নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ অক্টোবর, ২০১৫ ১৪:২৯

রুদ্রকে নিয়ে কবির সুমন (ভিডিও)

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে লিখেছিলেন দুই বাংলার প্রখ্যাত শিল্পী কবীর সুমন।
আজ রুদ্র'র ৫৯ তম জন্মিদন। ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর জন্ম নেওয়া রুদ্র বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৪ বছর। রুদ্র'র জন্মদিনে কবির সুমন'র লেখাটি পুণঃমুদ্রন করা হলো।

‘প্রকৃত আধুনিক বাংলা গানের স্রষ্টাও রুদ্র’
কবির সুমন

আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পর্কে খুব কমই জানি। তার কিছু কবিতা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। বুঝেছিলাম তিনি ছিলেন এক বেপরোয়া বোহেমিয়ান। নানা কৃত্রিমতা ও ভণ্ডামিতে ভরা আমাদের নাগরিক সমাজের লোক নন। প্রকৃত আর্টিস্টের মতোই তিনি ছটফটে, অধৈর্য, বেহিসেবি, বাউণ্ডুলে, নিজের-আখের-না-গোছাতে চাওয়া, নিজের সম্পর্কে যত্নবান হওয়ার ইচ্ছে পোষণ না করা, দামাল।

তার লেখা পড়ে মনে হয়েছিল কোনো নিয়মে বা রীতি-নীতিতে তিনি বাঁধা থাকার পাত্র নন। তিনি শুধু লেখায় নয়, যাপনে বিশ্বাসী। তার লেখা মনে হয়েছিল, যাপন-ভিত্তিক। সে যাপন অনেকেরই পছন্দ হবে না। তাতে তার কিছু যেত আসত বলে আমার অন্তত মনে হয় না, যদিও তাকে কখনো দেখিনি, তার সম্পর্কে বিশেষ জানিও না।

তার একটি গান, ‘আমার ভিতর বাহিরে’ আমি শিখে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গেয়ে বেড়িয়েছি ১৯৯৮/১৯৯৯ সালে। দুটি বছর এমন কোনো অনুষ্ঠান আমি করিনি, যেখানে এ গানটি আমায় গাইতে হয়নি। হাজার হাজার শ্রোতা এ গানটি শিখে নিয়েছিলেন এবং প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমি শ্রোতাদের এ গান গাইতে উত্সাহ দিতাম, তারা সমস্বরে গাইতেন। সে-যে কী সুন্দর। লাইনগুলো ভাগ করে নেয়া হতো। মেয়েরা এক লাইন, ছেলেরা এক লাইন— এই রকম। ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ থেকে সবাই একসঙ্গে। এটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমার অনুষ্ঠানে। রাস্তাঘাটে আমায় নানা বয়সের মানুষ ধরতেন গানটি আমার মুখে শুনে লিখে নেয়ার জন্য। কত অচেনা মানুষ যে এখানে ওখানে আমায় পাকড়াও করে গানের লিরিকটি আমার মুখ থেকে শুনে লিখে নিয়েছিলেন, কী বলব, একটুও অত্যুক্তি করছি না। একটি বাংলা গান যে এত লোকের এভাবে, এতটা ভালো লাগতে পারে তা কখনো দেখিনি। জানি না, বাংলাদেশে কোনো অনুষ্ঠানের শ্রোতারা কোরাসে গানটি কয়েক বছর ধরে গেয়েছেন কিনা। আমি অন্তত তেমন খবর পাইনি। এ পশ্চিমবাংলায় কিন্তু আমার অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠানে হল-ভর্তি শ্রোতা (নানা বয়সের) এ গানটি গেয়েছেন। কয়েক হাজার মানুষের মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল এ গান।

এ গানটির মাধ্যমে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নামও ছড়িয়ে পড়েছিল আমাদের এ রাজ্যে। এ ব্যাপারে আমার ভূমিকা ছিল নিতান্ত অনুঘটকের। তবে আমার ছোট্ট এক টুকরো গর্বও আছে এ ব্যাপারে। অসামান্য একটি প্রকৃত আধুনিক বাংলা গানের স্রষ্টাও রুদ্র। তার নিশ্চয়ই আরো গান ছিল। আমার দুর্ভাগ্য আমি সেগুলো শুনিনি। জীবনে প্রথম রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পর্কে কিছু বলার সুযোগ দিলেন আপনারা আমায়। আমি কৃতজ্ঞ থাকলাম। নমস্কার, আদাব।

ভিডিও :

আপনার মন্তব্য

আলোচিত