সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৬:০৯

মানসিক সমস্যায় ভুগছেন চলচ্চিত্র ও টিভির ৮৭ শতাংশ কলাকুশলী

বিনোদনের অন্যতম প্রধান দুই অনুষঙ্গ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন। এই দুই মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত কলাকুশলী, যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে আনন্দ দেন, যদিও কর্মক্ষেত্রে তাদের শারীরিক-মানসিক-আর্থিক অবস্থা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র ও টিভির কলাকুশলীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। নতুন এ গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র ও টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় নয়জনই (৮৭ শতাংশ) মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ‘দ্য ফিল্ম অ্যান্ড টিভি চ্যারিটি’র নতুন গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দ্য চ্যারিটি, যা আগে সিটিবিএফ নামে পরিচিত ছিল। চ্যারিটিটি এ গবেষণা ‘দ্য লুকিং গ্লাস’ নামে প্রকাশ করেছে।

২০১৯ সালে ওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের পরিচালিত এ গবেষণায় ইন্ডাস্ট্রির প্রায় ৯ হাজার ৪০০ পেশাদার কলাকুশলী অংশ নিয়েছিল। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের স্ক্রিন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার লোক কাজ করছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কলাকুশলীরা জাতীয় গড়ের তুলনায় দ্বিগুণ উদ্বেগ অনুভব করছেন এবং নিজেদের ক্ষতি করার প্রবণতাও অন্যদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তাদের মধ্যে নিজেদের ক্ষতি সাধন ও আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি।

গবেষণার ফলাফলে বলা হচ্ছে, চলচ্চিত্র ও টিভি ইন্ডাস্ট্রির অর্ধেকের বেশি শ্রমিক আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন এবং ১০ জনের মধ্যে একজন বাস্তবে তা করার চেষ্টা করেছিলেন। এ বিষয়ে ‘দ্য ফিল্ম অ্যান্ড টিভি চ্যারিটি’র প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স পামফ্রে সংবাদমাধ্যম স্ক্রিনডেইলিকে বলেছেন, ‘আমি ২০১৭ সালের অক্টোবরে চ্যারিটিতে যোগ দেয়ার পর এই ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার কথা শুনেছি... তখন এটা ইন্ডাস্ট্রির গোপন বিষয় বলে মনে হয়েছিল।’

আত্মহত্যার বিষয়টির যথার্থতা প্রমাণে ২০১৭ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে লোকেশন ম্যানেজার মাইকেল হার্ম আত্মহত্যা করেছিলেন। এর আগে তিনি নিজের কাজের প্রতি তার নিঃসঙ্গতা ও কলাকুশলীদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রির আরো যত্নবান হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন।

এদিকে চলচ্চিত্র ও টিভি কলাকুশলীদের প্রতি ১০ জনের আটজন অর্থাৎ ৮৪ শতাংশেরই কর্মক্ষেত্রে বুলিংয়ের শিকার বা হয়রানির অভিজ্ঞতা রয়েছে।

গবেষণাটিতে আরো বেশকিছু তথ্য উঠে এসেছে। যেমন চলচ্চিত্র ও টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে আটজনের একজন সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, যা অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় অনেক বেশি। এতে প্রায় ৫৭ শতাংশ কলাকুশলীর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ (৭৮ শতাংশ) চলচ্চিত্র ও টিভি কলাকুশলী পেশাদারিত্বের বাইরে অন্য কাজের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলার চেষ্টা করছেন, যা অন্য ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্যের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু শুধু ২৮ শতাংশ কলাকুশলী বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আলোচনা করার ফলে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু প্রায় ৫৪ শতাংশ কর্মীর অভিযোগ, এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি। এবং ৫ শতাংশের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়েছে বলে গবেষণায় বলা হচ্ছে।

চলচ্চিত্র ও টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করেন, তাদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের বিষয় ও গল্প নিয়ে কাজ করতে হয়। চ্যারিটির এ গবেষণায় বলা হচ্ছে, ট্রমাটিক গল্প নিয়ে পর্দায় কাজ করতে গিয়ে মাত্র ১৬ শতাংশ কলাকুশলী সমর্থন অনুভব করেন।

অনিয়ন্ত্রিত কর্মঘণ্টা, সেটে শুটিং চলাকালীন অথবা এর বাইরে উভয় ক্ষেত্রে চাপ, একাকিত্ব, ব্যাপক হয়রানি ও বুলিংয়ের কারণে কলাকুশলীরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেন। এছাড়া কাজের মধ্য দিয়ে তারা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার কথা বলতে পারছেন না বলেও গবেষণার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

অ্যালেক্স পামফ্রে গবেষণার ফলাফলকে ‘সত্যিই কষ্টকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ গবেষণার ইতিবাচক দিক হলো আমাদের কাছে এগুলো পরিবর্তনের জন্য যথাযথ কারণ রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত