরেস হয়ে অন্য কাউকে পারমিটের জন্য আবেদনই করতে দিলেন না। ব্যস একমাত্র আবেদনকারী হিসাবে আবারো পাঁচ বছরের জন্য দেশ পারমিট নিয়ে নিলেন।

তার পারমিটকে সরাসরি অবৈধ বলা না গেলেও পারমিট লাভের প্রক্রিয়াটি অনৈতিক। যদিও তিনি লাইসেন্স রিনিউ করে দক্ষ হাতেই দেশ চালাচ্ছেন কিন্তু উনার সাথে থাকা অধিকাংশ হেল্পারই চোর। আজ বেঁচে দেয় তেল। কাল বেঁচে চাকা, ব্যাটারিতে পানি দিতে ভুলে যায়। হেডলাইট ফিউজ থাকে, হর্ন নষ্ট থাকে, এমনকি ব্রেকও খারাপ থাকে প্রায় সময়। রাতে বিনা হেড লাইটে বেচারিকে অনেক কষ্টে দেশ চালাতে হয়। হেল্পারদের বেশি কিছু তিনি বলতেও পারেন না । অনৈতিক কাজ করলে অন্যকে নীতিজ্ঞান শেখানো যায় না। সব দেখেন ও বুঝেন তিনি। কিন্তু চুপ করে থাকেন। হেল্পারদের লজ্জা দিয়ে কিছু বললে, এরা বলে বসবে ড্রাইভার আপা...আপনার পারমিটতো অবৈধ। বিশেষ করে শাহজাহান হেলপারকে কিছুই বলা যাবে না।

  • লেখক: সংগঠক।
  • [প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের নিজস্ব]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত