ডা. আশরাফী-নূর বদরুন্নেছা

০১ মে, ২০২৩ ১৫:০৮

নারীর নীরব কষ্টের নাম এন্ডোমেট্রিওসিস

এন্ডোমেট্রিওসিস নারী দেহে এক নীরব ঘাতক ব্যাধির নাম, যা একজন নারীর সুস্থ মানসম্পন্ন জীবনযাপনে বিশেষ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ ব্যাধি একজন নারীর নীরব কষ্টেরও কারণও বটে। এন্ডোমেট্রিওসিস হল এক ধরনের স্ত্রীরোগ। জরায়ুর ভেতরের আস্তরণকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। এর যতখানি প্রকাশিত, তার বেশিটাই থাকে লুক্কায়িত।

এন্ডোমেট্রিয়ামে অবস্থিত বিশেষ ধরনের কোষগুচ্ছ কোনো কোনো সময় জরায়ু গহ্বরের বাইরেও অবস্থান নেয় (ডিম্বাশয়) ফলে প্রদাহ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি তৈরি হয়। এই অবস্থাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে। বাইরে থেকে দেখে বা কোনো পরীক্ষা করে এই রোগ শনাক্ত করা মুশকিল। আলট্রাসনোগ্রাফিতে সামান্য ধারণা পাওয়া যেতে পারে। একমাত্র ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে সঠিকভাবে সমস্যাটি নির্ণয় করা যায়।

বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১৯০ মিলিয়ন নারী এই সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১২ লক্ষ নারীর এন্ডোমেট্রিওসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। কারা আক্রান্ত হয় ? কিশোরী বয়স থেকে শুরু করে যেকোন বয়সে হতে পারে।

উপসর্গ

  • মাসিক চক্রের পূর্বে, মাসিক চক্রের সময় বা পরে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যাথা যা ব্যথানাশক ঔষধ দ্বারা উপশম হয় না।
  • সহবাসের সময় ব্যথা।
  • মাসিকচক্রের সময় অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর বা দীর্ঘ কালীন রক্তপাত ।
  • বন্ধ্যত্ব।
  • মলত্যাগ ও মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করা।
  • অবসাদ।

কারা ঝুঁকিতে আছেন

  • ৩০-৪৫ বছর বয়সী নারী
  • যাদের সন্তান হয়নি বা বন্ধ্যত্ব আছে
  • যারা প্রথম সন্তান দেরিতে নিয়েছেন
  • এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস

সচেতনতা বা চিকিৎসার গুরুত্ব

অজ্ঞতা, অবহেলা, কুসংস্কার, সামাজিক ভয়, সচেতনতার অভাব, অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় এর কারণে এই রোগীর সংখ্যা যেমন ক্রমশ বেড়েই চলছে তেমনি ডায়াগনোসিস বিলম্বের কারণে (প্রায় ৭-৮ বছর) বিভিন্ন জটিলতা যেমন চকলেট সিস্ট বা বন্ধ্যত্বের মত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রতিকার কী

এন্ডোমেট্রিডসিম নিরাময় যোগ্য নয়। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো নিলে কিছুটা কষ্ট লাঘব করা সম্ভব।
১। ভিটামিনযুক্ত খাবার গ্রহণ (যে খাবারে ভিটামিন এবিসি আছে)
২। প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি, ফল, খেজুর জাতীয় শুকনাফল, সামুদ্রিক মাছ, টকদই, ব্রাউনরাইস খাওয়া, বেশী পরিমাণে পানি পান করা।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করা (৩০-৪০ মিনিট)
৪। যোগব্যায়াম (৫-১০ মিনিট)
৫। বিলম্বে বিয়ে না করা।
৬। বিবাহিত হলে বাচ্চা নিতে দেরী না করা।

চিকিৎসা

১। এক্সপেক্টেন্ট
২। ঔষধ

  • আইবুপ্রোফেন
  • মেফেনোমিক এসিড
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণের পিল (অবিবাহিতদেরও দেয়া যায়)
  • প্রজেস্টেরন
  • ডাইনোজেস্ট

৩। সার্জিক্যাল
এন্ডোমেট্রিওসিস চেনা সমস্যার অন্তরালে অচেনা ভয়ংকর কষ্ট যা সচেতনতার মাধ্যমে অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। আর এই দায়ভার আমাদের সবার কারণ নারী কারো মা, মেয়ে অথবা বোন।

ডা. আশরাফী-নূর বদরুন্নেছা
এমসিপি এস, এফসিপি এস (অব্স এন্ড গাইনি)
আবাসিক সার্জন (গাইনি)
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত