আজিজুস সামাদ আজাদ ডন

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০০:১৭

অষ্ট্রেলিয়া না অষ্ট্রিচ!

অষ্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল আসছেনা, কারণ, জঙ্গীবাদ। আমি তাড়াতাড়ি গুগুল খালার কাছে গেলাম। দেখি তথ্যের ভান্ডার গুগুল খালার রিপোর্ট বক্সে অষ্ট্রেলিয়া শুধু নয়, পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সব দেশের, এমন কি আমাদের পাশের দেশ ভারতেরও নেগেটিভ রিপোর্টগুলো এবং তৎসংক্রান্ত লেখা গুলো বিভিন্ন শতকরা হিসাব দিয়ে টিয়ে এমনভাবে ঢেকে ফেলা হয় যে প্রয়োজনীয় তথ্যটা খুঁজে বের করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।

যাইহোক, আমাদের বাংলাদেশের রিপোর্টার ভাইয়েরা এবং বেশীরভাগ সুশীল সমাজের কলামিষ্ট ভাইয়েরা এ বিষয়ে এক কাঠি সরেস। তারা শুরুই করেন বিভিন্ন নেগেটিভ কারণে নিহত দিয়ে। অষ্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের আদিবাসীদের মেরে প্রায় সাফ করে দিয়ে, বাদবাকি জীবিতদের তাদের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় রেখে, তারা এখন তাদের অমানবিক আচরনের দায় আমাদের ঘাড়ে ফেলে এদেশেও আদিবাসী খুঁজে বের করতে চায়।

আর কিছু তো সুশীলেরা আছেনই, তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, সব মাথা ছাড়িয়ে। বহু কষ্টে যে তথ্যগুলো জোগাড় করেছি, অষ্ট্রেলিয়াতেও জঙ্গী হামলা হয় এবং সে কারণে মানুষও মারা যায়। সেখানে রোড আক্সিডেন্টে মারা যায় প্রতি বছর হাজারের উপরে মানুষ। পুলিশ হেফাজতে বা পুলিশের গুলিতে মারা যায় বছরে প্রায় শ’খানেক মানুষ। বছরে হারিয়ে যাওয়া রিপোর্টেড মানুষের সংখ্যা ৩৫,০০০।

আমাদের দেশের বর্তমান প্রজন্ম তো জানেই না সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কি জিনিষ। কিন্ত তাদের সকলেই জানে তাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ফ্যাসিবাদীদের হামলায় আহত, নিহত মানুষের কথা। তাহলে হঠাৎ করে তারা আমাদের দেশে জঙ্গীবাদী অস্তিত্ত্ব খুঁজে পেয়ে শেষ মুহুর্তে কেন তাদের সফর বাতিল করলো? যেখানে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, সাউথ আফ্রিকা খেলে গেল। সমস্যাটা ওখানেই। ক্রিকেটের দুই কুলীন এসে বাংলাদেশের টাইগারদের হাতে নাকানী চুবানী খেয়ে গিয়েছে।

সাউথ আফ্রিকাকে ফর্সা করতে গিয়ে তো আমাদের দর্শকদের গায়ে বর্ণবাদী তকমা লাগিয়েই দিয়েছিল প্রায়, যদিও মাত্র বছর বিশেক আগেও তাদের দেশই ছিল বর্ণবাদের আখড়া। তাছাড়া পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের মুখে যে সাদা চুনকাম করেছিল টাইগারেরা, সেটার কথা তো এই সব তথা কথিত কুলীন ক্রিকেট জাতির ভুলবার কথাই নয়। আসলে ওদের দোষ নেই।

আমাদের কোন রিপোর্টার হয়তো কোথাও লিখে ফেলেছিলেন যে, টাইগারেরা জংলি হয়ে উঠছে। অষ্ট্রেলিয়ানদের ইংরেজীর যে অবস্থা, বাংলার "ল" কে "গ" পড়তেই পারে। ঐ জংলীকেই তারা জঙ্গী মনে করেছে। অথবা ভয় পেয়েছে, পাছে তাদের এই নবীন দলকে কি না কি করে বসে বর্তমানের এই জংলী বাঘেরা। এটাই হল আসল কথা, ভয় পেয়েছে তারা। অষ্ট্রেলিয়ানরা সেই কবে থেকে ক্রিকেট খেলছে। তারা দিব্য দৃষ্টিতে এখন সব দেখতে পায়। তারা দিব্য দৃষ্টিতে দেখে ফেলেছে যে, তাদের এই নবীন দলকে পেয়ে জঙ্গী (আসলে জংলী পড়তে হবে) সরকার টেষ্ট ডেব্যুতেই ব্যাক টু ব্যাক চারটা সেঞ্চুরী করে আজহারের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবে। আরেক জঙ্গী তামীম প্রথম সেশনে সেঞ্চুরী করে ফেলবে।

আর এই কোথা থেকে উদয় হওয়া জঙ্গী মুস্তাফিজ এক টেষ্টে বিশ উইকেট নিয়ে ফেলবে। আর এই জঙ্গী রিয়াদ, সাকিবের কথা না বলাই ভালো। এরা না জানি কি করে বসে, হয়তো এক ইনিংসে চারশো রানের ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবে। ইনিংস পরাজয় তো অবধারিত। কোন একটা টেষ্ট হয় তো দুদিনেই শেষ। এই জঙ্গীদের সাথে না খেলাই ভালো।

হায়রে কুলীন অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট। তারা সব অষ্ট্রিচ বা উট পাখি হয়ে গিয়েছে। বালিতে মুখ গুজে মনে করে কেউ তাদের দেখতে পাচ্ছেনা, তাদের মনের ভাষাই বুঝতে পারবেনা। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের উচিত অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অন্তত দশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরণ চাওয়া। এ ক্ষতিপুরণ শুধু আমাদের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিপুরণ নয়, দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের অপমানের জন্যও বটে।

আজিজুস সামাদ আজাদ ডন: রাজনীতিবিদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত