বিনোদন প্রতিবেদক

২৯ আগস্ট, ২০১৫ ২০:৫৭

বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার সুমাইয়া শিমু দম্পতি

সেই কবে বাঙালি কবি লিখেছেন- 'কালো আর ধলো বাইরে কেবল/ ভেতরে সবার সমান রাঙা'। আর বাঙালি ঔপন্যাসিকের জিজ্ঞাসা- 'কালো যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দো কেনে?'
অথচ এই আধুনিক যুগে এসেও বাঙালি তারুণ্যের বর্ণবাদি আক্রমনের শিকার হতে হয়েছে এক অভিনেত্রী ও তাঁর স্বামীকে।

সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু। গত শুক্রবার ঢাকার একটি হোটেলে তাঁর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। শিমুর বর নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। নিউজিল্যান্ডের মেসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস করেছেন তিনি।

বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নবদম্পতির ছবিসহ শিমুর বিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বর্ণবাদী মন্তব্য। শিমুর স্বামীর গায়ের রং, চেহারা নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করেন অনেকে। ফেসবুকে- অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সংবাদের নিচে কমেন্টে চলতে থাকে বর্ণবাদী মন্তব্য।

এমন কুৎসিত মন্তব্যে বিরক্ত হয়ে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী পাল্টা মন্তব্য করেছেন, 'আগে নিজের ও পরিবারের পছন্দে বিয়ে করা হতো। এখন দেখছি বিয়ের আগে ফেসবুকারদের পছন্দ-অপছন্দও জেনে নিতে হবে।'

বর্ণবাদী আক্রমণকারীদের বেশিরভাগের মন্তব্য শিমুর স্বামীর গায়ের রং নিয়ে। অনেকে নজরুল ইসলামের আর্থিক স্বচ্ছলতাকেও বাজেভাবে ইঙ্গিত করেছেন। নজরুল ইসলামকে বিয়ে করায় শিমুর জন্য হাহাকারও করতে দেখা গেছে অনেককে।

অনেক নারীও আছেন বিরুপ মন্তব্যকারীদের দলে। যদিও গায়ের রং ও চেহারা নিয়ে নারীদেরই বেশিরভাগক্ষেত্রে বিরুপ মন্তব্যের শিকার হতে হয়।

অবশ্য সুমাইয়া শিমুর পছন্দকে সম্মান জানিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্যকারীদেরও একহাত নিয়েছেন অনেকে।

সাংবাদিক ও গীতিকার ইশতিয়াক আহমেদ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‌''আমি যার সাথে ভালো থাকতে পারবো, তাকেই বিয়ে করবো।'
সারাজীবন সুমাইয়া শিমুদের এইসব ডায়ালগে মুগ্ধ হয়ে হাততালি দেওয়া দর্শকরাই এখন ঘুমাতে পারছেনা, সে কাকে বিয়ে করলো এই চিন্তায়...'' ।

ব্লগার ওমর ফারুক লুক্স লিখেছেন,- 'হলিউডের কোনো শেতাঙ্গ নায়িকা একজন কৃষ্ণাঙ্গ নায়ককে বিয়ে করেছেন- শুনলে আমরা তাদেরকে সাহসী আখ্যা দিয়ে প্রশংসায় পন্ঞ্চমুখ হই।
অথবা, একজন শেতাঙ্গ রাজনীতিবিদ কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে বিয়ে করলে তাদের ছবি আমরা দেয়ালে বাঁধিয়ে রাখি।
কিন্তু, নিজের বোন কোনো কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের প্রেমে পড়েছে- ভাবলেই মুখোশ থেকে বাঙালির আসল চেহারাটা বের হয়ে যায়।'

সাজিদ হাসান লিখন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,- 'খুব ছোটবেলায় বর্ণমালা শেখার আগেই আমরা আমাদের ছেলেদের শেখাই,-"অতঃপর রাজকুমার সুন্দরী রাজকন্যাসহ অর্ধেক রাজত্ব পাইলো।"
.তারপর একটু বড় হলেই বলি,-"নো বর্ণবাদ নো যৌতুক।"
ততক্ষণে সুন্দরী মেয়ে আর লোভনীয় যৌতুক তার কচি মগজে গেথে গেছে কিন্তু !
.গোড়ার এই গলদ শোধরাবে কে ??'

ব্লগার হাসিম মাহমুদ লিখেছেন,- 'সুমাইয়া শিমুর হাজবেন্ড যেই ভুলটা করছে সেটা হলো সে আবহমান বাংলার ঐতিহ‍্য মেনে যথেষ্ট পরিমান ফটোশপ খিচে খোমা ফরসা করার দিকে নজর দেয় নাই। এই কাজটা করলে রেসিস্ট বাঙ্গালির চিত্ত ক্ষিপ্ত হতো না।
বাই দ‍্য ওয়ে, ফটোশপে খোমা ফরসা করার কোন রেকর্ড নাই এরকম কে কে আছেন আমার প্রোফাইলে? সুমায় থাকতে সাবধান হৌন ও নিয়মিত ফেয়ার এন্ড লাভলি ঘষুণ আর এইসব ঘটনাপাতি সামনে এলে বিপ্লব করে ফেইসবুক ভাসিয়ে দিন।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত