সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ মার্চ, ২০১৫ ০০:৫৬

বাংলাদেশে পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তোপের মুখে কবীর সুমন

বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচের শেষে বাংলাদেশ দলের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ভারতীয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল আক্রমণের শিকার হন কবীর সুমন।

শুক্রবার দুপুরের দিকে আক্রমণকারীদের কটুক্তির জবাবে আরেকটি স্ট্যাটাসে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন এই কিংবদন্তী গায়ক।

কবীর সুমন বলেন, ‘একটি জায়গাতেও ভারত, ভারতবাসী বা ভারতের ক্রিকেট দল সম্পর্কে কোনও কুকথা বলিনি। বরং ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সাবাশ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে বলেছি বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে আমার বেশি পরিচিত মনে হয়, তাঁদের আমি সমর্থক। - ব্যাস্! অমনি ভারতের বেশ কিছু ফেসবুক্বিদ যে গালাগালির ঝড় ছোটালেন তা বিস্ময়কর। ভারত বা ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে তো একটি কথাও লিখিনি রে বাবা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, সকলেই ভাবছেন (এর আগে কী-এক পাত্র ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা যা ভাবছিলেন) আমি খুব আহত বোধ করব। ধ্যুৎ। বুঝতে পারি আমার ওপর অনেক বাঙালির প্রচুর রাগ। ১৯৯২ সালে 'তোমাকে চাই' বেরনোর পর থেকে তো এই নিয়েই আছি। অভ্যেস হয়ে গেছে।’ তিনি তার আগের স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ দলের পক্ষে কেন লিখেছিলেন তার কৈফিয়ত দিয়ে বলেন, ‘আমি চাইছিলাম বাংলাদেশ দল জিতুন। ভালো লাগে দলটাকে। কী করব।’

বাংলাদেশ দলকে ভালো লাগে বলেই তিনি ঐ স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি তার শৈশবের কিছু ভালো লাগার ভিনদেশি ক্রিকেটারদের কথাও লিখেন। তিনি বলেন শৈশবে তারা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ছবি স্কুলের খাতার ভেতর জমিয়ে রাখলেও কেউ কখনো দেশদ্রোহী বলেনি, বলেনি পাকিস্তান চলে যা। এমন কি ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের সেসময়ে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেও কেউ তখন বলে নি এরা ব্রিটিশদের গোলামি করছে।

তিনি বলেন, ‘কোলিন কাউড্রেকে নিয়ে কলকাতার বিপুল সংখ্যক দর্শকের মাতামাতি দেখে কেউ কিন্ত বলেনি - এ মা, এরা এখনও ব্রিটিশের পা-চাটা, এখনও মন থেকে গোলামি যায়নি!’

সেই নিরপেক্ষ যুগ এখন আর নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘না। সেই যুগ আর নেই। সেই ক্রিকেটও আর নেই। সে-যুগে ভারতীয় দলের সঙ্গে পাকিস্তান দলের খেলা থাকলে কেউ বলত না 'আজ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।' আজকের মতো এতো বিপুল টাকার খেলাও ছিল না তখন। আমি যে-যুগের গর্বিত উপমহাদেশীয় সেই যুগে একদিকে ভারত-পাকিস্তানে বোকাবোকা যুদ্ধও হচ্ছে, আর অন্যদিকে পাকিস্তানের দুই মহাশিল্পী আচার্য সালামাত আলি খান ও আচার্য নাজাকাত আলি খানের খেয়ালের অনুষ্ঠান ছাড়া কলকাতার কোনও রাগসঙ্গীতের আসর সম্ভবই হচ্ছে না। ১৯৬২ সালে তাঁদের গাওয়া পাহাড়ি ঠুংরির ৪৫ আর পি এম ডিস্ক যখন বেরলো ও ভারতের শ্রোতাদের কয়েক মাসের মধ্যে জয় করল কোনও ভারতীয় কিন্তু ভাবতেও পারতেন না যে - এই দুই শিল্পী পাকিস্তানের, অতএব তাঁদের পছন্দ করা মানে দাঁড়াবে দেশদ্রোহিতা করা, ভারতের সঙ্গে বেইমানি করা। কোনও কিছু ব্যাখ্যা করার জন্য নয়, এমনিই লিখেছি। সময় ফুরিয়ে আসছে যে। এই ধরণের স্মৃতিচারণ হয়তো কারুর কাজে লাগবে। আমার বিরোধিতা করা যাঁদের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের নিরেট মগজে কিছুই ঢুকবে না। এই লেখাটা পড়ে স্বাভাবিক মানুষদের হয়ত ভালো লাগবে। কে বলতে পারে।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আবার বলছি, আমি চাইছিলাম বাংলাদেশ দল জিতুন। ভারতের দলকে গতকালও সাবাশ জানিয়েছি, আজা আবার জানালাম। কিন্তু আমার আনন্দ হতো বাংলাদেশ দল জিতলে।’

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত