বিনোদন ডেস্ক

১৩ অক্টোবর, ২০১৫ ১৮:০০

আর নগ্ন ছবি ছাপবে না প্লেবয়

সময়ের ফেরে কত কি-ই না বদলে যায়। নগ্নতাকে সম্বল করে যার উত্থান; সেই 'প্লেবয়' ম্যাগাজিনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী সংস্করণ থেকে আর নগ্ন ছবি ছাপবে না তারা।

এ বিষয়ে হয়তো সন্দেহ হতে পারে অনেকেরই; মনে হতে পারে, আবেদন কমে যাওয়ায় সাময়িকীটির কাটতি বাড়ানোর এটি নতুন কোনো কৌশল! না, এটি কোনো গুজব নয়; খোদ প্লেবয়ের প্রধান সম্পাদক হিউ হাফনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্লেবয়ের পরবর্তী সংস্করণ নিয়ে গত মাসে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস।

কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? প্লেবয়ের, নাম শুনলেই যেখানে চোখের সামনে ভেসে ওঠে নগ্নতা; সেই ম্যাগাজিন কেন এখন আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে? সাময়িকীটির কর্ণধাররা অবশ্য এসব প্রশ্ন উঠতে পারে ধরেই নিয়েছিলেন। আর তাইতো নিজে থেকেই এমন সিদ্ধান্তের পেছনের যৌক্তিকতাও ব্যাখ্যা করেছেন তারা।

এ বিষয়ে প্লেবয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্কট ফ্ল্যান্ডার্স বলেন, 'যুদ্ধ শেষ হয়েছে এবং তাতে আমরাই জয়ী...বলতে গেলে আপনি এখন যৌনতা থেকে মাত্র এক ক্লিক দূরে, তা-ও প্রায় বিনামূল্যে। এ সময় তাই এসব (নগ্নতা) এখন অতীত।'

হ্যাঁ, সময়ের পরিক্রমায় এখন আর সেই আবেদন নেই প্লেবয়ের। যে যৌনতাকে পূুঁজি করে প্লেবয়ের পথচলা; স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের কারণে এখন আর তেমন আকর্ষণ নেই লাখো পুরুষের ঘুম কেড়ে নেওয়া 'প্লেবয়'র মোহনীয় ভঙ্গিমার সেসব ছবিরও। বিপরীতে অনলাইনে পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতায় ধীরে ধীরে কমেছে প্লেবয়ের গুরুত্ব ও আভিজাত্য।

অ্যালায়েন্স ফর অডিটেড মিডিয়ার (এএএম) হিসেব মতে, প্লেবয়ের কাটতি এখন মাত্র ৮ লাখ কপি। অথচ ১৯৫৩ সালে প্রথম সংস্করণে হলিউড হার্টথ্রুব মেরিলিন মনরোর কভার ফটো দিয়ে যাত্রা শুরু করা প্লেবয় ১৯৭৫ সালের দিকে ৫৬ লাখ কপি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। প্লেবয়ের স্বর্ণযুগে এতে লিখেছেন মার্গারেট অ্যাটউড, হারুকি মুরাকামির মতো লেখকরা।

প্লেবয়ে সাক্ষাৎকার ছাপানোর জন্য মুখিয়ে থাকতেন ম্যালকম এক্স, ভ্লাদিমির নবোকভ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, জিমি কার্টারের মতো খ্যাতিমানরাও। প্লেবয়ের প্রচ্ছদ দিয়েই পরিচিতি পান ম্যাডোনা, শ্যারন স্টোন এবং নাওমি ক্যাম্পবেলের মতো তারকারা।

তুমুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিনটির সমালোচনাও কম হয়নি সেই সময়। ডান-বাম দুই ঘরানার বুদ্ধিজীবীই প্লেবয়কে টার্গেট করেছেন। ডানপন্থিরা নগ্নতা আর বামপন্থিরা নারীকে পণ্যায়িত করার অভিযোগ এনেছেন প্লেবয়ের বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখে প্লেবয়ের উত্তর ছিল, 'নগ্নতা কোনো কুসংস্কার নয়।' সমালোচকরাও তখন প্লেবয়ের জনপ্রিয়তাকে অস্বীকার করতে পারেননি। এখনও অ্যাপল, নাইকি বা গুগলের মতো লোগো দিয়েই চেনা যায় প্লেবয়কেও।

ম্যাগাজিনের অন্যতম প্রবীণ সম্পাদক কোরি জোনস ও প্রধান সম্পাদক হিউ হাফনার জানিয়েছেন, আগামী বছরের মার্চ সংস্করণ থেকেই কার্যকর হচ্ছে নগ্ন ছবি না ছাপার এই সিদ্ধান্ত। তবে নারীদের উত্তেজক ভঙ্গিমায় দেখা যেতে পারে তাতে।

এ বিষয়ে জোনস বলেন, 'দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না। ১২ বছর বয়সের আমি বর্তমান আমির উপর অনেক বিরক্ত, কিন্তু বাস্তবে এটাই হচ্ছে সঠিক কাজ।'

'নগ্নতা কুসংস্কার নয়' এমন প্রচারণার যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কথা মুখে বললেও প্লেবয়ের সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে অন্য আরেক কারণ। চার দশকের পুরনো ম্যাগাজিনটি আগস্টে তাদের অনলাইন সংস্করণ থেকে নগ্ন ছবি সরিয়ে ফেলেছিল। তখন প্লেবয়ের পাঠকদের গড় বয়স ৪৭ থেকে নেমে ৩০ কোটায় নেমে আসে। ৪০ লাখ থেকে একলাফে পাঠক বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৬০ লাখে।

সেই সাফল্যেই এবার ছাপা সংস্করণ থেকেও নগ্ন ছবি সরানোর এমন পরিকল্পনা। এখন থেকে তাহলে প্লেবয়ের পাঠকরা 'শুধু আর্টিকেলের জন্যই ম্যাগাজিনটি পড়েন'– এমন দাবি করতেই পারেন!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত