বিনোদন ডেস্ক

০২ অক্টোবর, ২০১৫ ১৬:৪৯

অর্ধশতাব্দি পেরিয়ে নাগরিক বাউল

কারো কাছে তিনি গুরু, কারো কাছে নগর বাউল। তিনি জেমস। বাংলা রক গানের এক অনণ প্রতিভা। বাংলা রক গানকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে হাতেগোনা যে কয়েকজন শিল্পীর নাম উঠে আসে তার মধ্যে জেমস অন্যতম।

১৯৬৪ সালের এই দিনে (২ অক্টোবর) নওগাঁতে জন্মগ্রহণ করেন জেমস। আজ তাঁর পঞ্চাশতম জন্মদিন। কেবল বাংলাদেশ নয় এই উপমহাদেশেই দারুণ জনপ্রিয় জেমস।

গানে গানে যিনি ডাক দিয়ে গেছেন- 'এসো চুল খুলে পথে নামি/ এসো উল্লাস করি।' কিংবা ‌জনমদুঃখী বাংলায় গয়েছ দুঃখজয়ের গান- 'দুঃখিনি দুঃখ করো না।'

নওগাঁয় জন্ম হলেও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। ৫১ বছরে পা রাখা উপমহাদেশের অন্যতম এই রক তারকার এবারের জন্মদিনটি কাটবে বিমানে বসে।

জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবি, যিনি পরবর্তীতে চট্রগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংগীত জেমসের পছন্দের হলেও পরিবার তা পছন্দ করত না। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় হাতে তুলে নেন গিটার। গানের প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাই গান নিয়ে তার বাবার ছিল ঘোরতর আপত্তি। গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে ঘর ছাড়েন কিশোর বয়সে। জায়গা করে নেন চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং-এর ছোট্ট একটি কামরায়। যেটি নিয়ে তিনি গানও করেছেন পরবর্তী সময়ে।


ফিলিংস ও জেমস
জেমসের ভাষায়, তারকা হয়ে ওঠার আগের সেই বোর্ডিং জীবন ছিল কঠিন ও সংগ্রামের। সারাদিন কেটে যেত গান তোলাতে আর সন্ধ্যা গড়ালেই চলে যেতেন নগরীর নাইট ক্লাবে গাইতে। এভাবে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। সে সময় তার ব্যান্ড ইংরেজি কাভার গান করতো।

চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ব্যান্ড ‘ফিলিংস’ এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ‘নগর বাউল’ নামে ব্যান্ড গঠন করেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন। গিটার বাজানোতেও তার দারুন পটুতা রয়েছে। প্রথম দিকে তিনি জিম মরিসন, মার্ক নফলার এবং এরিক ক্ল্যাপটনের মত সংগীত শিল্পীদের গানে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।


এই সময়ের মঞ্চে জেমস
১৯৮৭ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ মুক্তি পায়। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’। পরবর্তীতে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ‘নগর বাউল’। তার অ্যালবামগুলো হলো- স্টেশন রোড (১৯৮৭), অনন্যা (১৯৮৮), জেল থেকে বলছি (১৯৯০), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), নগর বাউল (১৯৯৬), দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), কালেকশন অব ফিলিংস (১৯৯৯), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬) ও কাল যমুনা (২০০৯) । আর জনপ্রিয় গান গুলোর মধ্যে মা, দুষ্টু ছেলের দল, বিজলি, লেইস ফিতা লেইস, বাংলাদেশ, বাবা, ভিগি ভিগি ইত্যাদি।


নব্বই দশকের মঞ্চে জেমস
শুরু থেকে বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতায়ও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন জেমস। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক প্রিতমের আমন্ত্রন পান তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেন। তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা পায় তখন। এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সালে তিনি ‘ও লামহে’ ছাবিতে ‘চাল চালে’ গানে কন্ঠ দেন। ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’তে ‘রিশতে’ এবং ‘আলবিদা’ শীর্ষক আরও দুটি গানে কণ্ঠ দেন। বলিউড থেকে সর্বশেষ ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্নিং’ ছবির ‘বেবাসি’ গানটি মুক্তি পায়। বলিউডে গাওয়া জেমস এর সবগুলো গানই উপমহাদেশে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সঙ্গে দেশীয় চলচ্চিত্রের প্লে-ব্যাক তো রয়েছেই।

২০০০ সালের প্রথম দিকে জেমস পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহণ করেন। এটিই ছিল তার কাজ করা প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্র। এই বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রচার হয়। এরপর তিনি ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। বলিউড চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’র কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়। যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে বলিউডের ‘ওয়ার্নিং’ ছবির ‘বেবাসি’ গানের ভিডিও চিত্রেও কাজ করেন জেমস।

জেমসের প্রথম স্ত্রী চিত্রনায়িকা রথি, ২০০২ সালে তারা আলাদা হয়ে যান। এরপর বিয়ে করেন ভক্ত বেনজির সাজ্জাদকে। দুই সংসারে জেমসের দুটি কন্যা সন্তান জান্নাত এবং জাহান ও একটি পুত্র দানেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত