বিনোদন ডেস্ক

২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ১৮:৪৪

‘বাবু-সোনা বলে ভালোবাসা দেখানোর বয়স আমাদের নেই’

গল্পের শুরু ২০০০ সালে। ভেন্যু-জেলাশহর নরসিংদী। শামীম শাহেদের নাটক ‘প্রভাতি সবুজ সংঘ’র শুটিং চলছে। নাটকের নায়ক হিল্লোল। নায়িকা নওশীন। পর্দার বাইরে দু’জন দুজনকে টুকটাক চিনতেন। কিন্তু দেখা হয়নি। প্রথমে দেখা ক্যামেরার সামনে। প্রেমের দৃশ্যে। শুটিংয়ের ফাঁকে টুকটাক কথাবার্তা। এর চেয়ে বেশি উল্লেখ করার মতো কোন ঘটনা ছিলনা। সাক্ষাত পর্বটা বেশ সাদামাটা, ম্যাড়মেড়ে। আরো কয়েকদিন টানা শুটিংয়ে দুজনের পরিচয়পর্ব সফলভাবে সমাপ্তি হলো। সঙ্গে নাটকটার শুটিংও শেষ হলো। প্রচার শুরু হলো চ্যানেল ওয়ানে। শুরুর এপিসোড থেকেই সাড়া পড়ে গেল। মাঝপথে দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি। বিজ্ঞাপন ফুরোলো ২০১০ সালে।

শুরু হলো হিল্লোল-নওশীনের নাটক। জুটি বেধে একের পর এক নাটকের অভিনয় করেছেন। অনেকদিন পর ছোটপর্দায় সফল জুটি পাওয়া গেল। সুপারহিট জুটি! বাজারে তাদের কাটতি আকাশচুম্বি। পর্দায় দুজনের রোমান্স হা মেলে গিলে দর্শকরা। কিন্তু তখন পর্দার পেছনে আপনাকের কেমিস্ট্রিটা কেমন ছিলেন?, ‘তখনো আমরা স্রেফ বন্ধুই ছিলাম।’-জানালেন নওশীন।

দু’জনের হাতেই প্রচুর কাজ। দম ফেলার ফুসরত নেই। সকাল-সন্ধ্যা শুটিংয়ে ব্যস্ত। শুটিংয়ের বাইরে দুজনের খুব একটা দেখা হতো না। যা ছিল বলার সবটায় শুটিং সেটেই বলতেন। পর্দার পেছনে দুজনের কেমিস্ট্রি ছিল চমৎকার। কথার ভাঁজে একজন আরেকজনের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন খানিকটা। নওশীন ভাবলেন, তার সঙ্গে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হবেনা। কিন্তু তখনো নওশীন একটু সাবধানী ছিলেন। যার সঙ্গে জীবনটা কাটিয়ে দেবেন তাকে একটু পরখ না করলে চলে! তাই ভালোবাসার কথাটা বলতে একটু সময় নিলেন। তাকে আরো গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করলেন। বুঝতে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেললেন। দুজনেই ডুব দিলেন প্রেমে। এই কান ওই কান হতে তাদের লাভাস্টোরিটা রাস্ট্র হয়ে গেল। মিডিয়ায় লেখালেখি হলো। তারকাদের প্রেম বলে কথা! দর্শকমহলে দুজনের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে গেল। তখন নির্মাতা নাটক লিখতেই হিল্লোল-নওশীন জুটির কথা মাথায় রেখে। তুমুল ব্যস্ততার মাঝে হুট করে বিয়েটাও সেরে ফেললেন।

নতুন বাসা উঠলেন। অগোছালো বাসাটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুললেন নওশীন। লিস্ট ধরে ধরে হিল্লোল বাজার করলেন। শুরু হলো নতুন সংসার। আজ অনেকটা বছর কেটে গেল। এক ছাদের নিচে নির্ঝঞ্ঝাটেই কাটিয়ে দিচ্ছেন জীবনটা। ভালোবাসায় পূর্ণ তাদের চিলেকোঠা, বারান্দা, উঠোন। দুজনের ভালোবাসার ভাষা একটু আলাদা। টিনএজদের মতো কাতুকুতু টাইপের নয়। পরিণত। নওশীন জানালেন, ‘আমার মনে হয়, ভালোবাসা হলো অভ্যস্ততা। একজনের প্রতি টান, মায়ায় হলো ভালোবাসা। মাঝে মাঝে রাগ করে বলি, ওর সঙ্গে থাকবোনা। কিন্তু ঠিক পরেই চিন্তা করি ওর সঙ্গে না থাকলে আমি যাবো কোথায়? ওকে ওর বাবা-মা, ছোটভাই, এই সাজানো ঘরটা তো মিস করবো! দ্যাট ইজ লাভ। বাবু বা সোনা বলে ভালোবাসা দেখানোর বয়স আমাদের নেই। এগুলো বয়ফ্রেন্ডকে বলতে ভালো লাগে। এখন আমাদের চিন্তা-ভাবনা সিরিয়াস।’

বিয়ে মানেই স্বামী-স্ত্রীর স্বাধীনতা হারানো। এটা করা যাবেনা ওটা করা যাবেনা। এমন হাজারটা তরিকা থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনরা কিভাবে জীবনটা উপভোগ করছেন? ‘এখনও আমি স্বাধীনচেতা। মাত্র কয়েকদিন আগে গেলাম এক বন্ধুর বাসায়। আড্ডায় আড্ডায় রাতটা কাটিয়ে দিলাম। হিল্লোলকে জাস্ট একটা টেক্সট করে রাখলাম, ‘আজ বাসায় আসবো না’ ব্যাস! এটা আসলে পারমিশন নেয়ার জন্য বলা না জাস্ট জানিয়ে রাখা। আবার সে ও তার বন্ধুর বাসায় চাইলেই চলে যায়। দুজনেরই স্বাধীনতার কোন ঘাটতি নেই।’

ব্যক্তি হিল্লোল আসলে কেমন? ‘খুব ঠান্ডা স্বভাবের। কথা খুব কম বলে। উল্টোদিকে আমি আবার খুব চিল্লাচিল্লি করি। সে সহ্য করে। আমি একটু টিপটপ টাইপের। ঘরের সব জিনিস থরে থরে সাজিয়ে রাখি। পান থেকে চুন খসতে দেই না। খাবারে তিন চারটা আইটেম না হলে চলে না। কিন্তু ও আমার চেয়ে আলাদা। খাবার একটা হলেই হলো। এ নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই।’ তার কোন খারাপ স্বভাব নাই? একটা আছে। তবে এটাকে খারাপ বলবো কিনা বুঝতে পারছিনা। ওর একরোখা টাইপের। যা বলে সেটাই করে ছাড়ে। তবে এটা নিয়ে খুব একটা প্রবলেম হয় না। আমি ছাড় দিই।’

আজ হিল্লোলের জন্মদিন। জন্মদিনে কি গিফট দেন? ঘড়ি ওর খুব পছন্দ। সম্পর্ক শুরু থেকে প্রতি জন্মদিনে ভিন্ন ভিন্ন ব্রান্ডের ঘড়ি গিফট করি।’

সূত্র: বাংলামেইল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত