বিনোদন ডেস্ক

০৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০১:৫২

মনপাখির চরিত্রে জ্যোতি সিনহা

শুভাশিস সিনহার পরিচালনায় ‘ও মনপাহিয়া’

বছরখানেক হলো এক জনপদে বৃষ্টি নেই। বৃষ্টির অভাবে ফসল ফলছে না। মানুষের দিন কাটছে অনাহারে। গরিব কৃষক তম্বা ক্ষেতের পাশে মন খারাপ করে বসে থাকেন। এমন সময় হঠাৎ একটি গুলিবিদ্ধ পাখি তার সামনে এসে পড়ে। পাখিটি ছিল অদ্ভুত রঙের। তম্বা ভাবেন পাখিটিকে নিশ্চয়ই ঈশ্বর পাঠিয়েছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস পাখিটি কোনো শুভবার্তা নিয়ে এসেছে। পাখিটিকে যত্ন করে বড় করলে ঈশ্বর খুশি হবেন এবং তার ওপর করুণা করবেন। তম্বার এলাকা অভিশাপমুক্ত হবে। ফলে আবার বৃষ্টি হবে। ফসল ফলবে। দুর্দিন কেটে যাবে। এসব চিন্তা করে তম্বা পাখিটিকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। পাখিটিকে নিজের কাছে রেখে বড় করতে চান। কিন্তু বাদ সাধে তার পরিবারের লোকজন। তার স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা কোনোভাবেই পাখিটিকে বাড়িতে রাখতে দিতে চান না। কিন্তু কৃষক তম্বার ছোট্ট প্রতিবন্ধী মেয়ে পাখিটিকে ছাড়তে চায় না। তাদের কাছে রেখে দিতে চায়। অবশেষে মেয়ের ইচ্ছার কাছে হার মানেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। পাখিটিকে তারা লালন-পালন করতে থাকেন। পাখিটি দিনে দিনে বড় ও সুন্দর হয়ে উঠতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে কানাঘুষা চলে। ধীরে ধীরে পাখিটির ওপরে স্থানীয়দের নজর পড়তে থাকে। কেউ পাখিটিকে কিনতে চায়, কেউবা পাখিটিকে খেয়ে ফেলতে চায়। এ কারণে স্থানীয় মহাজন, প্রভাবশালীরা গরিব কৃষক তম্বাকে নানা রকম প্রলোভন দেখাতে থাকেন। কিন্তু তম্বা তাদের লালসার হাত থেকে পাখিটিকে বাঁচাতে লড়াই করে যান। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তম্বা পাখিটিকে বাঁচাতে পারেন না।

এ রকম একটি গল্প নিয়ে মণিপুরি থিয়েটার নির্মাণ করেছে মঞ্চনাটক ও মনপাহিয়া। নাটকের রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন শুভাশিস সিনহা। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় নাটকটি মঞ্চস্থ হবে।

‘নতুনের উৎসব ২০১৯’ নাট্যোৎসবের অংশ হিসেবে শুভাশিস সিনহার ও মনপাহিয়া নাটকটি মঞ্চায়িত হবে। এ উৎসবের আয়োজন করেছে নাট্যগোষ্ঠী নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। গত ২৯ নভেম্বর নাট্যোৎসবটি শুরু হয়েছে। চলবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ মঞ্চনাটক নির্দেশকদের নতুন নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তাহব্যাপী নতুনের উৎসব ২০১৯ শিরোনামে এ নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে তারা।

নতুনের উৎসব ২০১৯—এ সাতজন তরুণ নির্দেশক তাদের নতুন মঞ্চনাটক মঞ্চায়নের সুযোগ পেয়েছেন। এ সাত তরুণ নির্দেশকের একজন হলেন শুভাশিস সিনহা। তার নিদের্শনায় আজ উৎসবের ষষ্ঠ দিনে ও মনপাহিয়া নাটকটি মঞ্চায়িত হবে।

নতুন এ নাটক নিয়ে মণিপুরি থিয়েটারের সভাপতি ও নাট্যনির্দেশক শুভাশিস সিনহা বলেন, ‘আমরা কয়েক মাস ধরেই ও মনপাহিয়া নাটকের মহড়া করছি। মনপাহিয়া হলো একটি মণিপুরি শব্দ। পাহিয়া মানে পাখি। ফলে ও মনপাহিয়ার অর্থ দাঁড়ায় ও মনপাখি। নাটকের কাহিনী একটি পাখিকে কেন্দ্র করে। চারপাশের মানুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে একটি পাখিকে রক্ষার জন্য একজন কৃষক আপ্রাণ চেষ্টা করে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাখিটিকে বাঁচাতে পারেন না। এভাবেই এগোয় নাটকের গল্প। প্রকৃতি ও প্রাণীদের নিয়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই মূলত এমন গল্প ভাবা হয়েছে। এ নাটকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি আমরা ২৫ জন। মঞ্চে অভিনয় করবেন প্রায় ১৫ জন।’

মণিপুরি থিয়েটারের নাম এলেই আরেকজন ব্যক্তির নাম মনে পড়ে যায়, তিনি হলেন জ্যোতি সিনহা। প্রায় ২২ বছর ধরে এ থিয়েটারের সঙ্গে কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন। এরপর ২০১৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্বে এমফিল করেন। ও মনপাহিয়া নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র একটি পাখি। আর সেই পাখির চরিত্রে জ্যোতিকে দেখা যাবে। নিজের চরিত্র সম্পর্কে জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘ও মনপাহিয়া নাটকে আমাকে ভিন্ন ধরনের চরিত্রে দেখা যাবে। নাটকে আমি একটা পাখি।’ পাখির চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতি সিনহা বলেন, ‘আমি তো একজন মানুষ। স্বভাবতই মানুষ হয়ে পাখির ভূমিকায় অভিনয় করা অনেক চ্যালেঞ্জের। পাখিরা যেভাবে চলাফেরা করে, সেগুলো রপ্ত করতে হয়েছে। পাখির মতো ডানা লাগানো, ভারসাম্য ঠিক রাখা—সব মিলিয়ে এ চরিত্রে অভিনয় করা আমার জন্য সত্যিই চ্যালেঞ্জিং।’ ও মনপাহিয়া  হতে চলেছে মণিপুরি থিয়েটারের মঞ্চায়নে ৩৫তম নাটক।
সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত