বিনোদন ডেস্ক

২৯ জুলাই, ২০১৬ ২৩:৫৬

‘কবিতাকে গান বানিয়ে প্রচুর গালি খেয়েছি’

‘কবিতাকে গান করতে গিয়ে জীবনে গালাগালি খেয়েছি প্রচুর। অনেকের কাছ থেকেই অনেক রকমের গালাগালি যেমন খেতে হয়েছে, তেমনি নানা সমালোচনাও শুনতে হয়েছে। তবুও একটা সময় কবিতা থেকে গান করেছি। কিন্তু আজ আফসোস হয়, এই কবিতাকে গান করার যে ধারাটা আমি শুরু করেছিলাম, সেটাকে আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না।’ অনেকটা আফসোসের সুরেই কথাগুলো বলছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সামনে লোপামুদ্রা বলেন, ‘আমার গানের জগতের ২৫ বছরের মধ্যে ২০টি বছর একজনকে উৎসর্গ না করলে হয়তো মহা অন্যায় করা হবে। তিনি হলেন সমীর চট্টোপাধ্যায়। যিনি না থাকলে ‘বেণীমাধব’ কিংবা ‘সাঁকোটা দুলছে’ কবিতাগুলো হয়তো গানই হতো না। আগামী দিনে কবিতা নিয়ে যদি আমাকে কখনো গান করতে হয়, তবে সমীর চট্টোপাধ্যায়কে অবশ্যই কাজ করতে হবে। নচেত কবিতা নিয়ে আর গানই করব না। এ ছাড়া কবিতাকে গান করার মধ্যে যে সিরিয়াস ভাবনা আছে, এখন সেই ভাবনার সীমায় পৌঁছে শ্রোতারা গুরুত্ব দিয়ে আদৌ গান শোনেন কি-না, সেটাও একটা বড় বিষয়। পাশাপাশি, আমি নিজেকে এখন কবিতাকে গান করার মতো এমন একটা সিরিয়াস ব্যাপারে ১০০ ভাগ উৎসর্গ করতে পারব কি-না সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কারণ, আমাকে এখন মাচাতে গান গাইতে হয়। সেখানে ‘অবণী বাড়ি আছো’র পাশাপাশি ‘ছাতা ধরো গো’র মতো গানও গাইতে হয়। যেহেতু আমার সঙ্গে আরো অনেক ছেলের রুটি-রোজগার জড়িয়ে রয়েছে।’

কথায় কথায় লোপামুদ্রা বললেন, ‘কবিতাকে গান করা নিয়ে একটা সময় কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি আমাকে। অনেকেই বলেছেন, কবিতাগুলোকে নষ্ট করার কোনো মানে নেই। অনেকে আবার বলেছেন, কবিতাকে গান করতে গিয়ে কবিতার নিজস্বতাই নাকি নষ্ট করে ফেলছি। এ ধরনের অনেক কথাই শুনেছি। তবুও প্রাপ্তি ছিল অনেক কিছুই। কবিদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। কবি জয় গোস্বামী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়দের সাহায্য ও ভালোবাসা পেয়েছি। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা নিয়ে তো তছনছ হয়েছে। তাঁর গদ্যকবিতা খোলনলচে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তবুও তিনি আপত্তি করেননি কোনোদিন। কবি জয় গোস্বামীকে তো বহুবার গান লেখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু উনি রাজি হননি। তবে কবিদের মধ্যে ইদানীংকালে শ্রীজাত সেই সীমারেখাটা ভেঙে বেরিয়েছেন। আগামী দিনে শ্রীজাতের কথায় গান গাইব আমি।’

বর্তমানের বাংলা সিনেমাতেও গান গাইতে চান লোপামুদ্রা। জানালেন, ‘এখন সিনেমায় যে ধরনের গান হচ্ছে, তা আমি গাইতেই পারি।’ এরই মধ্যে শিল্পী অনুপমের সঙ্গে একটা গান গেয়েও ফেলেছেন। আগামী দিনে ডাক পেলেই সিনেমাতেও গান গাইতে চান লোপামুদ্রা।

আজ সংগীতজীবনের পঁচিশ বছর পার করে এসেও লোপামুদ্রার চিন্তা হয়, ‘কাল থেকে যদি আর গাইতে না পারি। কারণ, এখন যত দিন যাচ্ছে, তত সময়টা পাল্টাচ্ছে। মৌলিক অ্যালবাম এখন সংকটে। আর সেই সংকটের ঘূর্ণিপাকের মধ্যে সবাইকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে বলে মনে করেন লোপামুদ্রা। জানালেন, ‘আমার আশা একদিন বেসিক অ্যালবাম আবার সমাদর পাবে।’ 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত