কাজী মাহবুব হাসান

৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৫:৪২

জিকা ভাইরাস

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি ভাইরাস। যদিও ভাইরাসটি নিয়ে বাংলাদেশে আমরা কতটুকু শঙ্কিত হবো, সেই বিষয়ে কিছু বলার মত পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি ঠিকই, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সব সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেই সতর্ক করে দিয়েছে ভাইরাসটি সম্বন্ধে সচেতন হবার জন্য।এই লেখাটি সেই ভাইরাসটিকে নিয়ে।

ভাইরাসটির নাম জিকা ভাইরাস ( Zika Virus - ZIKV)। ভাইরাসটি সাধারণত অপেক্ষাকৃতভাবে মৃদু সপ্তাহব্যাপী একটি অসুস্থতার কারণ, যা নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়, এছাড়া এর কারণে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মৃত্যুর হারও খুবই কম। কিন্তু কিছু কারণে জিকা ভাইরাসের এই বিস্তৃতিটাকে খারাপ সংবাদ হিসাবে গণ্য করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, রোগতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত কিছু কারণে সম্প্রতি কয়েক বছরের মধ্যেই এটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে ও পড়ছে।দ্বিতীয়ত, অন্যান্য কিছু সংক্রামক ব্যাধি, যেমন ডেঙ্গের (ডেঙ্গু)  সাথে এর সদৃশতার কারণে সহজে এটি শনাক্ত করাও বেশ মুশকিল, এবং তৃতীয়ত, খুব সম্ভবত আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এটি নবজাতকের একটি ভয়ঙ্কর জন্মগত ক্রটির সাথে জড়িত। এছাড়াও,সমগোত্রীয় ভাইরাসগুলোর মতই জিকা ভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী গিয়ান-বারেসিনড্রোম(Guillain-Barré syndrome) সিনড্রোম সহ কিছু স্নায়বিক, অটোইমিউন অসুস্থতার সাথেও জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বছরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, সিডিসি বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করার ব্যাপারে ট্রাভেল অ্যালার্ট ঘোষণা করে জিকা ভাইরাসের জন্য।সতর্ক করার এই ঘোষণাটি ব্যতিক্রম কারণ প্রথম বারের মত সন্তান ধারণ করতে পারে এমন বয়সের সকল নারীদের ( গর্ভবতী হোক কিংবা না হোক) দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কারণ আক্রান্ত মানুষ থেকে অন্য মানুষর শরীরে মশার মাধ্যমে ছড়ানো এই ভাইরাসটিকে সন্দেহ করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট জন্মগত ত্রুটি ও নবজাতকের মৃত্যুর কারণ হিসাবে।

সম্প্রতি আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাজিলে, প্রায় দেড় মিলিয়ন মানুষ সংক্রমিত হয়েছে সে দেশে ভাইরাসটির আবির্ভাবের পর, তবে ভাইরাসটি দক্ষিণ, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আরো ১৯ টি দেশেও পাওয়া গেছে, এবং এই তালিকাটাও বাড়ছে। আফ্রিকা, এশিয়া আর ওশানিয়ার প্রায় ১৪টি দেশে বেশ আগেই মশা,প্রাইমেট এবং মানুষের মধ্যে ভাইরাসটির সন্ধান মিলেছিল বেশ আগেই। তবে ২০১৩র আগে পশ্চিম গোলার্ধে ভাইরাসটি কোনো সমস্যা করেনি, ২০১৪ সালে ইস্টার দ্বীপপুঞ্জে প্রথম মহামারীর মাধ্যমে এটি আবির্ভূত হয়।

 
 জিকা ভাইরাস সক্রিয় এলাকা (সিডিসি,যুক্তরাষ্ট্র)
জিকা ভাইরাস ফ্লাভিভিরিডি পরিবারের একটি আরএনএ(ssRNA) ভাইরাস, এই পরিবারের আরো কিছু পরিচিত জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাস আছে, যেমন ডেঙ্গে (ডেঙ্গু) , ওয়েস্ট নাইল, জাপানিজ এনসেফালাইটিস এবং ইয়োলো ফিভার। তবে জিনগত পর্যায়ে এদের সবচেয়ে নিকটবর্তী আত্মীয় আফ্রিকার আরেকটি ভাইরাস, স্পণ্ডয়েনি ভাইরাস। জিকা ভাইরাসের জিনতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বলছে এর দুটি প্রকার আছে এর: একটি আফ্রিকার, অপরটি এশিয়ার। সন্দেহ করা হচ্ছে আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। একমাত্র মানুষ ও মানুষ নয় এমন প্রাইমেট প্রজাতিরা ভাইরাসটি রিসারভয়ার ( যেখানে ভাইরাসটি বাস ও বংশবৃদ্ধি করে) ।

জিকা ভাইরাসের ক্ষমতা আছে বেশ কিছু Aedes জিনাসের মশা প্রজাতিকে সংক্রমণ করার, Aedes জিনাসের এর মশারা ডেঙ্গে ও চিকুনগানিয়া ভাইরাসও বিস্তার করার সাথে জড়িত। মশার কামড় থেকেই এটি একটি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে অন্য একটি পোষকের শরীরে প্রবেশ করে। আপাতত প্রাপ্ত সব তথ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে জিকা ভাইরাসটি মূলত ছড়ায় মশার মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড়ায়, শুষে নেয় রক্তের মাধ্যমে ভাইরাসটি মশার শরীরে প্রবেশ করে এবং যখন মশাটি আবার অন্য একটি সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে ভাইরাসটি নতুন পোষকের শরীরে প্রবেশ করার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।তবে মশাই একমাত্র উপায় না ভাইরাসটির সংক্রমণের  শিকার হবার জন্য, আক্রান্ত মা থেকে শিশু আক্রান্ত হবার ব্যাপারে জোরালো কিছু পর্যবেক্ষণ মূলক গবেষণা এখন আমাদের হাতে আছে, তবে বর্তমানে যেটি চিন্তার বিষয় সেটি হচ্ছে গর্ভবতী মা থেকে শিশুদের সংক্রমণ, যা দক্ষিণ আমেরিকায় সম্প্রতি আমরা দেখছি, এছাড়া যৌন মিলনের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায় এমন প্রমাণও মিলেছে।
 
 Aedes aegypti মশা
খুব সাম্প্রতিক বছরগুলোর আগে জিকা ভাইরাস নিয়ে চিন্তার তেমন কিছুই ছিলনা, কারণ ভাইরাস আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশই কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ করেনা। যারা করে তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ উপসর্গগুলো সাধারণত মৃদু।হালকা জ্বর, শরীরের সামনে ও পিছনে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ, গায়ে, মাংসে ও অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, এই সব লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় মশার কামড়ে ভাইরাসটি দিয়ে আক্রান্ত হবার পর ৩ থেকে ১২ দিনের মধ্যে। সাধারণ এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী আরোগ্য লাভ করে।হাসপাতালে ভর্তি হবার মত গুরুতর পরিস্থিতি ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে কদাচিৎ, কিন্তু বর্তমান কিছু ঘটনা বিজ্ঞানীদের ভাবাতে বাধ্য করেছে, তারা কি জিকা ভাইরাসের ঝুঁকিটি সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পেরেছেন কিনা।কারণ এখন বেশ কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে ভাইরাসটি জন্মগত ক্রটির জন্য দায়ী হতে পারে।

গত বছর ব্রাজিলে জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা প্রমাণ পেয়েছেন জন্মগত ত্রুটি মাইক্রোসেফালির ( মস্তিষ্কের আকার ছোট হওয়া) সাথে ভাইরাসটির সম্পর্ক। ধারণা করা হয় ব্রাজিলে ভাইরাসটি প্রবেশ করেছে ২০১৪ সাথে বিশ্বকাপ ফুলবল দেখতে আসা দর্শকদের সাথে- বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় মিলিয়ন স্পর্শ করেছে। এই একই সময় ব্রাজিলে মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত নবজাতকের সংখ্যাও বেড়েছে অবিশ্বাস্য হারে। এই জন্মগত ক্রুটির ফলে নবজাতকের মাথার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হয় এবং সেই সাথে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক বিকাশও থাকে অসমাপ্ত। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মাইক্রোসেফালি সহ। নবজাতককে শনাক্ত করেছে ইতিমধ্যেই, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ বেশী। পরবর্তীতে কিছু রোগতাত্ত্বিক সূত্র বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে দ্রুত বৃদ্ধির এই ঘটনাটি কাকতলীয় নয়, এবং জিকা ভাইরাসই দায়ী এই মাইক্রোসেফালি জন্মক্রটির বিস্ময়কর বৃদ্ধির জন্য। খুব সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলে পেরনামবুকোতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে মাইক্রোসেফালীর সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণে। এ এলাকায় সাধারণত বছরে ১০ টি মাইক্রোসেফালীর ঘটনা ঘটে, কিন্তু নভেম্বর অবধি এই সংখ্যা  ১৪১, তবে ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ১৭৬১ ( ২০১৪ থেকে ২০১৫ )।

 মাইক্রোসেফালি সহ একটি শিশু ( ব্রাজিল), যার মা গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছিল।
 
সাধারণ শিশুর সাথে মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশুর এক্স রে ছবি (কলম্বিয়া, শিশুটির মা গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল ((latinamericascience.org)
কিন্তু আসলেই কি জিকা ভাইরাস মাইক্রোসেফালির কারণ? ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসটিকে গর্ভবতী মায়েদের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের ( গর্ভের বিকাশমান ভ্রূণ যে থলেতে বাড়তে থাকে, সেই থলের মধ্যে তরলটি অ্যামনিওনিক ফ্লুয়িড) মধ্য পেয়েছেন। যা অবশ্য প্রমাণ করে ভাইরাসটি মা ও শিশুর সঞ্চালনকে পৃথক করে রাখা প্লাসেন্টাল ব্যারিয়ার অতিক্রম করতে পারে। সিডিসি বিজ্ঞানীরা জন্মের ২৪ ঘণ্টা পর দুই জন মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত নবজাতকের ব্রেইন টিস্যুতেও ভাইরাসটির সন্ধান  পেয়েছেন। এছাড়া জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মায়েদের মধ্যে গর্ভপাতের ঘটনাও দেখা গেছে। এছাড়া বিজ্ঞানীরা যখন ফরাসী পলিনেশিয়ার দ্বীপগুলোর মহামারী পুনবিশ্লেষণ করেছেন, তারা দেখেছেন যে জিকা ভাইরাস সেখানে আসার পর জন্মগত ক্রুটির পরিমাণ বেড়ে গেছে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশী। এবছরই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মাইক্রোসেফালি সহ শিশু জন্ম হয়েছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যার শরীরে জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে, আক্রান্ত শিশুটির মা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল গত বছর ব্রাজিলে বসবাস করার সময়।যদিও জিকা ভাইরাসের সাথে জন্মগত ক্রটির সংযোগ নিয়ে যা ভাবা হচ্ছে  সেই বিষয়টি কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি এখনও। তবে প্রাপ্ত সব প্রমাণগুলো আপাতত সেদিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এছাড়াও পৃথকভাবে আরেকটি সমস্যা, জিকা ভাইরাসের সাথে গিয়ান-বারেসিনড্রোমেরও  সংযোগ আছে,  স্নায়ুরজ্জুর আচ্ছাদন ও সহযোগী কাঠামো উপাদানগুলোকে যখন  নিজের রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রের উপাদানগুলোই আক্রমণ করে, যা প্যরালাইসিসের কারণ হয়। বেশ কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সাথে গিয়ান-বারেসিনড্রোমের সংশ্লিষ্টতা আছে।
 
 জিকা ভাইরাস, ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন মাইক্রোগ্রাফ, সিডিসি, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৪৭ সালে উগান্ডার জিকা জঙ্গলে এক রিসাস বানরের শরীরে ভাইরাসটির প্রথম সন্ধান মিলেছিল। Rhesus 766 বানরটি ছিল রকফেলার ফাউন্ডেশনের বন্য ইয়োলো ফিভার ভাইরাস গবেষণায় ব্যবহৃত একটি বানর। দুই দিনের জ্বরে আক্রান্ত বানরটির সিরাম যখন মাউসের মস্তিষ্কে এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়, দশ দিনের মাথায় মাউসের মস্তিষ্কের টিস্যু থেকে সন্ধান পাওয়া যায় এই ভাইরাসটির।১৯৪৮ সালে জিকা ভাইরাস পাওয়া যায় Aedes africanus মশায়, কৃত্রিমভাবে আক্রান্ত মাউস আর বানরের রক্ত খাইয়ে ১৯৫৬ সালে প্রমাণিত হয় জিকা ভাইরাস Ae. aegypti মশা দ্বারা বিস্তার লাভ করতে পারে। মানুষের শরীরে ভাইরাসটি প্রথম পাওয়া গিয়েছিল উগান্ডা ও তানজানিয়ায় ১৯৫২ ও পরে নাইজেরিয়ায় ১৯৫৪ সালে।

ছোট খাটো থেকে বড় ধরনের বেশ কিছু মহামারি করার ইতিহাস আমরা পাই, যেমন ১৯৭৭ সালে ইন্দোনেশিয়ায়, ২০০৭ এ মাইক্রোনেশিয়ার ইয়াপ দ্বীপে, ফরাসী পলিনেশিয়া ও নিউ ক্যালিডোনিয়ায় ২০১৩ ও ২০১৪ সালে, ইস্টার দ্বীপপুঞ্জ ২০১৪ এর মহামারীটি প্রথম আমেরিকায় ভাইরাসটির আগমনের জানান দেয়। ২০১৫ সালে মে মাস নাগাদ এটি ব্রাজিল এবং কলম্বিয়ায় ও পরে সুরিনামে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একই বছরে ভানুয়াতু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও নিউ ক্যালিডোনিয়ায় ছোট খাট কিছু মহামারীও ঘটিয়েছে জিকা ভাইরাসটি।
 
বিশ্বব্যাপী জিকা ভাইরাসের বিস্তার
জিকা ভাইরাস রোগ নির্ণয়  করা বেশ সমস্যা কারণ এটি ডেঙ্গে, চিকুনগানিয়ার ভাইরাসের মত একই ভেক্টর বা বাহক মশা, ভৌগলিক বিস্তার ও উপসর্গ ভাগ করে নেয়। সেকারণে ক্লিনিকাল কোনো লক্ষণ এবং রোগতাত্ত্বিক ভাবে ডায়াগনিসেসর প্রচেষ্টা তেমন নির্ভরযোগ্য নয়। তিনটি ভাইরাস জনিত অসুখেরই প্রায় একই লক্ষণ হতে পারে - জ্বর, ম্যাকুলোপ্যাপুলার র‍্যাশ বা গায়ে ফুসকুড়ি ওঠা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং প্রদাহ বা কনজাংটিভাইটিস, শরীরের অস্থি সন্ধি ও মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি। সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন গবেষণায় যেমন এদের একই ভৌগলিক এলাকায় সংক্রমণ করতে দেখা গেছে, তেমনি একই রোগীর শরীরেও এদের আমরা একসাথে সংক্রমণ করতে দেখেছি। সঙ্গত কারণে এটিকে এদের মধ্যে বিশেষভাবে ক্ষতির কারণ ডেঙ্গে থেকে থেকে আলাদা করা প্রয়োজন। (ছবি - ৭ সংক্ষিপ্ত আকারে জিকা ও ডেঙ্গে ভাইরাস জনিত সংক্রমণের মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করেছে)।

জিকা সংক্রমণ নিশ্চিত করার জন্য ল্যাবরেটরি টেস্ট করা দরকার, কিন্তু সেখানে বেশ সমস্যা আছে, রক্তের IgM অ্যান্টিবডিটি যদিও চিকুনগানিয়ার ( আরেকটি ফ্লাভিভাইরাস অর্থাৎ সমগোত্রীয়) সাথে তেমন সংশয় সৃষ্টি করে না, তবে ডেঙ্গের প্রতি এদের ক্রস-রিঅ্যাক্টিভিটি আছে, অর্থাৎ এই ডায়াগনোসিস দিয়ে নিশ্চিতভাবে ডেঙ্গে থেকে আলাদা করা যাবে না যে এই অ্যান্টিবডিটি জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নাকি ডেঙ্গের বিরুদ্ধে। লক্ষণ প্রকাশের ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ইউরিন বা প্রস্রাব অথবা মুখের লালায় RT-PCR এর মাধ্যমে ভাইরাসটি সরাসরি শনাক্ত করা যায়।লালায় ভাইরাসটি থাকে রোগের শুরুর দিকে, তবে ইউরিনে ভাইরাসটিকে পাওয়া যায় বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ( যেমন উপসর্গ হবার ১০ দিন পরেও)। যদি সেরোলজিকাল টেস্ট করতে হয় তাহলে দুটি নমুনা নিতে হবে ৬ দিনের পর থেকে কোন এক দিন এবং ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর। ভুলভাবে পজিটিভ রেজাল্ট হবার সম্ভাবনা থাকে সেই রোগীদের ক্ষেত্রে যাদের শরীরে এই ভাইরাসটি সংক্রমের আগেই অন্য ফ্লাভিভাইরাস - যেমন ডেঙ্গে সংক্রমণ করার যদি ইতিহাস থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আরেকটি বিশেষায়িত পরীক্ষা plaque reduction neutralization testing (PRNT) করা যেতে পারে অ্যান্টিবডিটি সঠিকভাবে শনাক্ত করার জন্য।মানুষের রক্তে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে অসুস্থতা শুরু হবার দিনেই, অসুস্থতা শুরু হবার ১১ দিনের মাথায় ভাইরাল নিউক্লিক অ্যাসিড সন্ধান মিলেছে রক্তে।
 
ডেঙ্গে ও জিকা ভাইরাসের মধ্যে কিছু পার্থক্য
বেশ কিছু রিপোর্ট দাবী করছে জিকা ভাইরাসের বিভিন্ন আকারের মহামারীর সাথেগিয়ান-বারে সিনড্রোম, অটোইমিউন ও কিছু স্নায়বিক সিনড্রোমের প্রকোপও বেড়ে গেছে, কিন্তু তথ্য নেই যে এদের মধ্যে কয়জন আসলে একই সাথে বা এর আগে ডেঙ্গে দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, যা এই ঘটনাগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।ফরাসী পলিনেশিয়ায় জিকা ভাইরাসের মহামারিতে সাধারণ পরিস্থিতি থেকে ২০ গুন বেশী বৃদ্ধি পেয়েছিল গিয়ান-বারে সিনড্রোমেরপরিমান। একই সাথে ফরাসী পলিনেশিয়া, জন্মগত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকলাঙ্গতার হারও বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ভাইরাসটি জেনোটাইপে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে, যা এর ক্ষতি করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, এছাড়াও পলিনেশিয়াবাসীরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশী; এছাড়া আগের ডেঙ্গে সংক্রমণ গিয়ান-বারেসিনড্রোম আক্রান্ত হবার হার বাড়িয়ে দিয়েছে ধারাবাহিকভাবে ঘটা আরবোভাইরাস জনিত ইমিউন স্টিমুলেশন।

কিন্তু কিভাবে এটি অসুস্থতার সৃষ্টি করে ? ডেঙ্গে এবং জিকা ভাইরাসের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে  আক্রান্ত কোষের অটোফেজিক প্রতিক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়া তাদের নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য। অটোফেজী খুবই পরিচিত একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোষ তার অভ্যন্তরে দীর্ঘমেয়াদী প্রোটিন, ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গাণু ও সাইটোসলের কিছু অংশকে ভাঙ্গতে সাহায্য করে কোষের অভ্যন্তরে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য।অর্থাৎ কোষ তার নিজের মধ্যে বিদ্যমান অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটা ব্যবস্থা করে। কোষ এই প্রক্রিয়াটিকেই ব্যবহার করে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে, এবং সে কতটুকু সফল হবে তার নির্ভর করবে ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ মেকানিজমের ভূমিকার উপর। যেমন ভাইরাস ও এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলামের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া অটোফেজী উসকে দেয়, কিন্তু তারপরও ভাইরাসগুলো এই অটোফেজী পুরোপুরি শেষ হতে দেয়না, এখানেই এই ভাইরাসগুলো তাদের নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আদর্শ একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে নেয়।

অটোফেজীর সাথে সংশ্লিষ্টতা আরো একটি পথ উন্মুক্ত করে দেয় পরীক্ষা করার জন্য যে তারা কি আসলেই মাইক্রোসেফালীর জন্য দায়ী কিনা।মাইক্রোসেফালীর একটি কারণ সেন্ট্রোজোমদের অস্বাভাবিকতা, যদিও মাইটোসিসের জড়িত, এই অঙ্গাণুগুলো কোষের অন্যান্য প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত, যেমন বিভিন্ন ভেসিকলের চলাচল, পোলারিটি ইত্যাদি। মাইক্রোসেফালির একটি কারণ সেন্ট্রোজোমদের এর সংখ্যা বৃদ্ধি হবার মত কোনো পরিস্থিতি। বেশ কিছু প্রোটিন আছে যারা অটোফেজী প্রক্রিয়া কাজ করে আবার সেন্ট্রোজোমদের স্থায়িত্বের উপরও প্রভাব রাখে। একটি যেমন ultraviolent (UV) irradiation resistance-associated gene (UVRAG), অন্যটি  Beclin-1 অটোফেজীতে এরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিউরাল ব্রেইন বিকাশের প্রাসঙ্গিকতায় ইঁদুরদের মধ্যে গবেষণা দেখা গেছে centrosomes এর সংখ্যা বৃদ্ধি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটায়, অ্যাপোটসিস বা কোষের নির্দেশিত স্বেচ্ছা কোষ মৃত্যু, নিউরাল স্টেম সেল প্রজেনিটরদের সঠিক অবস্থানে না আসা, সময়ের আগেই নিউরনরা তাদের সঠিক রূপ না পাওয়া এবং প্রজেনিটর কোষদের সংখ্যা হ্রাস - সব মিলিয়ে ব্রেন ম্যাটারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, সেটাই মাইক্রোসেফালি।যদিও জিকা ভাইরাস যেভাবে অসুখ করে সেটি ইঙ্গিত করছে centrosomes এর অস্বাভাবিকতা বাড়ায়, কিন্তু বিষয়টি এখনও প্রমাণের অপেক্ষায়।ডেঙ্গের ক্ষেত্রে এটি প্রতিষ্ঠিত, মনে করা হয় জিকাও একইভাবে কাজ করে, অন্তত একটি গবেষণা সেটাই দাবী করছে। ১৯৫২ সালেই বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন যে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের প্রতি জিকা ভাইরাসের বিশেষ আকর্ষণ আছে, এরা ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার অতিক্রম করতে পারে। ১৯৭২ সালে আরেকটি গবেষণা দেখায় মস্তিষ্কের সব ধরণের কোষকে এরা আক্রমণ করতে পারে। যেখানে কোষের মধ্যে তারা ক্ষুদ্র ঝিল্লী ঘেরা জায়গা তৈরি করে, যা মূলত ভাইরাস ফ্যাক্টরি।

জিকা ভাইরাসের এই ক্রমবর্ধমান ভৌগলিক বিস্তৃতির অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। এই ঘটনা ঘটেছে আরো কিছু মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রেও। যেমন চিকুনগানিয়া, ২০১৩ সালের আগে পশ্চিম গোলার্ধে কখনো দেখা যায়নি। এখন এটি দক্ষিণ, মধ্য আমেরিকা হয়ে উত্তর আমেরিকার ফ্লোরিডা অবধি। একই ঘটনা ঘটেছে ডেঙ্গে ভাইরাসের ক্ষেত্রেও। জিকা, চিকুনগানিয়া এবং ডেঙ্গে, সবগুলো ভাইরাসই ছড়ায় Aedes এর বিশেষ কিছু প্রজাতির মাধ্যমে, যেমন:Aedes aegypti ও Aedes albopictus; এই মশাগুলোই ক্রমশও নতুন নতুন এলাকায় তাদের বিস্তৃতি বাড়িয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই ভেক্টর বা বাহক মশার বিস্তৃতির কমপক্ষে তিনটি কারণ আছে - মশার সংখ্যা বৃদ্ধি, ভাইরাস বহনকারী মশার সংখ্যা বৃদ্ধি, এবং এদের দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকার প্রবণতা যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। মশার বৃদ্ধি আর বেঁচে থাকার ব্যাপারটিকে তরান্বিত করতে তাপমাত্রার বৃদ্ধি, উষ্ণ আর আর্দ্র অঞ্চল মশাদের জন্য সহায়ক, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে জলবায়ু ও বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তন বিভিন্ন এলাকায় মশার বিস্তারকে সহায়তা করছে। এছাড়া মানুষে এখন ব্যাপকহারে ভ্রমণ করছে, ভ্রমণরত মানুষও রোগজীবাণু বহন করে আনছে নতুন এলাকায়। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে পরিবেশও মশাবাহিত রোগ দ্রুত বিস্তার হতে সাহায্য করে।

জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো ভ্যাক্সিন ( ভ্যাক্সিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে) আর সুনির্দিষ্ট ঔষধ নেই, মশার কামড় এড়িয়ে চলা তাই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ উপদেশ প্রকাশ করেছে সিডিসি। জিকা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় অ্যাডিস মশার সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা ও তাদের প্রজননের স্থানগুলো হ্রাস করা। শুহরে পরিবেশে দালানের চারপাশে প্রায়শই এডিস মশারা বাস করে। এরা দিনের বেলায় সক্রিয়, বিশেষ করে সন্ধ্যার আগে আর ভোরে।বহু ধরনের প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পরিবেশে এরা প্রজনন করে।যেখানে ভাইরাসের প্রকোপ বেশী সেখানে বসবাসকারীদের ইনসেক্ট রেপেলেন্ট ও মশার নেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে, এমন কি দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়, এছাড়া ঘরের জানালা দরজায় নেট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া হালকা রঙে লম্বা হাতা যুক্ত কাপড় পড়তে পরামর্শ দেয়া হয়।

জিকা ভাইরাস বহু প্রজাতির অ্যাডিসভাইরাসকে তার ভেক্টর বা বাহক হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।আধুনিক যুগে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবার কারণে ভাইরাসটি ছড়ানো সহজ করতে পারে।ডেঙ্গে ভাইরাসের উপস্থিতি  জিকা ভাইরাসের শনাক্ত করণ বেশ জটিল করে দিয়েছে । ভাইরাসটি নিয়ে বেশ কিছু রহস্য এখনও সমাধান হয়নি, জিকা ভাইরাস কি গিয়ান-বারে সিনড্রোম বা অন্য অটোইমিউন ডিজিজগুলোর জন্য দায়ী, নাকি ডেঙ্গে বা অন্যান্য আর্বোভাইরাসদের উপস্থিতি এই সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে। জিকা ভাইরাস কি আসলেই জন্মগতমাইক্রোসেফালি বা অন্যন্য জন্মগত সমস্যার কারণ? ২০১৫ র ২৯ নভেম্বর ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তিনটি মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসাবে জিকা ভাইরাসকে দায়ী করেন।

রহস্য যাই থাকুক না কেন, কেউই আর জিকা ভাইরাসকে সাধারণ কোনো অসুখের কারণ হিসাবে ভাবতে পারছেন না।

তথ্যসূত্র:
(১) http://www.who.int/mediacentre/factsheets/zika/en/
(২) http://www.cdc.gov/zika/index.html
(৩) Kelser EA, Meet dengue's cousin, Zika, Microbes and Infection (30 November 2015), (Editorial,article in press)
(৪) Hayes EB. Zika virus outside Africa. Emerg Infect Dis 2009;15: 1347-50.
(৫) L.A.M. Carneiro, L.H. Travassos, Autophagy and viral diseases transmitted by
Aedes aegypti and Aedes albopictus, Microbes and Infection (2016)
(৬) J.A. Tetro, Zika and microcephaly: causation, correlation, or coincidence?,
Microbes and Infection (2016),
(৭) S. Ioos, H.-P. Mallet, I. Leparc Goffart, V. Gauthier, T. Cardoso, M. Herida. reviewCurrent Zika virus epidemiology and recent epidemics Infections.  Médecine et maladies infectieuses 44 (2014) 302–307
(৮) Carlos Brito. Zika Virus: A New Chapter in the History of Medicine. Acta Med Port 2015 Nov-Dec;28(6):679-680
(৯) Faye O, Freire CCM, Iamarino A, Faye O, de Oliveira JVC, et al. (2014) Molecular Evolution of Zika Virus during Its Emergence in the 20th Century. PLoS Negl Trop Dis 8(1): e2636.
(১০) Zika virus, explained in 6 charts and maps. (http://www.vox.com/2016/1/20/10795562/zika-virus-cdc-mosquitoes-birth-defects)

লেখক পরিচিতি: কাজী মাহবুব হাসান (জন্ম ১৯৬৯)। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র  চিকিৎসা বিজ্ঞান, চিকিৎসা অনুজীববিজ্ঞান (ভাইরোলজী) রোগতত্ত্ব এবং জনস্বাস্হ্যে। ইনফ্লুয়েন্জা রোগতত্ত্ব নিয়ে টরোন্টো ভিত্তিকএকটি গ্রুপে কর্মরত।অনুবাদক, আগ্রহের ক্ষেত্র বিজ্ঞান ও শিল্পকলার ইতিহাস, এবং সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে এই দুটি ক্ষেত্রের অবদান ও মিথস্ক্রিয়া। তিনি লেখালেখি করেন ব্যক্তিগত ব্লগ জীবনের বিজ্ঞানে (www.kmhb.wordpress.com)।

প্রকাশিত বই : রিচার্ড ডকিন্স এর দি গড ডিল্যুশন (অনার্য,২০১৫) এবং জন বার্জারের ওয়েজ অব সিইং (সহঅনুবাদক – অনার্য,২০১৫)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত