তপন কুমার দাস

১৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৬:৩৭

পাখির টানে বড়লেখার ‘পাখিবাড়ি’

দিনের প্রতিটি মুহূর্ত পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। হাকালুকি হাওর এলাকায় হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়িতে বসেছে পাখির মেলা। এবারই প্রথম নয়। অনেক বছর ধরেই বাড়িটি পাখির অভয়াশ্রম হয়ে ওঠেছে। পাখির উপস্থিতির কারণে এলাকায় বাড়িটির পরিচিতিও এখন পাখি বাড়ি নামে।

পাখি বাড়ির অবস্থান মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া।

বাড়ির সদস্য ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখির দল। তখন হাওরের পাশাপাশি হাকালুকির হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়িটিও মুখরিত হয়ে ওঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে। হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা পাখি রাজ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল জলাশয় থেকে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় বাড়ির গাছ গাছালিতে। ভোর হলেই পুনরায় পাখিরা চলে যায় খাবারের সন্ধানে হাওরের বিভিন্ন বিল বাদাড়ে। তবে শুধু শীত মৌসুমে নয়। হাল্লা গ্রামের এই বাড়িটি বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত।

গত রবিবার (১০ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, তখন বিকেল ৫টা। সারা দিনের খাবার শেষে হাকালুকি হাওরের কইয়ারকোনা বিলে একটু বিশ্রাম নিলো হাজার হাজার নানাজাতের পাখি। তবে বকের সংখ্যাই বেশি হবে। এরপর সবাই আকাশের চারদিকে একাধিকবার ঘুরতে ঘুরতে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ৬টা বাজতেই গিয়ে বসলো মনোহর আলীর বাড়ির হিজল, করস ও জারুল বাগানে। পাখির ডানার শব্দে মনে হলো ওপর দিয়ে বিমান গেলো বুঝি। এখানে নিশিবক, সাদাবক, লালবক, হাঁস, পানকৌড়ি, জলকুড়া, সরালি, কুদালীসহ নানা প্রজাতির পাখি আশ্রয় নিয়েছে। পাখি ওড়ার দৃশ্য এলাকার মানুষ ও পর্যটকদের মুগ্ধ করছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পাখি দেখতে আসছেন পাখি বাড়িতে। বিশেষ করে ছুটির দিনে পাখিপ্রেমীরা ভিড় করেন বেশি।

স্থানীয়রা জানালেন, মনোহর আলীর বাড়ি ছাড়া অন্য কোনো বাড়ির গাছে একটিও পাখি বসে না।

পাখি বাড়িতে কথা হয় পাখিপ্রেমী কয়েকজনের সঙ্গে। পরিবার নিয়ে পাখি দেখতে আসা পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এ বাড়িতে অতিথি পাখির মেলার কথা জানতে পারি। বিষয়টি আমার পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা সবাই পাখি দেখার জন্য আগ্রহ দেখায়। তাই সপরিবারে ছুটির আনন্দ পাখিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ছুটে এসেছি পাখি বাড়িতে। নানান প্রজাতির পাখিদের কলতান শুনে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে।’

কথা হয় পাশ্ববর্তী কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা আমির উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘এ বাড়িতে এত সুন্দর পাখি রয়েছে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না। এই পাখিগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

মনোহর আলী মাস্টারের ছেলে আক্তার আহমদ শিপু জানান, প্রায় এক একর আয়তনের তাদের এ পতিত বাড়িতে বিগত প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে অতিথি পাখির বসবাস। পাখির বিষ্ঠার কারণে আমাদের ঘরের টিন নষ্ট ও দুর্গন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতে প্রতি বছর আমাদের আর্থিক অনেক ক্ষতি হয়। তার পরও আপন মমতায় নিজেদের ক্ষতির কথা চিন্তা না করে পাখিদের সাথে বসবাস করছি।

তিনি আরো বলেন, পাখির অভয়াশ্রমে দুর্গন্ধবিহীন পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি এনজিও এবং সরকারি সহযোগীতা পেলে আমরা এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারি। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে তাঁর আবেদন। পাখি বাড়িটি পরিদর্শন করে সরকারিভাবে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে এলাকাটিকে ঘোষণা করে তা সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

হাকালুকি হাওরে নিয়োজিত সিএনআরএস’র সাইড অফিসার তৌহিদুর রহমান জানান, পাখি ও মাছের অভয়াশ্রমে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া আছে।পাহারাদারদের কার্যক্রমকে প্রতিনিয়িত তাদারিকি করা হচ্ছে। এছাড়া অভয়াশ্রমের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজেট দেওয়া আছে। ভিসিজি দলের সদস্যরা পাখি বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ রেখে কাজ করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত