ডা. তুহিন বড়ুয়া তমাল

১৫ জুলাই, ২০২৩ ২০:১৯

আপনার শিশুর ত্বকের যত্ন ঠিকঠাক নিচ্ছেন তো?

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত

আপনার বাচ্চার ত্বক/চামড়ার যত্ন ঠিকঠাক নিচ্ছেন তো? ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা বুঝতে হলে এই লিখাটা মনযোগ দিয়ে পড়ুন।

একটা সদ্যজাত শিশুর চামড়া আপনার আমার মতো না। এদের ত্বক আমাদের চাইতে ৫০-৬০ গুণ পাতলা। জন্ম থেকে শুরু করে ৫ বছর বয়েস পর্যন্ত শিশুর চামড়া অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। একারনে এদের ত্বকের যত্ন আমাদের চাইতে ভিন্ন হবে।

১। ভার্নিক্স ক্যাজিওসা:
এই জিনিস টা আপনারা দেখেছেন।  শিশু যখন জন্ম নেয় তার সারা গায়ে সাদা সাদা মোমের মতো লেগে থাকে। এইটা বাচ্চার শরীরের জন্যে উপকারী। এইটা শরীর থেকে মুছে ফেলা যাবেনা। প্রথম গোসলের আগ পর্যন্ত চামড়ায় থেকে গেলে বাচ্চা সুরক্ষা পাবে।

২। প্রথম গোসল:
WHO এর মতে জন্মের পর বাচ্চার প্রথম গোসল করাবেন ২৪ ঘন্টা পর। এই গোসলের পানির তাপমাত্রা হবে ৩৭-৩৭.৫ এর মধ্যে। গোসলের সময় ৫-১০ মিনিট। বাচ্চাকে বাথটাবে গোসল করালে পানির উচ্চতা হবে ৫ সে.মি.। বড়দের সাবান ব্যবহার করা যাবেনা। সবচেয়ে ভালো হয় Synthetic Detergent (Syndet) লিকুইড ক্লিঞ্জার ব্যবহার করলে। এসব লিকুইড সাধারণত Ph neutral হয় অথবা সামান্য অম্লধর্মী, যা শিশুর ত্বকের জন্যে উপকারী।

৩। নবজাতক ও বাচ্চাদের নিয়মিত গোসল:
প্রতিদিন গোসল করাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন গোসলের সময় যাতে ১৫ মিনিটের বেশি না হয়। গোসলের পর দ্রুত শুকনা শুষ্ক কাপড় দিয়ে সারা গা মুছিয়ে দিতে হবে।

৪। ডায়াপার এরিয়ার যত্ন:
ডায়াপার এরিয়া সবসময় শুকনা রাখবেন। বাচ্চা পায়খানা করার পর ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে কাপড়  ভিজিয়ে পরিষ্কার করবেন। অনেকেই Wet Tissue ব্যবহার করেন পায়খানার পরে। এটা ব্যবহার করা যাবেনা। চামড়ার ক্ষতি হতে পারে।

বাচ্চাকে যদি ডায়াপার পরান-
০ থেকে ২৮ দিন বয়সের বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর এবং
১ মাস থেকে ১ বছর বয়েসী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৩-৪ ঘন্টা অন্তর ডায়াপার পরিবর্তন করা লাগবে।

৫। নাভির যত্ন:
জন্মের সাথে সাথে Hexicord 7.1% solution একবার ব্যবহার ব্যতিত নাভিতে আর কিছুই দেয়া যাবে না।

বাচ্চার নাভি পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা লাগবে। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিবেন। ডায়াপার পরালে নাভি যাতে ঢেকে না যায় খেয়াল রাখতে হবে।

৬। মাথার ত্বকের যত্ন:
নবজাতকের প্রথম 'Hair wash' নাভি পরার পর দিবেন। বেবি শ্যাম্পু (সুগন্ধি মুক্ত) ব্যবহার করতে পারেন। বাচ্চাদের সপ্তাহে দুবার বেবি শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধোয়া যাবে।

৭। নখের যত্ন:
নিয়মিত নখ কাটা লাগবে।

৮। ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার:
নিয়মিত ভাবে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যাবেনা। যদি মাঝে মধ্যে দেয়া লাগে মায়ের হাতে পাউডার মাখিয়ে বাচ্চার ত্বকে হালকা ভাবে দেয়া যাবে। বাচ্চার চামড়ায় সরাসরি পাউডার ঢালা যাবেনা। পাউডার গলা, রানের চাপায়, বগলের ভাঁজে দেয়া যাবেনা।

৯। বডি মাসাজ:
বাচ্চার শরীর মাসাজ করে দেয়া খুবই উপকারী। মাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, শরীরের বিভিন্ন অংশ শিথিল হয়। বাচ্চার শারিরীক ও মানসিক চাপ কমে যায়। এছাড়া ওজন বৃদ্ধিতে, ডেভেলপমেন্ট এ মাসাজ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাচ্চার মা/বাবা/ঠাকুরমা/দিদিমা মাসাজ দিতে পারেন। সারা শরীরে মাসাজ দিতে ১৫-৩০ মিনিট সময় লাগা উচিৎ। বাচ্চার খাবার ১-২ ঘন্টা পর মাসাজ দিবেন।

১০। ত্বকে কি তেল দিবেন:
তেল দিয়ে মাসাজ করার উপকারিতা অনেক। সরিষার তেল কিংবা অলিভ অয়েল ব্যবহার হতে বিরত থাকুন। কারন এই তেলগুলো বাচ্চার চামড়ায় অস্বস্তি করে, ডার্মাটাইটিস করে। এরা চামড়ার সুরক্ষা বলয়কে ভেঙ্গে দিয়ে চামড়ার ক্ষতি করে।

তাহলে কি ব্যবহার করা উচিত?
ব্যবহার করবেন সানফ্লাওয়ার তেল অথবা নারিকেল তেল (এক্সট্রা ভার্জিন হতে পারে) অথবা মিনারেল ওয়েল। ভালো সুপার শপে এসব তেল পেতে পারেন।

আপনার বাচ্চার জন্যে শুভকামনা রইল।

[ডা. তুহিন বড়ুয়া তমাল, এমবিবিএস, এমডি (পেডিয়েট্রিক্স), শিশু বিশেষজ্ঞ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত