আজমিনা আফরিন তোড়া

১৩ আগস্ট, ২০১৮ ১৬:৪৮

একটি অসফল আন্দোলন

তখন অল্প বয়স, ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবার, ঘরে কেবল বিটিভি চলে। হঠাৎ একদিন রাত ৮টার সংবাদে ফলাও করে ইরাক যুদ্ধের খবর শুনলাম। স্বাধীন দেশের নাগরিক, যুদ্ধ কখনো দেখি নি আমরা। কেবল বাপ-দাদার মুখে শুনেছি ’৭১ এর কথা। সেই সময়কার কথা বলতে শুরু করলে এখনো বাবা-দাদার বয়সী লোকদের চোখ ছলছল করে ওঠে, কখনো আবার রাগে-কষ্টে চোখ ধিকধিক করে জ্বলে।

কোন এক অজানা কারণে তাই ছেলেবেলায় যুদ্ধের কাহিনী মানে ১৯৭১ এর গল্প আমাকে খুব টানত। যাকেই পেতাম যার জন্ম ’৭১ এর আগে তাঁর কাছেই বায়না ধরতাম গল্প শোনার, যুদ্ধের গল্প। চোখে দেখা সত্য গল্প। আর শুনবই না বা কেন! যে যুদ্ধটা না হলে আমার দেশটার জন্মই হত না, তার খুঁটিনাটি তো অবশ্যই জানা চাই। একই গল্প বারবার শুনতাম, নতুন লাগত। মানুষের বিরামহীন কষ্টের কথা শুনে চোখে পানি চলে আসত।

একটু বড় হবার পর গল্প বলার জন্য কাউকে আর জ্বালাতাম না। যেখানে যা-ই পেতাম মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত, নিমিষে পড়ে ফেলতাম। যেহেতু যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা ছিল, তাই ইরাকযুদ্ধ আমার শিশু মনে গভীর করে দাগ কাটল। খবরে দেখানো যুদ্ধগ্রস্ত ইরাক শিশুদের জন্য যারপরনাই কষ্ট হত। সংবাদে তখন ইরাক যুদ্ধ নিয়ে নিয়মিত আয়োজন থাকত। তাই সংবাদের খবরাখবর না নেওয়া আমি রাতারাতি হয়ে উঠলাম নিয়মিত সংবাদ দর্শক।

একদিন স্কুলে আলোচনা হচ্ছিল যুদ্ধের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে। আলোচনায় উঠে আসল যে এই যুদ্ধ নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আমাদের মাঝে বিস্তর আলোচনা শুরু হল বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আমাদের মাঝে কে কোন দেশ সাপোর্ট করবে। স্বভাবতই আমি ইরাকের পক্ষ নিব বলে ঠিক করলাম। তারপর সদ্য কিশোরী বা শিশু মন নিয়ে আমরা ঠিক করতে থাকলাম সত্যি সত্যিই যুদ্ধ হলে যুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের করণীয় কী হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেব। সেই অল্প বয়সের এডভেঞ্চারে মনে মনে নিজেকে সাহস দিতাম- কী করে যুদ্ধের এতটা দিন বাবা মাকে ছেড়ে একা একা থাকব, কত কত ত্যাগ স্বীকার করতে হবে যুদ্ধের ময়দানে।

সেদিন সত্যি সত্যি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আদৌ আমি অংশ নিতে পারতাম কি না জানি না, কিন্তু কিশোর মনের এই ফ্যান্টাসি যে কেবল ফ্যান্টাসি নয়, বরং খুবই বাস্তবসম্মত আর সেই ফ্যান্টাসিকে যে বাস্তবিক অর্থেই খুব গঠনমূলক কাজে লাগানো যায় তা প্রমাণ করল আমাদের নতুন প্রজন্ম। খেলার মাঠ না পেয়ে মোবাইল স্ক্রিনের মাঠে ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ছেলেটা আর ট্যাবের স্ক্রিনে লুডুর বোর্ড চেনা মেয়েটা বোকা বোকা বাস্তব জ্ঞানহীন না হয়ে যে এত বড় একটা আন্দোলন করে আপনার, আমার, পুরো দেশের বিবেক নাড়িয়ে দেবে তা কি আমরা ভেবেছিলাম?

ছাত্র মারা গেছে কেবল দুজন। তাঁদের দুজনের কত জনই বা বন্ধু ছিল? বড় জোর পঞ্চাশ বা একশ জন? অথচ হাজার হাজার শিশু কিশোর অচেনা দুইজন মানুষকে নিজের বন্ধু, বড় ভাই, বড় বোন মনে করে কি মার টাই না খেল পথে পথে! কি অপদস্থটাই না হল স্কুলে! যারা এই ফেসবুক প্রজন্মের উপর বিরক্ত ছিলেন, তাঁদের চোখে আঙ্গুল দেয়া শিক্ষা ছিল এটা।

নিরাপদ সড়কের দাবি আমাদের সকলের। কে না চায় একটা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা! কয়েক দিন আগে দুই বাসের রেসে এক টগবগে তরুণ হাত হারাল। ফলাও করে পত্রিকার প্রথম পাতায় দুই বাসের মাঝখানে চাপা পড়া সেই হাতের ছবি আসল। কয় দিন পর ছেলেটা মারা গেল। পত্রিকার শেষের পাতায় ছোট্ট করে খবরটা আসল। ছোট্ট করে আসল, কারণ আমরা এইসব মৃত্যুতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অভ্যাস এতটাই খারাপ ব্যাপার যে প্রতি বছর এই হাজার হাজার সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের আর বিশেষভাবে নাড়া দেয় না।

আমাদের মনের মত কোমলমতিদের মন এখনো অকেজো হয় নি, সমঝদারেরা বলতে পারেন ওদের মন পরিণত হয় নি। তাই তো ওরা ঘরে বসে করিম আর দিয়ার মৃত্যু সংবাদটা মেনে নিতে পারেনি। ভাগ্যিস ওদের মন পরিণত হয় নি, হলে আজ আমাদের দায়িত্বটা নতুন করে আমাদের শেখানোর জন্য কেউ থাকত না!

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে চালকের তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আইনের কথা এখন প্রায় সবাই জানি। কিন্তু এখনো সম্ভবত অনেকেরই অজানা যে বিআরটিসি গাড়ির চালক দ্বারা যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তবে বিআরটিসি তাকে শাস্তি হিসেবে চাকরীচ্যুত করা দূরে থাক, বিভিন্ন অফ রুটে গাড়ি চালাতে পাঠানো হয় বিভিন্ন মেয়াদে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনুযায়ী মেয়াদ বাড়ানো বা কমানো হয়।

এই চালকদের সাধারণত পাঠানো হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রছাত্রীদের বাসগুলো চালানোর জন্য। শাস্তির নামে যা করা হয় তা হল ঐ সময়ে তাদের বেতন কিছুটা কম দেয়া হয়। সব থেকে বড় কথা শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এদের আবার নিয়োগ করা হয় দূর পাল্লার বাস চালানোর জন্য।

এই তথ্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক ছাত্রই জানতাম। কিন্তু আওয়াজ তোলার সাহস কই! আওয়াজ তুলল অবশেষে নবীন কিশোরেরা, আওয়াজ তুলল কারণ তারা এখনো এই ব্যবস্থার সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি, অভ্যস্ত  হতে শেখেনি।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্তরে স্তরে আমাদের শেখানো হয় আশেপাশের সব কিছু নিয়ে সচেতন হওয়ার ব্যাপারে। অথচ একদল অধিকার সচেতন শিশু কিশোর যখন রাস্তায় নামল তখন তাদের যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে একবারও ‘মাননীয়া’ কোমলমতিদের সাথে দেখা করার প্রয়োজন বোধ করলেন না! সন্তানরা কত আজগুবি আবদারই না বাবা-মায়ের কাছে করে! তার মাঝে কতটাই বা মেটাতে পারে বাবা মা? কিন্তু তার জন্য চাই সন্তানকে বোঝানো। নিশ্চয়ই কোন বাবা-মা পাশের বাড়ির লোককে বলেন না নিজের বিগড়ে যাওয়া সন্তানকে শাসন করতে!

আমাদের ‘মাদার অফ হিউমিনিটি’ সন্তানদের মাথায় হাত রেখে বুঝাতে পারতেন, দাবিগুলো বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে। তা সম্ভব না হলে নয়তো মন্ত্রী পরিষদ থেকেও কাউকে পাঠানো যেত বোঝানোর জন্য। তা না করে কি খুব প্রয়োজন ছিল সকল মহলে বহুল ‘আলোচিত’ ছাত্রলীগকে এই স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের বোঝাবার দায়িত্ব দেয়ার? নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পেয়েই কি তাদের এই হেলমেটের আশ্রয় গ্রহণ? ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক ‘গৌরব’ কে কি আরও ‘গৌরবান্বিত’ করার খুব দরকার ছিল?

সম্প্রতি এক টিভি টক শো তে দেখলাম ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি বলছেন, এ হেলমেট বাহিনী নাকি ছাত্রলীগ না। এরা নাকি জামায়াত-শিবির। তাহলে চারিদিকে এত নিরাপত্তাকর্মী, তারা জামায়াত-শিবির কর্মীকে আক্রমণ না করে কেন ছাত্রদের উপর হামলা করছিল? প্রশ্ন থেকেই যায়!

সম্প্রতি একটা খবরে চোখ আটকে গেল। ছাত্রলীগের এক নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মতামত জানানোর অপরাধে দুই ছাত্রকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে! কি অবাক করা কাণ্ড। যেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশ্বর গোছের কেউ, তাঁদের কোন সমালোচনা করা যাবে না, তাদের নিয়ে কোন কটু কথা বলা যাবে না। যে কোন একটা মতামত বা মতাদর্শ থাকলে তার বিপরীত মতাদর্শ অবশ্যই থাকবে। তাই বলে সেই মতামতের উপর বল প্রয়োগ করতে পারি না।

দেশের একজন নাগরিক, সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, এই ২০১৮-তে এসে পুলিশ তাকে এমনভাবে সন্ত্রাসীদের মত তুলে নিয়ে যেতে পারে না যে তার পরিবার তুলে নিয়ে যাবার পরের দিনও জানবে না সে কোথায় আছে, কীভাবে আছে। অন্তত, বাংলাদেশের সংবিধান (৩৩ অনুচ্ছেদ) পুলিশকে এই অধিকার দেয় নি। গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চেঁচালেই কেবল গণতন্ত্র হয় না। গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠার জন্য চাই গণতান্ত্রিক আচরণ।

আশ্চর্য লাগে, দেশে সবাই এখন আওয়ামী লীগ। যেন অন্য কোন রাজনৈতিক দল কোনকালেই বাংলাদেশে ছিল না! গত দশ বছরে অনেক শিবির কর্মীকে ভোল পাল্টে ছাত্রলীগ হতে দেখেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সামান্য সত্যটুকু বুঝতে চান না, এই জামায়াত-শিবিরসহ বাকি সুযোগ সন্ধানী অনুপ্রবেশকারীরা কেউই তাদের মতাদর্শ পরিবর্তন করেনি, তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে! এই অনুপ্রবেশকারী আর তোষামোদকারীর সমন্বয়ে গঠিত ছাত্রলীগের চাইতে অনেক বড় শক্তি হল জনগণের শক্তি। প্রয়োজনের সময় সব থেকে বড় দরকার এই জনগণের। তখন ছাত্রলীগ দিয়ে কার্য হাসিল হবে না! কিন্তু যেই নতুন প্রজন্ম সরকারের এই অন্ধ পক্ষপাতিত্ব দেখে বড় হচ্ছে তারা কি করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব থেকে বড় শক্তিকে সমর্থন করবে!

একেকটা যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনের পর আন্দোলনে সরকারের শীতল আচরণ, নিরাপত্তাবাহিনীর বলপ্রয়োগ আর হেলমেট-বাহিনীর সন্ত্রাস দেখে অনেকেই বলছেন দেশে থাকবেন না। মেধাবীরা দেশে প্রকৃত অর্থেই থাকছেন না। কারণ দেশে থাকলে ছাত্রদের ঘরে ঘরে রাতের বেলায় পুলিশ আর ছাত্রলীগের মিলিত অভিযান চলে। মুক্তচিন্তা করা ছেলে মেয়েদের তালিকা তৈরি করে দুপক্ষ। এক পক্ষ হলো প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী, আরেকপক্ষ হল ‘ক্ষমতা’ যাদের হাতে কেন্দ্রীভূত তারা। হুটহাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া আর তাদের রিমান্ডে নেয়া হয় গুজব ছড়ানোর দায়ে!

প্রশাসন দফায় দফায় বলে যাচ্ছে আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সরকার তাদের ক্ষমা করার কেউ না। অথচ সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে স্বাধীন দেশে মিটিং, মিছিল, জনসমাবেশ করা যাবে। তাছাড়া সমাবেশ বা মিছিল ছাড়া জনতার দাবি সরকার যন্ত্রের কান পর্যন্ত পৌঁছানোর আর কোন উপায় আছে কি? মিছিল সমাবেশ বন্ধ করে কি সরকার জনগণের দাবি শুনতেই চায় না? ওদিকে আবার হেলমেট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, তাদের পরিচয় পর্যন্ত জানার কোন তোড়জোড় নেই। ২২ ছাত্রকে আদালতে নেয়ার তাড়াহুড়ো আছে কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে কারো কোন সুনজর নেই। ফলে থেমে নেই সড়ক দুর্ঘটনা।

বারবার পত্রিকার শিরোনাম আসছে যে ফিটনেসবিহীন বাসের উপরে ঘষামাজা চলছে। এই বাস আবার সড়কে আসবে। দু-চার জন আহত হলে আবার গ্যারেজে যাবে, ভোল পাল্টে আবার রাস্তায় নামবে। সেই সবের বিচার না করে কেন ছাত্রদের অপদস্থ করা হচ্ছে! যেখানে যে যেভাবেই প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের অথবা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা মাত্রই রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কোন সুস্থ এবং মুক্তবুদ্ধির মানুষ যে দেশ আর দশ নিয়ে একটু হলেও ভাবে তার পক্ষে কি এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকা সম্ভব?

কোন একটা আন্দোলন মানেই দেশদ্রোহিতা নয়, সরকার পতনের পায়তারা নয়। সরকার পতন বললেই পতন হয় না। তাছাড়া এই সরকারের পরিপূরক এই মুহূর্তে কেউ নেই। তাই আপাতত কোন আন্দোলনই অন্তত সরকার পতন ঘটাবে না। তাহলে জনমনের দাবি মানায় কোথায় এত বাঁধা?

যেভাবেই হোক, যত বিতর্কিতভাবেই হোক আন্দোলন থেমে গিয়েছে কিংবা থামিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কি খুব একটা লাভ হয়েছে? ট্রাফিক পুলিশেরা ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করছে। অথচ আজকেও সংবাদপত্রে ফলাও করে এসেছে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে গণপরিবহনগুলো কেউই ট্রাফিক নিয়ম মানছে না। তবে কি মেনে নিতে বাধ্য হব, এখন পর্যন্ত নাগরিক না হয়ে ওঠা শিশু কিশোররাই আমাদের চেয়ে বেশী নিয়মতান্ত্রিক? শিশু-কিশোরদের ঘরে পাঠিয়ে এখনো সড়কে নিয়ম আনতে না পারাকে কি প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ভাববো, নাকি অনিচ্ছা ভাববো? ইচ্ছা থাকলে করে দেখানো সম্ভব তা তো স্কুল কলেজের বাচ্চা ছেলে মেয়েরা করে দেখালো।

আন্দোলন থেকে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে গুজব নিয়ে এত কথা, এত গ্রেপ্তার, এত রিমান্ড সেই গুজব কেন ছড়ালো তা কি আমরা একবারও ভেবে দেখব না? প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের তথ্য এবং মানুষের প্রত্যাশিত তথ্যের মাঝে যখন বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয় তখন মানুষ নিজেই সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা পালন করে এবং তথ্য ব্যবধান দূর করে। ফলে গুজব তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কি এমন ঘটেছিল যে মানুষ গণমাধ্যমের দেয়া তথ্যের উপর ভরসা করতে না পেরে নিজেরাই গণমাধ্যমের ভূমিকা পালন করছিল? তাও আবার ‘নিয়ন্ত্রিত’ সংবাদ সংগ্রহের অপরাধে সাংবাদিকদের উপর যে হামলা তাও তো দেশবাসী দেখল। সব একসাথে করলে যে বার্তা আমরা পাই, তাকে মোটেও শুভকর কিছু ভাবা যায় না।

এক অঞ্চলের গান আছে, 'এই দিন দিন না, আরও দিন আছে'। যেই বিপুল পরিমাণ শিশু-কিশোর আজ হেলমেট-বাহিনীর আঘাত আর পুলিশের লাঠিপেটার মুখে ঘরে ফিরল এরা একদিন দেশের নাগরিক হবে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক শক্তি আওয়ামী লীগের উপর এরা কি আর কখনো আস্থা ফিরে পাবে? এই বিপুল সংখ্যক ভবিষ্যৎ নাগরিক এই শিক্ষা নিয়ে ঘরে ফিরল, ন্যায়ের আন্দোলনের উপরে দুর্নীতির অবস্থান। উন্নত শিরে এরা অন্তত এটা বলতে পারবে না, 'আমি বাংলাদেশের নাগরিক'।

  • আজমিনা আফরিন তোড়া:  শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
  • [প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের  নিজস্ব]

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত