বিনোদন ডেস্ক

১৬ অক্টোবর, ২০১৫ ২২:৪৮

ঋতুবদল

ঘটনা এক: গত তিন বছর ধরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের দিন সকালে মুম্বই থেকে ঘনঘন এসএমএস আসে তাঁর কাছে। ‘ঋতু, সি ইউ অ্যাট দ্য ফেস্টিভ্যাল ওপেনিং’। কখনও পাঠান মুম্বইয়ের নামী অভিনেত্রী। কখনও কোনও হিরো। কিন্তু তিনি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বুঝে উঠতে পারেন না কী উত্তর দেবেন! তিনি নাকি সরকার-ঘনিষ্ঠ নন বলে কোনও মতে একটা পাস পাঠানো হয়েছে বাড়ির ঠিকানায়। কেউ ফোন করেও জানায়নি, তাঁকে স্টেজে তোলা হবে কি না!

‘‘এত বছর টালিগঞ্জকে রিপ্রেজেন্ট করে আমার কি এটা প্রাপ্য?’’ বলে একাধিক বার পরিচিত সাংবাদিকদের ফোন করেছেন ঋতুপর্ণা।

ঘটনা দুই: দিনের পর দিন কিছু পরিচালক ফোন করে বলেছেন তাঁর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। সেই মানুষগুলোই পরের দিন কোনও পার্টিতে দেখে কথা না বলে এড়িয়ে গিয়েছেন!

‘‘হয়তো লজ্জায় বেরিয়ে গেছেন, আমাকে ফেস করতে পারেননি। হয়তো আমার সঙ্গে কাজ করলে ওঁদের কেরিয়ারের ক্ষতি হবে ভেবেছেন,’’ ঘনিষ্ঠ মহলে বলতেন নায়িকা।

বিগত বারো বছর এ রকম শত শত অপমান, অবজ্ঞা জুটেছে তাঁর জীবনে। এমনকী এই ক্রমাগত বঞ্চনার পর বারবার ফিরে আসার ক্ষমতাকেও অবজ্ঞা করা হয়েছে নানা মহলে। মুড়ি-তেলেভাজার আড্ডায় বলা হয়েছে, ‘‘ঋতু হল কই মাছের প্রাণ। কিছুতেই কিছু করা যায় না।’’ কেউ বলেছে, ‘‘লাস্ট সাত বছরে একটা হিট ছবির নাম বল?’’

অথচ অদম্য ঋতুকে কিছু করা যায়নি। শুক্রবার তাঁর অভিনীত ‘বেলাশেষে’ ঐতিহাসিক ২৫ সপ্তাহে পড়ছে।

সেই একই দিনে সাম্প্রতিক কালে তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল যে ছবিতে, সেই ‘রাজকাহিনি’ মুক্তি পাচ্ছে। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। আবার দিন পনেরোর মধ্যে শ্যুটিং শুরু হচ্ছে প্রসেনজিতের সঙ্গে। বহু প্রতীক্ষিত কামব্যাক ছবির শ্যুটিং। রাজ্য সরকার থেকেও ইদানীং তিনি স্বীকৃত। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে অনুষ্ঠানে যান। এ বারের চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনে মুম্বই থেকে কোনও এসএমএস এলে আর তাঁর অস্বস্তির কারণ নেই।

নানা অপমান আর জ্বালা সহ্য করতে করতে আচমকা ২০১৫-টা নিজের করে নিয়েছেন ঋতুপর্ণা। অভাবিত প্রত্যাবর্তনই বলা যায়। যা কত দিন স্থায়ী হবে কেউ জানে না। পরের বছরই কী হবে কেউ জানে না। কারণ, বয়স আর ঋতুর বন্ধু নয়। কিন্তু স্রেফ সংকল্প, পরিশ্রম আর অভিনয়-ক্ষমতা— এই ত্রিভূজে ভর দিয়ে ফের টালিগঞ্জের পয়লা নম্বর নায়িকার দাবিদার হয়ে গিয়েছেন ঋতুপর্ণা।

ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত সকলে জানে, গত ক’বছর এক নম্বর নায়িকার মুকুট তাঁর মাথায় ছিল না। ঋতু যখন ক্রমশ একা একা ছবি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বড় কোনও হিরো বা প্রযোজকের কোনও সাহায্য ইন্ডাস্ট্রিতে পাচ্ছেন না। সেই সময় জাঁকিয়ে বসেছিলেন কোয়েল মল্লিক। বাঙালি দর্শকের অনেকের কাছেই কোয়েল শুধুই সুন্দরী নায়িকা নন। গার্ল নেক্সট ডোর। আর ইন্ডাস্ট্রিতে যিনি বহু মেপেজুখে একটা পা-ও ভুল ফেলেন না। কিন্তু গত দু’বছর কোয়েল যেন স্ট্র্যাটেজি বদলানোয় মনোযোগী। বিয়ে-উত্তর তিনি চাইছেন তথাকথিত ‘নিউ এজ’ ছবিতে কাজ বাড়াতে।

মানসিকতাতেও কোয়েল অনেক শান্ত ধীরস্থির। ঋতুর মতো উগ্র পেশাদার নন। কেরিয়ারের গিয়ার বদলানোর সময় অধুনা গতি কমেছে তাঁর অগ্রগমনের। যদিও জিৎকে ফের নায়ক করে তিনি বক্সঅফিসের সেই সফল চাবিটাই আবার উপুড় করেছেন। পয়লা নম্বর সিংহাসনের লড়াইয়ে ২০১৬ কোয়েলের মেক অর ব্রেক ইয়ার।

কোয়েল ছাড়াও ঋতুর প্রতিযোগী ছিলেন দু’জন। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আর শ্রাবন্তী। দু’জনই ভাল অভিনেত্রী। দু’জনই সুন্দরী।

স্বস্তিকার অভিনয় ‘শেষের কবিতা’তে অনেকেরই ভাল লাগলেও ছবি একেবারেই জমেনি। হিন্দি ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ও তাই। এমনকী প্রিয় পরিচালক/বন্ধু মৈনাকের সঙ্গে ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’ও চলেনি। চলেছে ‘এবার শবর’। সেখানে স্বস্তিকার ব্লাউজের কাট থেকে অভিনয়— সবই প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি মনে করে সিংহাসনের জন্য আরও ভাল ছবি, পেশাদার জীবনে আরও একাগ্রতার প্রয়োজন।
সূত্র: আনন্দবাজার

আপনার মন্তব্য

আলোচিত